খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর সদরঘাটের শ্যামবাজারঘাটে লঞ্চে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
  বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব
  নাটোরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে এক ট্রাক ড্রাইভার নিহত

পঞ্চগড়ে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে নিহত ১, বিজিবি মোতায়েন

গেজেট ডেস্ক

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে আরিফুর রহমান (২৮) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এ সময় ৯ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

জুমার নামাজ শেষে শুক্রবার বেলা দুইটার পর পঞ্চগড় শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে কতজনকে আটক করা হয়েছে সেটা এখনো জানা যায়নি।

নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপক ছিলেন। সংঘর্ষের সময় তিনি নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন বলে তাঁর স্বজনেরা দাবি করেছেন। পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধুরী আরিফুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্বজনেরা জানান, দুপুরে শহরের মসজিদপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের সময় আরিফুরের মাথায় গুলি লাগে। তাঁকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থান্তান্তর করা হয়। রংপুরে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

সংঘর্ষ চলাকালে শহরের উপকন্ঠে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অন্তত ২০-২৫টি বাড়িঘর ও জেলা শহরের চারটি দোকানের মালামাল বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শহরের করতোয়া সেতু-সংলগ্ন ট্রাফিক পুলিশের একটি কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় শহরের মূল প্রবেশপথ করতোয়া সেতুর মাঝখানে বিক্ষোভকারীরা বাঁশ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে যানবাহনসহ পথচারীদের চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পথচারীদের চলাচল শুরু হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ধাক্কামারা এলাকায় পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক বন্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা।

জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও জেলা শহরের ধাক্কামারা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল একদল জনতা। এ সময় আহম্মদনগর এলাকার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চলছিল বলে জানা গেছে। হামলার ঘটনায় শহরের বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাউয়ুম আলী, ভবেস চন্দ্র পাল, ট্রাফিক পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম, সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) মো. আব্দুল্লাহ, পুলিশ সদস্য আল-আমিন, ফরিদুর রহমান ও কামরুজ্জামানের নাম পাওয়া গেছে। আহত অন্যান্য ব্যক্তিরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে তাঁদের নাম জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদ থেকে বেরিয়ে লোকজন চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। পরে তাঁরা মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র‍্যাবের সদস্যরা যোগ দেন। কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়েন তাঁরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। পরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। তবে আজ দুপুরে মিছিল বের করার বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা অস্বীকার করেছেন। মসজিদ থেকে লোকজন নিজেরাই মিছিল বের করেছেন বলে তাঁরা দাবি করেছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, শুক্রবারের মিছিলের বিষয়ে তাঁদের কোনো নির্দেশনা ছিল না। কারা মিছিল বের করেছেন তা তাঁদের জানা নেই। সন্ধ্যার পর থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার মিডিয়া সেলে কর্মরত মাহমুদ আহমাদ বলেন, বিকেল থেকেই হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তাঁদের অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে হামলা করে অনেককে আহত করা হয়েছে।

রাত পৌনে আটটার দিকে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ করার জন্য তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁরা জলসা বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়া আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কেউ মারা যাওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!