খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাঙ্গামাটির সাজেকের উদয়পুর সড়কে ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
  চাঁদপুরের হবিগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে মা ও শিশুর মৃত্যু
  নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সম্পাদককে দল থেকে অব্যাহতি

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমন ঝুঁকি কমেনি, কমেছে ভয় ও আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলেছে মার্কেট-শপিংমল, চলছে গণপরিবহন। স্থবিরতা কাটিয়ে গতি ফিরছে কর্মজীবনে। ব্যস্ততা বাড়ছে প্রতিদিনই। মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে জীবনযাত্রা। অথচ, বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারীতে সংক্রমন ও মৃত্যুর রেকর্ড গড়ছে এখনো। যদিও খুলনা অঞ্চলে এই মুহুর্তে সংক্রমন কিছুটা কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধে এখনি হাল ছেড়ে দেয়াটাই হবে আত্মঘাতী। সংক্রমন বৃদ্ধির ফলে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। ১০২দিন পর নিউজিল্যান্ডে করোনা সংক্রমন শুরু হয়েছে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে খুলনায় করোনাভাইরাস সংক্রমন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪১৪জন আর বিভাগে দুই হাজার ১২১জন। গেল সপ্তাহে সংগৃহিত নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের পরিমাণ একটু কম হলেও তা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের নিচে নয়। গত চারদিন খুলনাতে সংক্রমনের পরিমাণ ছিল ১০ আগস্ট ৩১ দশমিক ৭০, ১১ আগস্ট ২৭ দশমিক ৫, ১২ আগস্ট ২৭ দশমিক ৯২ ও গতকাল ১৩ আগস্ট ৩৮ শতাংশ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

গত সপ্তাহে দেশের করোনা পরিস্থিতির তথ্যে দেখা গেছে, নমুনা সংগ্রহ ও সংক্রমনের আনুপাতিক হার ২০ থেকে ৩০শতাংশের মধ্যে উঠানামা করেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের মোট করোনা আক্রান্ত রোগী দুই লাখ ৬৯ হাজার ১১৫ জন। দেশে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন তিন হাজার ৫৫৭ জন। সর্বশেষ, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্তের সংখ্যা কমেছে। তবে মৃত্যু বেড়েছে আগের দিনের চেয়েও। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৬১৭ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে মারা গেছেন ৪৪ জন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৭১ জন। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় মৃত্যুর হয়েছিল। সেই থেকে প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, বুধবার ২৪ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে দেশটিতে মারা গেছে ৯৪২জন। একদিনে সেখানে আরো ৬৬ হাজার ৯৯৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৩৭ জনে দাঁড়ায়। এ ছাড়া মোট প্রাণহানি ৪৭ হাজার ৩৩জন।অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত সাড়ে ৭ লাখ। গত বুধবারও ৬ হাজার ৬০০ মানুষ প্রাণ হারান। নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল পৌনে ৩ লাখ। ফলে বিশ্বে মোট আক্রান্ত ২ কোটি ৮ লাখের কাছাকাছি। বুধবারও (১২ আগস্ট) দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন প্রায় ১৪শ’ মানুষ। ফলে মোট প্রাণহানি এক লাখ ৬৯ হাজারের বেশি। আক্রান্ত ৫৩ লাখ ৬০ হাজার। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকে চীনে মহামারি আকার ধারণ করে এই ভাইরাস। পরে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি।
প্রথমে স্বাস্থ্যবিধির উপর বেশ কড়াকড়ি থাকলেও সম্প্রতি উদাসিনতা লক্ষণীয়। তাহলে কি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছি মানবজাতি। এমন প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসকরা যা বলছে, তা আশঙ্কাজনক।

খুলনা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঝুঁকি কমছে এমনটি চিন্তার কোন কারণ নেই। কবে নাগাদ, কিভাবে করোনামুক্ত হওয়া সম্ভব সেটা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। এখন সকলের করণীয় সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি নেমে সুরক্ষিত দুরত্ব বজায় রাখা। জীবন জীবিকার তাগিদে হয়তো বাইরে যেতেই হচ্ছে, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলাচল করতে হবে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ’র উপাধ্যক্ষ এবং করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক সমন্বয়কারী ডা. মেহেদী নেওয়াজ বললেন আরও কঠোর সতর্কতাবলম্বন করতে। তিনি বলেন, কোন উপসর্গ ছাড়াও প্রাণঘাতী করোনা মানব শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। কার্যতঃ এখনো পর্যন্ত তেমন কোন চিকিৎসা উদ্ভব হয়নি। করোনা থেকে বাঁচতে একমাত্র উপায় প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থাগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করা। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে- কেমন যেনো সকলের গাঁছাড়া ভাব। মাস্ক পরতে কি চরম উদাসিনতা এখন। এটা কোন শুভ লক্ষণ নয়। এতে কোভিড-১৯ আরও ভয়াবহ মহামারীর দিকে আমাদের ঠেলে দিতে পারে। তাই সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যতদুর সম্ভব সুরক্ষা দুরত্ব বজায় রাখতে আহবান জানিয়েছেন তিনি। মনে রাখতে হবে- ১০২দিন পর কিন্তু নিউজিল্যান্ডে ফের করোনা সংক্রমন শুরু হয়েছে।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!