বাংলাদেশ সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর একটি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি বড় ধরণের তহবিল সংকটে পড়েছে বলে দাবি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড বলছে অর্থ সংকটের কারণে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ সময়মত শেষ করাটাই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তবে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলছেন, প্রকল্পে কোনো তহবিল সংকটের সুযোগ নেই। কারণ এটি চীন সরকারের ঋণের টাকায় করা হচ্ছে।
চীনের অর্থায়নে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড। প্রকল্পের লক্ষ্য পদ্মা সেতু যেদিন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে সেদিন থেকেই যেন সেতুর ওপর দিয়ে রেলও চলাচল করতে পারে।
কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দাবি করেছে যে তহবিল সংকটের কারণে প্রকল্পটি সময়মত শেষ করাই এখন বিপর্যয়ের মুখে। তাদের দাবি গত সাত মাসে তারা কোনো বিল পায়নি, যার পরিমাণ প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা।
কিন্তু প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এসব দাবি মোটেও সত্যি নয়। তিনি বলেন, আমাদের অতিরিক্ত কিছু অর্থ দরকার। তার প্রস্তাব দিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। গত এক বছরে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছি। কাজের গতিও ঠিক আছে বরং আরও বাড়িয়েছি আমরা।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড একটি জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাদের বক্তব্য পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে ২০১৮ সালে প্রস্তুতির জন্য তারা অগ্রিম অর্থ পেলেও এরপর প্রতিবারই অর্থ পেতে অনেক বেশি সময় লেগেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী কেনা ও সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছেনা। এর ফলে কমে এসেছে কাজের গতি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের রেল মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলছেন, গণমাধ্যমে বিবৃতি থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে তারা যোগাযোগ করেছে এবং প্রতিষ্ঠানটি নিজেই বিবৃতিটির প্রতিবাদ দেবে বলে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
কিন্তু প্রকল্পে তহবিল সংকটের যে প্রসঙ্গ এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব তথ্য এসেছে তার সাথে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কোনো সম্পর্কই নেই। তিনি বলেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলেছে এটি (বিবৃতি) ভুলবশত: এসেছে। কাজ করবে, টাকা নেবে – এটাই হলো সিস্টেম। আর এটার সিংহভাগ টাকা চীন সরকারের ঋণ। আমাদের কিছুটা আছে। চীন সরকার অর্থ দেবে। তাই অর্থ সংকটের সুযোগই নেই।”
বিবৃতিতে চায়না রেলওয়ে দাবি করেছে, গত বছর জুলাই থেকে চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় করা অর্থের যোগান নিয়ে ঢিমেতালে কাজ করছ বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং এই রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ কারণেই ২০১৮ সালের জুনের পর থেকে গত সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত তারা কোনো পেমেন্ট পায়নি। তবে রেল মন্ত্রী বলছেন, এসব কথার সাথে প্রকল্পের কোনো সম্পর্কই নেই।
বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দেয়ার আগে সরকারের সাথে কোনো আলোচনা করেছে কিনা, কিংবা করলে সরকার কি বলছে এসব বিষয় নিয়ে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের নির্ধারিত জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেও তারা বিবিসির সাথে কথা বলতে রাজী হয়নি।
ওদিকে রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে কাজের গতি কমলেও এখন পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তারা আশা করছেন বাকী কাজও নির্ধারিত ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হবে। যদিও এর মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত কাজ আগেই শেষ হবে এবং সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই রেলও চলতে পারবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।