খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  ৬ দিনের সফরে আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
উৎকোচ দিয়ে চাকরি পেতে ব্যর্থ!

নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা, পিবিআই’কে তদন্তের নির্দেশ

পাইকগাছা প্রতিনিধি

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ইউ,আর,এইচ,এস উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে একাধিক প্রার্থীর নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাসের নামে পাইকগাছা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কাম নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ পেতে নগদ ৭ লাখ টাকা প্রদান করেও চাকুরি পেতে ব্যর্থ হয়ে মোঃ মোক্তার হোসেন নামের ভুক্তভোগী এক প্রার্থী ওই মামলাটি দায়ের করেছেন। যার সি,আর নং-১২৬৯। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই’কে (খুলনা) তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন।

যদিও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ড উৎকোচ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক ও কর্মচারী পদে সর্বমোট ৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

মামলার বিবরণ ও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানা যায়, উপজেলার ইউ,আর,এইচ,এস উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীসহ মোট ৫টি শুন্য পদে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহকারি প্রধান শিক্ষক, নৈশ প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদের জন্য গত ১৩ জুলাই ২০২২ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরপর নির্ধারিত ৫ নভেম্বর চাকরি প্রার্থীদের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ডাকযোগে প্রবেশ পত্র পাঠানো হয়। এরআগে মামলার বাদী ভুক্তভোগী মোঃ মোক্তার হোসেন নৈশ প্রহরী পদে আবেদনপূর্বক চাকুরী পেতে অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে ৭ লাখ টাকা প্রদানের চুক্তি করেন। সে অনুযায়ী ৩ কিস্তিতে উল্লেখিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে সমুদয় ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।

এরপর পরীক্ষার আগে গত ৩ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক মোক্তারকে ডেকে চাকুরি পেতে আরও ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত দাবি করেন। তবে তিনি দাবি অনুযায়ী টাকা দিতে অস্বীকার করে পূর্বের প্রদেয় টাকা ফেরৎ চান। এসময় অভিযুক্ত ঐ শিক্ষক ফের তাকে চাকুরী প্রদানে পূর্ণ আশ্বাস দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেন।

সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর পাইকগাছা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় মোক্তার হোসেনের কাংখিত নৈশ প্রহরী পদে তাকে বাদ দিয়ে প্রশান্ত সরকার নামে অপর এক প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করেন।

মামলার বাদি জানতে পারেন যে, ১০ লাথ টাকার বিনিময়ে প্রশান্তর চাকুরি নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপর তিনি তার প্রদেয় টাকা ফেরৎ পেতে স্বাক্ষীদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট হাজির হলে তিনি তাকে ১ লাখ টাকা নগদ প্রদান করে বাকি ৬ লাখ টাকা পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে পরিশোধের কথা জানান।

পরে গত বুধবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৯ টার দিকে বাকি টাকা নিতে পুনরায় সাক্ষীদেরসহ তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে হাজির হলে তিনি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে উল্টো তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এমনকি এ ঘটনায় বেশি বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি প্রদান করেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী মোঃ মোক্তার হোসেন জানান, চাকরি নিশ্চিত করতে তিনি প্রধান শিক্ষকের চাহিদানুযায়ী সমিতিসহ পৈত্রিক জমি বিক্রি করতে বায়না পত্র ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে তাকে প্রদান করেছিলেন। যদিও উৎকোচের বিনিময়ে চাকুরীর প্রত্যাশা করাটা তার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল উল্লেখ করে বাকি টাকা ফেরৎ ও তদন্তপূর্বক শিক্ষক উত্তম দাসের শাস্তির দাবি জানান তিনি।

এব্যাপারে নিযোগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও ইউ,আর,এইচ,এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস জানান, নিশ্চিত চাকরির শর্তে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের জন্য মোক্তার নামের এক নৈশ প্রহরী পদে চাকরির প্রার্থীর নিকট থেকে ম্যানেজিং কমিটির সম্মতিক্রমে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। তবে স্থানীয় এমপি মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বিষটি অবগত হয়ে তার টাকা ফেরত দিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বলায় ৫ নভেম্বর পরীক্ষার আগেই তার সমুদয় টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে নৈশ প্রহরি পদের অন্য দু’প্রার্থী মোঃ আরিফ হোসেন ও মোঃ আতাউর রহমানকে দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে প্রক্সি দিয়ে পরীক্ষার কোরাম পূরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নৈশ প্রহরি পদে আবেদনকারী অপর প্রার্থীদ্বয় মোঃ আরিফ হোসেন ও মোঃ আতাউর রহমান জানান, নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা কেন্দ্র প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস সুকৌশলে আমাদেরকে দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে উপস্থিতি স্বাক্ষর করান।

এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান আলী শেখ জানান, নীতিমালা অনুসরণপূর্বক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করে নিয়োগ বোর্ড ও স্বচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে সার্বিক বিষয়ে দায়িত্বে ছিলেন ডিজির প্রতিনিধি পাইকগাছা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খালেকুজ্জামান।

নিয়োগ কমিটির ডিজির প্রতিনিধি পাইকগাছা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খালেকুজ্জামান প্রার্থীদের কাউকে চেনেননা দাবি করে বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রার্থীদের ভালো চেনেন। কোরাম পূরনে প্রক্সির বিষয়টি মূলত তিনিই ভালো জানেন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!