খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৮ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
  সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন মারা গেছেন
  নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত
  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

নুপুর শর্মার সমর্থনে পোস্ট দেওয়ায় দর্জি খুন, রাজস্থানে উত্তেজনা-কারফিউ

আন্তর্জা‌তিক ডেস্ক

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য রাজস্থানের উদয়পুর জেলায় এক হিন্দু দর্জি খুন হওয়ার পর ওই এলাকায় ব্যাপক ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মার সমর্থনে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় মঙ্গলবার ওই দর্জিকে ধারাল ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন দুই মুসলিম যুবক। এই হত্যাকাণ্ডের পর সেখানে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনে স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে কারফিউ জারি এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে।

নিহত দর্জি ফেসবুকে নুপুর শর্মার সমর্থনে পোস্ট দেওয়ার পর থেকে হুমকি পেয়ে আসছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী। এ জন্য কয়েকদিন দোকান বন্ধ রাখার পর মঙ্গলবার সেটি পুনরায় খুলেছিলেন তিনি।

গোস মোহাম্মদ ও রিয়াজ আখতারি নামের দুই যুবক দর্জির দোকানে গ্রাহকের বেশে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর কানহাইয়া লাল নামের ওই দর্জি এক যুবকের শরীরের মাপ নেওয়ার সময় ধারাল ছুরি দিয়ে তার শিরশ্ছেদের চেষ্টা করা হয়। এ সময় অপর যুবক এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন।

পরে দোকান থেকে পালিয়ে গিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কানহাইয়াকে খুনের ভিডিও পোস্ট করে দায় স্বীকার করেন। এ সময় তাদের উল্লাস প্রকাশের পাশাপাশি পরবর্তী টার্গেট হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও হুমকি দিতে দেখা যায়। পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স বলছে, দর্জি কানহাইয়া লাল হত্যাকাণ্ডের পর উদয়পুরে প্রচণ্ড উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার ইতোমধ্যে উদয়পুরে ইন্টারনেট সেবা স্থগিত এবং বড় ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করে কারফিউ জারি করেছে।

রাজস্থান পুলিশের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা দেশটির গণমাধ্যমকে এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও প্রচার না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি একেবারে ভয়ঙ্কর।

ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদয়পুরের এই ঘটনা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে জাতীয়ভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তৈরি করতে পারে। দেশটির অন্য একটি রাজ্যের সাবেক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা শেষ পাল ভাইড রয়টার্সকে বলেছেন, উদয়পুরে যা ঘটেছে, তা গুরুতর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দিতে পারে।

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট টুইটারে বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই যুবককে উদয়পুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত নিশ্চিতের মাধ্যমে আদালতে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। আমি আবারও সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। বিবিসি বলছে, ভারতের শীর্ষ সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থা এই ঘটনার তদন্ত করবে।

কী ঘটেছিল?

উদয়পুরের বাসিন্দা কানহাইয়া লাল পেশায় দর্জি। উদয়পুরে তার একটি দোকান রয়েছে। গত মাসে মহানবী হযরত মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, তার সমর্থনে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন কানহাইয়া লাল।

নুপুর শর্মার মন্তব্যের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয় ভারত। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করে মহানবীকে (সা.) নিয়ে বিজেপি নেত্রীর আপত্তিকর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানায়। একই সঙ্গে এই ঘটনার জন্য ভারতকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পরে বিজেপি নুপুর শর্মাকে দল থেকে বরখাস্ত করে।

এই বিতর্কের জেরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সংখ্যালঘু মুসলিমরা বিক্ষোভ করেন। কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

সেই সংকটের রেশ কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার উদয়পুরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বিবিসি লিখেছে, গোস মোহাম্মদ ও রিয়াজ আখতারি নামের মুসলিম দুই যুবক কানহাইয়া লালের দোকানে যান। তাদের একজনের শরীরের মাপ নেওয়ার সময় কানহাইয়া আক্রান্ত হন। এ সময় অপর যুবক এই হত্যাকাণ্ড মোবাইলে ভিডিও করেন।

খুনের তিন সপ্তাহ আগে কানহাইয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল উদয়পুর পুলিশ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সেই সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, মুক্তি পাওয়ার পর তিনি হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন বলে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন।

পরে রাজ্য পুলিশ সেখানকার হিন্দু এবং মুসলিমদের ডেকে শান্তি বৈঠক করে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে। এবং পুলিশ সেই সময় জানায়, কারও বিরুদ্ধে আর ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার নেই।

মঙ্গলবারের এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের প্রখ্যাত রাজনীতিকরা। রাজস্থানের বিজেপি দলীয় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজ কানহাইয়া লাল হত্যাকাণ্ডের জন্য কংগ্রেস দলীয় সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উম্মাদনা এবং সহিংসতা তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।

বিজেপি নেতাদের অনেকে বলেছেন, কানহাইয়া হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাজধানী নয়াদিল্লিতে পদযাত্রা করবেন তারা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনায় তিনি ‘গভীরভাবে মর্মাহত’ এবং হামলাকারীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের মুসলিমদের প্রখ্যাত কিছু সংগঠনও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোড কানহাইয়া হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড ভারতীয় আইন এবং ইসলামি রীতিনীতির বিরোধী।

এক বিবৃতিতে মুসলিমদের এই সংগঠন বলেছে, কেউই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। এছাড়া কাউকে অপরাধী ঘোষণা দিয়ে তাকে হত্যা করাও অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!