খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চট্টগ্রামে পটিয়ায় বাস-সিএনজি অটো রিকশা সংঘর্ষে নিহত ২
  রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
  জাতীয় পতাকার নকশাকার, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

পদ্মা সেতু, ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল

গেজেট ডেস্ক 

পদ্মা সেতুর পিলারের নিচে ৬২ মিটার পর্যন্ত মাটি সরে যেতে পারে, এটা ধরে নকশা করা হয়েছে। পদ্মা সেতু রিখটার স্কেলে প্রায় আট মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়। সেতুটি চার হাজার ডেড ওয়েট টনেজ (ডিডব্লিউটি) ক্ষমতার জাহাজের ধাক্কা সামলাতে পারবে।

মাটি সরে যাওয়া, জাহাজের ধাক্কা ও আট মাত্রার ভূমিকম্প-তিনটি একসঙ্গে ঘটলেও সেতুটি টিকে যাবে, নকশায় এমনটাই ধরা হয়েছে। পদ্মা সেতুকে ভূমিকম্প সহনীয় করতে সর্বোচ্চ ক্ষমতার বিশেষ ধরনের বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে, যার নাম ‘ডাবল কারভেচার ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’। সবচেয়ে বড় বিয়ারিংটির ওজন ১৫ টন। মোট বিয়ারিং লেগেছে ৯৬ সেট। এগুলো পিলার এবং স্প্যানের মাঝখানে বসানো হয়েছে। এসব বিয়ারিং প্রায় এক লাখ টন ক্ষমতার কম্পন প্রতিরোধে সক্ষম।

কীভাবে ভূমিকম্প ঠেকাবে এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রকৌশলীরা। তাঁরা বলছেন, ভূমিকম্প মাটিতে কম্পন সৃষ্টি করে। এই কম্পন প্রথমে পিলারে যাবে। বিয়ারিংগুলো এর কম্পন ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। এ ছাড়া স্প্যানে ভূমিকম্পের সামান্য আঘাত গেলেও তা থেকে সেতুকে রক্ষা করার জন্য প্রতিটি জোড়ায় সংকোচন-সম্প্রসারণের বিয়ারিং বসানো হয়েছে।

বড় ভূমিকম্প থেকেও যে সেতুটি রক্ষা পাবে, সেই সেতুর উপরের অংশের ওজন আসলে কত? পদ্মা সেতুর ওপরের কাঠামোর প্রতিটি স্প্যানের ওজন ৩ হাজার ২০০ টন। পুরো সেতুতে এমন স্প্যান আছে ৪১টি। ফলে সব মিলিয়ে স্প্যানের ওজন দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টন। এর ওপর রেলের গার্ডার, দুই স্তরের কংক্রিটের স্ল্যাব বসানো হয়েছে। ফলে তা কয়েক লাখ টন ওজনের একটি স্থাপনা।

পদ্মা সেতুর ইঞ্জিনিয়ারিং নকশা করেছে আমেরিকার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এইসিওএম (অঊঈঙগ)। আমেরিকার বিখ্যাত জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পার্ল হার্বার মেমোরিয়াল ব্রিজ, আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিমানবন্দরসহ বিশ্বের অসংখ্যা মেগা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত এই প্রতিষ্ঠানটি। স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক রবিন শ্যাম। স্ট্রাকচার ম্যাগাজিনে এই সেতু বিশেষজ্ঞ লিখেছেন, পদ্মা সেতু এলাকায় ভূমিকম্পের হিসাব কষার সময় দুই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।

১. ব্যবহার্য (অপারেটিং) পর্যায়ের ভূমিকম্পের রেকর্ড। ধরে নেওয়া হয়, ১০০ বছরের মধ্যে এই ভূমিকম্প আবার হওয়ার আশঙ্কা আছে, ৬৫ শতাংশ আশঙ্কা সেই ভূমিকম্প আরও ভয়ংকর রূপ নিয়ে আঘাত করবে।

২. ঘটতে পারে, কিন্তু ঘটবেই সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না (কন্টিনেন্সি)। এ ধরনের ভূমিকম্পের ৪৭৫ বছরের রেকর্ড হিসেবে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১০০ বছরের সেতুর আয়ুষ্কালে ২০ শতাংশ আশঙ্কা আছে এত তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার।

পদ্মা কিন্তু ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। ১৮৯৭ সালে গ্রেট আসাম আর্থকোয়েক হয়েছিল, যার মাত্রা ছিল ৮–এর বেশি। ১৭৮৭ সালে ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ বদলে যায়।

সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু এলাকায় ভূমিকম্প হতে পারে। সে জন্যই ৪৭৫ বছরের রেকর্ড বিবেচনায় নিয়েই পদ্মা সেতু নকশা করা হয়েছে। ভূমিকম্পের আঘাত আসে অনুভূমিকভাবে। অনুভূমিক আঘাত সামলানোর জন্য পদ্মা সেতুতে ওপরের কাঠামো আর পিলারের মধ্যে বিয়ারিং বসানো হয়েছে। এই বিয়ারিং পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম। আর বিয়ারিংয়ের গুণগত মানে একফোঁটা ছাড় দেওয়া হয়নি। সাইসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং নামের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণে, যা ভূমিকম্পের আঘাত থেকে সেতুকে রক্ষা করবে ইনশাআল্লাহ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!