খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
  সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন মারা গেছেন
  নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত
  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

প্রিয় নবীজির সাথে এক টুকরো স্মৃতি

মুফতি সাআদ আহমাদ

প্রিয় মানুষের সাথে প্রিয় মূহুর্তগুলো স্মরণীয় হয়ে থাকে সারা জীবন। সে না থাকার সময়ে ওই স্মৃতিগুলিই হয় তার সান্ত্বনা। কল্পনার ক্যানভাসে ফ্রেম বন্দি হয়ে আগামীর জন্য। একাকী সময়ে মনস্পটে ভেসে বেড়ায়, আর অনুভূত হয় তাকে হারানোর যন্ত্রণা।

নবীজি সা. ছিলেন সাহবীদের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ। নিজের মা-বাবার চেয়ে বেশী। এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও বেশী। নবীজি ছিলেন তাদের চোখের মনি। তপ্ত হৃদয়ের শীতলতা। অস্থির চিত্তের প্রশান্তি। ক্ষুধা-পিপাসার স্বস্তি।

নবীজির সাথে অসংখ্য টুকরো স্মৃতির কথা সাহবীরা বর্ণনা করেছেন। মদীনার মরু পথে একসাথে পথচলা। মসজিদের প্রান্তরে গোল হয়ে বসে কথা বলা। জিহাদের ময়দানে কাঁধে কাঁধ মিলেয়ে লড়াই করা। আরো কত স্মৃতি। হাদীসের গ্রন্থগুলি তাদের অজস্র স্মৃতিরই অনুলিপি।

তেমনি একটি মজার ঘটনা স্মৃতিচারণ করেছেন প্রখ্যাত সাহবী হজরত আনাস বিন মালিক রা.। এটি তার ছোট বেলার একটি স্মরণীয় মূহুর্তের বর্ণনা। প্রিয় নবীজি সা. এর সাথে দর্জীবাড়ীতে দাওয়াত খাওয়ার ঘটনা। তাহলে ঘটনাটি তার নিজের মুখেই শোনা যাক।

হজরত আনাস বলেন, একদিন নবীজি সা. এর সাথে আমার রাস্তায় দেখা। দেখে মনে হলো নবীজি কোথাও যাচ্ছেন। বেশ পরিপাটি লাগছে তাঁকে। চেহারায় সেই চিরচেনা মুচকি হাসি।

আমি কিছু বলার আগেই তিনি আমার হাত ধরে ভোঁ হাটা শুরু করলেন। নবীজি হাটার সময় বেশ জোরেই ছোটেন। একবার ভাবলাম জিজ্ঞাসা করে দেখি। কোথায় যাচ্ছি আমরা? পরক্ষণেই আবার কি ভেবে চুপ করে হাটতে লাগলাম।

আমি খুব পরখ করে দেখছি নবীজিকে। নবীজি কিভাবে কদম উঠান। কিভাবে কদম জমিনে রাখেন। চলার সময় নবীজি তাঁর দৃষ্টি কোথায় রাখছেন ইত্যাদি। কারণ তাঁর প্রতিটি কাজই তো সুন্নাত। আর তার সুন্নাতের মাঝেই তো আমাদের হেদায়াত। ইহকালের সফলতা ও পরকালের জান্নাত।

খানিক বাদেই নবীজি সা. একটি ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ঘরটি বেশ জীর্ণশীর্ণ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা কোন হতদরিদ্রের নিবাস। আমি এক নজরে পুরো বাড়ি একবার দেখে নিলাম। নাহ, তেমন কাউকে নজরে পড়ছে না। তবে ঘরের আশপাশ দেখে মনে হচ্ছে এটা কোন দর্জীবাড়ি হবে। তবে কি নবীজি কাপড় সেলাইয়ের জন্য এ বাড়িতে আসলেন?

