খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
  সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন মারা গেছেন
  নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত
  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

পদ্মা সেতু ও পর্যটন সম্ভাবনা : আমাদের সক্ষমতা

ড. মো: ওয়াসিউল ইসলাম

কোন একটি পর্যটন গন্তব্যের চাহিদা সৃষ্টির জন্য সেই স্থানের আকর্ষণীয় বিষয়াবলী, পর্যটকদের কর্মকাণ্ড, যাতায়াত ব্যবস্থা, আবাসন ব্যবস্থা, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, সুযোগ-সুবিধাসমূহ, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সক্ষমতা, প্রশাসন, ইত্যাদি বিষয়াদি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকা, মধ্যমাঞ্চল, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ উন্নত হবে বলে সহজেই অনুমেয়।

এই সেতুর মাধ্যমে শুধু দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনের সম্ভাবনা উন্নত হবে তা নয় বরং পদ্মার দুইপারেরই পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা বেশ উন্নত হবে। এর মাধ্যমে পদ্মার উভয় পারের পর্যটন গন্তব্যসমূহে পর্যটকদের ব্যাপক চাহিদা ও চাপ সৃষ্টি হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই চাহিদা ও চাপ সহ্য করার মতো সক্ষমতা এসমস্ত পর্যটন গন্তব্যসমূহের যথাযথ কর্তৃপক্ষের ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের আছে কিনা।

আমাদের দেশের পর্যটন গন্তব্যগুলো প্রকৃতি নির্ভর ও মনুষ্য সৃষ্ট উভয় পরিবেশে অবস্থিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে প্রকৃতি নির্ভর গন্তব্যসমূহে মানুষের চাপ অনেকাংশে বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। যা মনুষ্য সৃষ্ট গন্তব্যসমূহের চেয়ে অনেকটা বেশি হবে বলে সহজেই ধারণা করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি সুন্দরবনে বেশি সংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করে তবে তার ঋণাত্মক প্রভাব সুন্দরবনের উপরে যতটা পড়বে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ এলাকায় বেশি সংখ্যক পর্যটক ভ্রমণের কারণে তার ঋণাত্মক প্রভাব ততটা পড়বে না।

প্রকৃতি নির্ভর গন্তব্যসমূহে এই প্রভাবসমূহ কমানোর জন্য আমাদের বেশ কিছুটা প্রস্তুতি ও সক্ষমতা প্রয়োজন যেটা আমরা এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি বলে প্রতীয়মান হয়, যা আমাদের কে চিন্তিত করে। সক্ষমতার বিষয় বিবেচনা করে এখানে কিছু বিষয়ে আলোচনা করা হলো।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্যটন জনবল

পর্যটকদের বাড়তি চাপ মোকাবেলা করার জন্য ট্যুর অপারেটরসহ ট্যুর গাইড, পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট বিভাগের জনবলের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ অতীব জরুরী। এর মাধ্যমে তারা তাদের সার্বিক মূল্যবোধ, শিক্ষা-দিক্ষা, নৈতিকতা, দেশপ্রেম, সংকল্প, নেতৃত্ব গুণাবলী, ও সর্বপরি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।

বিনিয়োগ

বিভিন্ন প্রকার পর্যটন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকার, দাতা সংস্থা, ব্যক্তি মালিকানাধীনসহ সব ধরনের বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

উন্নত ও বর্ধিত অবকাঠামো

পর্যটন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো যেমনঃ আবাসন, উন্নত রাস্তাঘাট, কালভার্ট, জেটি, বিশ্রামাগার, যাত্রী ছাউনী, প্রশিক্ষণাগার, ইত্যাদি প্রয়োজন।

তদারকি, মূল্যায়ন ও রিপোর্টিং

পদ্মা সেতুর কারণে সৃষ্ট বর্ধিত পর্যটন চাপ নিয়মিত তদারকি করা প্রয়োজন। তদারকি পরবর্তী মূল্যায়ন ও তার রিপোর্ট প্রণয়ন করা প্রয়োজন যাতে করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়নে এটি সহায়তা করতে পারে।

স্থানীয় জনসাধারণের কল্যাণ

সৃষ্ট বাড়তি পর্যটকদের চাপের কারণে স্থানীয় জনগণের ওপরে তার কি প্রভাব পরছে সেটি যথাযথ মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, বাজার সৃষ্টিকরণ, স্থানীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ, শান্তি-শৃঙ্খলা আনয়ন, সর্বোপরি স্থানীয় জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

পর্যটন নৈতিকতা

যথাযথভাবে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হচ্ছে কিনা তা আর্থ-সামাজিক অবদানের মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে হবে যাতে করে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সু-সম্পর্ক বিরাজমান থাকে। যা পরিবেশের যথাযথ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় জনগণের সংস্কৃতি রক্ষা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সমন্বিত পরিকল্পনা

পর্যটন এমন একটি শিল্প যেখানে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। যে কারণে এখানে বিভিন্ন ধরনের মন্ত্রণালয়ের অংশীদারিত্বের প্রয়োজন হয়। তাই পর্যটন শিল্পের বিকাশ, উন্নয়ন ও প্রচারের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা অতীব প্রয়োজন।

অংশীদারিত্ব

পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি, ব্যক্তি মালিকানাধীন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে অংশীদারিত্ব জরুরী, যার মাধ্যমে একটি গন্তব্যের পর্যটন শিল্প সহজেই উন্নতি করতে পারে।

বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয়

পর্যটন একটি বহু স্টেকহোল্ডার ভিত্তিক শিল্প। তাই এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় সাধন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার কাজ স্বল্প খরচে খুব সহজেই সম্পাদন করা সম্ভব।

রাজনৈতিক ইচ্ছা ও সংকল্প

একটি জাতির পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন অনেকটাই নির্ভর করে সেদেশের জাতীয় রাজনৈতিক ইচ্ছা ও সংকল্পের উপর। একইভাবে, কোন একটি পর্যটন গন্তব্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য ওই স্থানের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সুশাসন

পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সুশাসনের ভূমিকা অপরিসীম। সুশাসনের মাধ্যমেই একটি গন্তব্য স্থল হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয়, নিরাপদ ও প্রতিযোগীতামূলক। এর মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ যেমনি বিভিন্ন প্রকার উপকার পেয়ে থাকে ঠিক তেমনি পর্যটনের ঋণাত্মক প্রভাব থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারে। একটি পর্যটন গন্তব্যের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুশাসন একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয় যা প্রায়শঃই আমাদের দেশে অনুপস্থিত দেখা যায়। সুশাসনের অভাবেই পর্যটক ও সেই গন্তব্যের অনেক ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে।

গবেষণা

পর্যটন শুধুমাত্র ঘুরাঘুরি আর উপভোগের বিষয় নয়। এখানে বিভিন্ন রকমের গবেষণা প্রয়োজন যার মাধ্যমে কোন একটি গন্তব্যের ভালো-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা, উন্নয়নকে যথাযথভাবে চিহ্নিতকরণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

পর্যটকদের সন্তুষ্টি

কোন একটি পর্যটন গন্তব্যের উন্নয়নের জন্য আমরা যাই কিছু করি না কেন, দিন শেষে সেগুলো যদি পর্যটকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে না পারে তবে সেই উন্নয়নের কোন মূল্য নেই। তাই পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য পর্যটকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতঃ বিভিন্ন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন প্রকার পর্যটন সুযোগ সুবিধা যেমনঃ পর্যটকদের নিরাপত্তা, আরামদায়কতা, পর্যটন দ্রব্য ও সেবার মূল্য, আকর্ষণসমূহ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশ শিক্ষা, সচেতনতা ও নৈতিকতা

প্রকৃতি নির্ভর গন্তব্যের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ শিক্ষা, পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ নৈতিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এ সমস্ত গন্তব্যের সুষ্ঠু ও টেকসই উন্নয়নের জন্য এই বিষয়গুলো বিশেষভাবে নজর দিতে হবে যা ওই গন্তব্যের ঋনাত্মক প্রভাবসমূহ কে কমিয়ে ধনাত্মক প্রভাবসমূহকে বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

কোন একটি পর্যটন গন্তব্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেই স্থানের পর্যটন উন্নয়নের একটি পূর্ব শর্ত। পর্যটক যেন কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও বিনোদনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে। এ কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সদা সর্বদা সজাগ থাকা প্রয়োজন।

উপরোক্ত সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি কিছু পরামর্শ মেনে চললে এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের অনেক উন্নয়ন সম্ভবপর হতে পারে।

স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ড

কোন গন্তব্যের টেকসই উন্নয়নের জন্য ওই স্থানের স্বেচ্ছাসেবক দলের ভূমিকা অপরিসীম। এসমস্ত স্বেচ্ছাসেবীদের কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন পর্যটকদের সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে, অন্যদিকে তারা ওই গন্তব্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পর্যটন কর

একটি পর্যটন গন্তব্যের উন্নয়নের জন্য পর্যটন করের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের উন্নয়ন, গন্তব্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণকে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

পর্যটন নীতিমালা

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ও পদ্মা সেতুর কারণে সৃষ্ট পর্যটকদের চাহিদা ও চাপ নিরসনের জন্য বর্তমান পর্যটন নীতিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে কার্যকর করা।

টেকসই পর্যটন ব্যবস্থাপনা

সুষ্ঠু পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য টেকসই পর্যটন ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। প্রতিটি গন্তব্যের টেকসই পর্যটন ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন করা জরুরী।

প্রকৃতি নির্ভর পর্যটন গন্তব্য ও মনুষ্যসৃষ্ট গন্তব্যে জন্য পৃথক কৌশল প্রণয়ন করা

এই দুই ধরনের গন্তব্যের জন্য পৃথক পৃথক পর্যটন ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন করতে হবে ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন, তদারকি ও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে (১.২৩% হারে) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা অত্র অঞ্চলের দারিদ্রতা বিমোচনে (০.৮৪% হারে) কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এক্ষেত্রে, পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন খ্যাত সুন্দরবন, সাগরকন্যা কুয়াকাটাসহ অসংখ্য জানা-অজানা পর্যটন গন্তব্যসমূহ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে পর্যটনের ভূমিকা অপরিসীম। উপরের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি পর্যটকদের চাপ সামলাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের সক্ষমতা বৃদ্ধি করলে তা এই ভূমিকা পালনে সরাসরি অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়। এ সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে উন্নত পর্যটন ব্যবস্থা শুধুমাত্র দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে না বরং তা দেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে উন্নত করার জন্যও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।

(লেখক : অধ্যাপক, ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)

 

 

খুলনা গেজেট/ আ হ আ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!