খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাঙ্গামাটির সাজেকের উদয়পুর সড়কে ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
  চাঁদপুরের হবিগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে মা ও শিশুর মৃত্যু
  নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সম্পাদককে দল থেকে অব্যাহতি

বাঁধ পরিদর্শনে এসে জনরোষে এমপি (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বেচ্ছাশ্রমে কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছিলেন সহস্রাধিক মানুষ। মঙ্গলবার (০১ জুন) বেলা ১১ টার দিকে নদীতে ট্রলারযোগে বাঁধ বাধার কাজ পরিদর্শনের জন্য এগিয়ে আসছিলেন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু। কিছুটা এগিয়ে আসতেই হঠাৎ করে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা মানুষ মুহুরমুহু কাঁদা-মাটি ছুড়তে থাকেন। জনরোষে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হন এমপির ট্রলার। পরে অবশ্য ফিরে আসেন।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২৬ মে ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দশহালিয়া গ্রামে বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে সাগরের লোনাপানিতে। এখনও ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার পানি আসা-যাওয়া করছে গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে। গত তিনদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছেন এলাকার মানুষ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংসদ একটি ট্রলারে করে ওই ভাঙা বাঁধের স্থানে যান। যখনই তাঁর ট্রলারটি ঘাটে ভিড়তে যায়, তখনই কাঁদা ছুড়তে শুরু করেন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা মানুষগুলো। বারবার মাইকে ঘোষণা করেও তাঁদের নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় ১০ মিনিট বৃষ্টির মতো কাঁদা ছুড়ে মারার একপর্যায়ে ট্রলারটি পিছু হটে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর কাজ করতে থাকা মানুষকে শান্ত করা হলে আবার এমপি সেই ভাঙা বাঁধের কাছে যান। এ সময় সাংসদ মাইকে স্থায়ী বাঁধ না করতে পারায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধ মেরামতের কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু সেটিও পছন্দ হয়নি কাজ করতে থাকা সাধারণ মানুষের। এমপি কাজে নামার পর অধিকাংশ মানুষ কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান দাবি করেছেন, তাঁকে বহনকারী ট্রলারে কাঁদা ছুড়ে মারা হয়নি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় মানুষ চান টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর ভাঙনে তাঁরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভাঙন এলাকায় কাজ করছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে গেলে তাঁকে দেখে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের ওই দাবি যৌক্তিক। বারবার বাঁধ ভাঙে আর বারবার স্বেচ্ছাশ্রমে তাঁদের কাজ করতে হয়। এ কারণে সাংসদের ওপর তাঁদের ক্ষোভও বেশি। পরে ওই এলাকায় নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধের কাজ করা হয়েছে।

 

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে যাওয়া মহারাজপুর ইউনিয়নের দেওরা গ্রামের বাবুল নামের সাবেক মেম্বর বলেন, এমপি আসায় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে এমপি বক্তব্য দেন এবং সকলের সাথে কাজ শুরু করেন। এমসয় সাধারণ জনগণ কাজ ছেড়ে চলে আসে। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় সময় নষ্ট না হলে আজ বাঁধ বাধার কাজ শেষ করা সম্ভব হতো।

ট্রলারে কাঁদা ছোড়ার দৃশ্য ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বাঁধের কাছে ট্রলার ভিড়ছিল। এমন সময় সাংসদের ট্রলারকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো কাঁদা ছোড়া হচ্ছে। টিকতে না পেরে পিছু হটছে ট্রলার। মাইকে উত্তেজিত মানুষকে শান্ত হওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন একজন। সাংসদের ট্রলার ফিরে যেতে দেখে হাততালি দেওয়ার শব্দও শোনা যায় ভিডিওতে।

এদিকে ভাঙা বাঁধের কাছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করছিলেন কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, মহারাজপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম আবদুল্লাহ আল মামুন, বর্তমান নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাহমুদসহ আরও অনেকেই।

কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা বলেন, এমপি ট্রলার থেকে নামবে সেই সময় কিছু মানুষ পরিকল্পিতভাবে ট্রলারে কাঁদা ছুড়ে মারে। পরে তিনি নেমে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন।

তিনি বলেন, অনাকাঙ্খিত এই ঘটনা এবং জোয়ার-ভাটার কারণে আজও বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আগামীকাল ফের বাঁধ নির্মাণে কাজ করা হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজ করছিলেন। এমন সময় ট্রলারে এমপি এসেছেন শুনেই সাধারণ মানুষ একজায়গায় হয়ে নদীর ধারে ছুটে যান। এসময় তারা উত্তেজিত হয়ে ট্রলারে কাঁদা ছুড়ে মারতে থাকেন। এতে এমপির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাঁদা লাগে। এছাড়া ট্রলারে থাকা অন্যদের গায়েও কাঁদা লাগে। চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি। ট্রলার পিছু হটে। এরপর আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জনগনকে শান্ত করেন। মানুষ একটু শান্ত হলে এমপি আবার বাঁধের কাছে এসে সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিয়ে কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করেন। তবে এরপর বাঁধের কাজ আর হয়নি। প্রায় দেড় ঘন্টা কাজ বন্ধ থাকার কারণে আজ বাঁধ পুরোপুরি মেরামত করা যায়নি। তবে ওই ঘটনা না ঘটলে বাঁধ পুরোপুরি মেরামত হয়ে যেত। আগামীকাল আবারও কাজ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, কয়রার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম সেটি মানুষ এমপিকে দেখালো। এমপি তখন নদীতে। উল্লেখযোগ্যভাবে মাটি ছুড়েছে তেমনটা নয়। মানুষের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। পরে এমপি বক্তব্য দেন এবং বাঁধ মেরামতে কাজে যোগ দেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!