প্রিয় নবীজি সা. সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। নিঃসংকোচে মেহমান খানায় গিয়ে বসলেন। মনে হচ্ছে এই বাড়ির লোকদের সাথে তার পূর্ব পরিচিতি রয়েছে। যেন এ বাড়িতে তার কতো আসা-যাওয়া।

একজন লোক ঘরে প্রবেশ করলো। বেশভূষায় খুব সাধারণ মনে হচ্ছে তাকে। সালাম দিয়ে এক রাশ হাসি ছড়িয়ে দিলো প্রিয় নবীজি এবং তার সাথীর দিকে। প্রিয় নবীজিও তাকে রহমতের দোয়ায় সিক্ত করলেন। ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

আগন্তুকের দুহাতে দুটি খাবারের বরতন। ঘ্রাণে সারা ঘর মোহিত হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে খুব মজাদার খানা হবে। এরই মধ্যে সে বরতন দুটি নবীজির সামনে রাখলো। বাহ, খুবই সুস্বাদু খানা। গমের রুটি আর কদুর সাথে গোশতের ঝোল।

বাড়িওয়ালার আন্তরিকতায় আমি খুবই মুগ্ধ হলাম। কোন আড়ম্বরতা নেই। নেই কোন লৌকিকতা।

ও আচ্ছা! এতক্ষনে বুঝলাম নবীজি খানার দাওয়াতে এসেছেন এখানে! কিন্তু আমি তো বিনা দাওয়াতের মেহমান সেজে গেলাম। নিজের কাছে খুব সংকোচবোধ করছিলাম। একটু পরেই ভাবলাম, আরে! আমি কি সেধে এসেছি নাকি? আমি তো প্রিয় নবীজির হাত ধরে এসেছি। নবীজি সা. আমাকে নিয়ে এসেছেন।

নবীজি সা. বিসমিল্লাহ বলে আহার মুখে নিলেন। আমি খুব সতর্ক হয়ে নড়েচড়ে বসলাম। আজ নবীজির খাওয়া দেখবো। তিনি কিভাবে খাবার গ্রহণ করেন? কি খেতে পছন্দ করেন?

কদু আর গোশতের ঝোলে রুটি চুবিয়ে খুব মজা করেই খাচ্ছেন নবীজি। তবে কদুর টুকরোগুলো তার বেশি দৃষ্টি কেড়েছে। নেড়ে চেড়ে কদুর টুকরো খুঁজে বের করছেন। মনে হয় নবীজি সা. কদু খুব পছন্দ করেছেন।

হজরত আনাস বলেন, নবীজি সা. যে কদু এতোটা পছন্দ করেন তা আমার জানা ছিলো না। এবার আমি নিজেই পাত্রের বিভিন্ন দিক থেকে কদুর টুকরোগুলো গুছিয়ে নবীজির সামনে রাখতে লাগলাম। ঝোলের নিচে পড়ে থাকা টুকরোগুলো তার দিকে এগিয়ে দিলাম। তিনি আমার হাত থেকে সেগুলো নিয়ে মুখে পুরতে লাগলেন। নবীজি খুব খুশি হলেন। কদু গোশতের ঝোল আর গরম রুটি মন ভরে আহার করলেন।

খাওয়ার পর্ব প্রায় শেষ। নবীজি সা. হাত তুলে নিলেন। আমি নিজে কদু খুব বেশী পছন্দ করতাম না। কিন্তু নবীজির পছন্দের জিনিস তো আমারও পছন্দ করা চাই। মনে মনে বললাম, আজ থেকে কদু আমার পছন্দের খাবারের তালিকায় শীর্ষে থাকবে।

নবীজি সা. মেজবানের অনুমতি নিয়ে সেদিনের মত বিদায় নিলেন। নবীজির সাথে দর্জী বাড়ির দাওয়াত আমি খুব উপভোগ করলাম। প্রিয় মানুষের সাথে এই স্মৃতিটুকু নবীজি না থাকার দিনে আমার খুব মনে পড়তো। আমার হাত থেকে কদুর টুকরোগুলো নিয়ে নবীজি মুখে দিচ্ছেন। চোখ বুজলেই সে দৃশ্য যেন চোখে ভাসতো।

নবীজি সা. পরলোক গমনের বহুদিন পরেও লোকদের কাছে এই গল্প শোনাতাম। একাকী সময় নবীজির সাথে হাত ধরে কল্পনায় হারাতাম। হয়তো এটুকু হবে আমার আখেরাতের পাথেও। হাউজে কাউসার পাড়ে নবীজিকে বলবো, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি আপনার আনাস। কোন এক ভোজন সভায় আপনার সাথী ছিলাম। (সহীহ বুখারীর ৫৪৩৯ নং হাদীস অবলম্বনে)




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!