খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
  সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন মারা গেছেন
  নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত
  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

নির্বাচন ইনক্লুসিভ না হলে গ্রহণযোগ্যতা বাস্তব অর্থে থাকবে না : সিই‌সি

গেজেট ডেস্ক

‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্য না থাকলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে ভোট করা কষ্টকর হবে। কমিশনের একার পক্ষে ভাল নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এমন মন্তব্য করেছেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রবিবার এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

দায়িত্বভার পাওয়ার পর থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে ধারবাহিক সংলাপ করে যাচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন। এ অংশ হিসেবে সাবেক কমিশনার ও সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতিথিরা বলেছেন বর্তমানে যে সিস্টেম আছে তাতে এখানে খুব বেশি ভাল করা সম্ভব নয়। এটা একটু কম-বেশি কিছু হতে পারে। আমরা যদি দৃঢ় থাকি, আইন দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি, তাহলে অনেকটা উন্নয়ন সম্ভব।

‘সাবেক সিইসি রউফ সাহেব প্রার্থী অনুযায়ী নয়, দলভিত্তিক নির্বাচনের কথা বলেছেন। নির্বাচনে দেখা গেল যে অনেক আগে থেকে দলগুলো তাদের টোটাল প্রার্থীর নাম দিয়ে যাবে। সবাই তিনশ’ আসনে প্রার্থী দিল। পার্টি ক, খ, গ, ঘ। যে যত ভোট পেয়েছে, সেভাবে আসন পাবে। এ ধরনের একটা সিস্টেম আছে। তবে এটা আমাদের বিষয় নয়। দলগুলোকেই দেখতে হবে।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা যে শপথ নিয়েছি, বর্তমানে যে আইনি কাঠামো আছে, সাংবিধানিক কাঠামো আছে, এর মধ্যেই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন একাধিক দিনে নির্বাচন করলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। কেউ কেউ আবার বলেছেন এতে সমস্যাও হবে। এ নিয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি। কাজেই একাধিক দিনে নির্বাচন করলে আমাদের জন্য অসুবিধাও হতে পারে। ওই ধরনের প্রস্তুতি আমাদের নেই।’

দলগুলোকে পরামর্শ দিতে সমস্যা কোথায়- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এখনো দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করিনি। সবাই বলেছেন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। নির্বাচন যদি ইনক্লুসিভ না হয়, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাস্তব অর্থে থাকবে না। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। এই কালচারের মধ্যে কিছু ইতিবাচক গুণ আনতে হবে। তাদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা, ঐকমত্য যদি না থাকে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে খুব ভাল নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এটা আমরা যেমন আগে বলেছি, ওনারাও বলেছেন।’

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সহসাই সংলাপ শুরু হবে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যখন মতবিনিমিয় করবো আমরা সাজেশন চাইবো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পদ্ধতিগত কী পরিবর্তন করা যেতে পারে তা জানতে চাইবো। ব্যক্তি নয়, সিস্টেম উন্নত করতে পারলে নির্বাচন অনেক বেশি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে।’

‘সাংসদ রিকোয়েস্ট অনার না করলে আমাদের কিছু করার থাকে না’

কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে সিটি করপোরেশন ভোটে এলাকা ছাড়তে ইসি চিঠি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আমাদের কিছু আইনগত দিক আছে। কিছু ক্ষমতা আংশিক, কিছু পরিপূর্ণ। কুমিল্লায় যা বলা হয়েছে- সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবেন না। মাননীয় সংসদ সদস্য এই আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে, আমরা এলাকা ছাড়তে বলেছি। উনি এলাকা ছাড়েননি। ‍উনি মামলা করেছেন, আমরা ফল পাইনি।’

‘আমরা যখন কাউকে রিকোয়েস্ট করি, জোর করে একজন মাননীয় সাংসদকে… উনাকে বলাটাই এনাফ। উনি যদি সেটাকে অনার না করে থাকেন তাহলে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না।’

বিদ্যমান আইনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব: শামসুল হুদা

সংলাপে সামনে নির্বাচনে আইন পরিবর্তন না করার পক্ষে মত দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা। বর্তমান কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন- ‘আইন-কানুন যা আছে তার মধ্য দিয়েই অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। তা দিয়েই আমরা তো সুষ্ঠু নির্বাচন করেছি।’

‘বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ইসির কর্মকর্তকাকে রিটার্নিং অফিসার করবেন। করতে হবে। আমি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সব জায়গায় পারিনি। সব জায়গায় উপযুক্ত লোকবল নেই, প্রশিক্ষিত লোক দরকার। যাদের বেছে বেছে করেছি, বাকিগুলোতে ডিসিদের নিয়োগ করেছি। একেবারে বাদ দেয়া ঠিক হবে না।’

সব দল না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মনে করেন শামসুল হুদা। তিনি বলেন, ‘কিভাবে আনবেন সেটা আপনাদের ওপর নির্ভর করবে। আমার দায়িত্বকালে বিএনপির আস্থা ফেরাতে অনেক সময় লেগেছে। ওনারা বলছেন কারেন্ট পরিস্থিতিতে ভোটে যেতে রাজি নন। যে দেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচন আছে, সেদেশে কোনো দল বেশিদিন নির্বাচনের বাইরে থাকতে পারে না। আমরা যদি পরিবেশ ‍সৃষ্টি করতে পারি তাহলে তারা অবশ্যই আসবে।’

বর্তমান কমিশনের উদ্দেশে সাবেক এই সিইসি, ‘এখন পর্যন্ত আপনাদের যা কার্যকলাপ দেখেছি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে না কেউ। এটা যদি বজায় রাখতে পারেন, যেসব কর্মকর্তা আছে তাদের নিয়ে আপনারা ভাল নির্বাচন করতে পারবেন। আমরা সবাই চাই একটা সুন্দর নির্বাচন হোক।’

বুথ বাড়িয়ে কেন্দ্র কমানোর পরামর্শ মোহাম্মদ সাদিকের

বর্তমান কমিশনকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দিন ৯ ঘণ্টা হিসাব করে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেন ইসির সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক। তিনি বলেন, ‘ব্যালট ভোট গণনায় নানা সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে ইভিএম আপনাদের মুক্তি দিতে পারে। কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা বাড়িয়ে কেন্দ্র কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।

ভোটের দিন ইন্টারনেট যেন ধীর না হয়: মোখলেছুর রহমান

জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার সুপারিশ দেন ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘ইভিএম কিংবা ব্যালট যেভাবেই নির্বাচন হোক গোপন কক্ষে যেন কোনো লোক দাঁড়িয়ে না থাকে।’ ভোটের দিন ইন্টারনেটের গতি ধীর না করার পরামর্শ দেন তিনি।

ভোটকক্ষের ডাকাত সরাতে হবে: শাহ নেওয়াজ

ইভিএম হ্যাকিংয়ের সুযোগ নেই মন্তব্য করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘এটাতে ইন্টারনেট নেই। এজন্য মক ভোটিং সিস্টেম বাড়াতে হবে। গোপন কক্ষে একজন লোক দাঁড়িয়ে থেকে বলছে, ভোট দিয়ে দেই। সেই ডাকাত সরাতে না পারলে ইভিএম মানুষ গ্রহণ করবে না।’ জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার পক্ষে মত দেন তিনি।

ভোটে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে সরকারি দল: আবু হাফিজ

নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণ দেখতে হবে বলে মনে করেন সাবেক কমিশনার আবু হাফিজ৷ তিনি বলেন, ‘যেখানে কমিশনের লোক দিয়ে দায়িত্ব পালন সম্ভব সেখানে কমিশনের লোক নিয়োগ দিতে হবে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে৷ অন্যথায় জেলা প্রশাসককে নিয়োগ দিতে হবে৷ সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ইনভলভ হওয়া যাবে না। এটা সরকারি দলের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। আইন প্রয়োগ সঠিকভাবে করতে হবে। তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব।’

মতবিনিময় সভায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা, বিচারপতি আব্দুর রউফ ও কেএম নূরুল হুদা; সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ, আবু হাফিজ ও মাহবুব তালুকদার; সাবেক ইসি সচিব ড. সাদিক ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব জেনমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমানসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে বর্তমান ইসি গত মার্চ মাস থেকে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ করছে। গত ১৩ ও ২২ মার্চ এবং ৬ ও ১৮ এপ্রিল যথাক্রমে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজ এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী/প্রধান বার্তা সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। এরপর ৯ মার্চ পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ করে কমিশন। এ মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি সংলাপে বসার কথা রয়েছে।

 

 

খুলনা গেজেট/ আ হ আ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!