খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  ঢাকা শিশু হাসপাতালে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট
  রাজধানীর খিলগাঁওয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  জাতীয় পতাকার নকশাকার, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যে হিমসিম খাচ্ছেন ক্রেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিত্যপণ্যের বাজার এখন আর পাগলা ঘোড়া নয় পাগলা হাতিতে পরিণত হয়েছে। নিত্যপণ্যের বাজারের প্রতিটি জিনিসের- চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা থেকে শাকসবজি পর্যন্ত মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।সরকার সংকট সামাল দিতে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তারা সেটা মানছে তো নাই-ই, উপরন্তু কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতারিত করছে সবাইকে। সরকারের নানা পদক্ষেপেও নিত্যপণ্যের বাজার ভোক্তা সহনীয় হচ্ছে না। পেঁয়াজের দামের সেঞ্চুরি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি আলুর দামও হাফ সেঞ্চুরি অতিক্রম করেছে। সাথে কাচামরিচ ও চালের দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। বিভিন্ন ধরণের সবজির দামেও উদ্ধগতি। এমন পরিস্থিতিতে রীতিমতো দিশেহারা ভোক্তরা। বিশেষ করে নাভিশ্বাস উঠেছে সীমিত আয়ের মানুষের।

ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। তাদের মতে, গা-ছাড়া বাজার তদারকিতে বারবার সেই পুরনো সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ওই সিন্ডিকেট সদস্যদের চিহ্নিত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে নানা ইস্যুতে বছরে কয়েকবার নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে। আর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হাতিয়ে নেয় হাজার কোটি টাকা।

দেশে এই মুহুত্বে কোন অতিবৃষ্টি হয়নি যার কারণে কাঁচামরিচের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু প্রায় সময়ই দেখা যায় মসলা জাতীয় পণ্যটির দাম ওঠানামা করছে। আর গত বছরে এ সময় আলু প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকা বিক্রি হয়েছে, কিন্তু এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা।

নগরীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়, কাঁচামরিচ কেজি প্রতি ২০০-২৩০ টাকা।

রিকসা চালক মজিবর রহমান জানান, ঘরে কোন তরকারি না থাকলে অন্তত কাঁচামরিচ দিয়ে আলু ভর্তা মেখে ভাত খেয়ে সকালে বের হই। কিন্তু সেই আলুও কেনার উপায় নেই। দৈনিক যা আয় হয়, তা দিয়ে চলা খুব কঠিন।

খুচরা ব্যবসায়ী আলি হোসেন বলেন, আমাদের বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে, আবার ১ বস্তা আলুতে ৩-৫ কেজি নষ্ট বের হয়।তিনি বলেন খুব সীমিত লাভ হয়।

খুলনা বড় বাজারের মেসার্স জাবেদ আলী মোড়লের স্বত্তাধিকারী গোলাম মোস্তফা খুলনা গেজেটকে বলেন, আমার ব্যবসায়িক জীবনে আলুর এমন অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হতে দেখিনি।কারণ হিসেবে তিনি বৃষ্টি ও বন্যাকে দায়ী করেন। এছড়া তিনি সব আলু কোল্ডস্টোরেজ মালিকদের কাছে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেন। তারা দাম বাড়াচ্ছে বলে তার তিনি মনে করেন।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে মিল পর্যায়ে চালের দাম নির্ধারণ করা হলেও মিল মালিকরা কথা রাখেনি। বস্তায় (৫০ কেজি) ১৫০-২০০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। যার প্রভাবে খুচরা বাজারে মোটা চালের কেজি সর্বোচ্চ ৪৬ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২/৬৩ টাকা। মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫২/৫৩ টাকা। প্রতি কেজি বাসমতি ৬৫ টাকা, বালাম ৫২ টাকা, মোটা ও স্বর্ণা ৪৫ টাকা, আঙুর বাসমতি ৬৫ টাকা, পরস বালাম ৫০-৫২ টাকা, ময়ুর ২৮ চাল ৫০ টাকা, মজুমদার ২৮ চাল ৫০ টাকা, ইরি আতপ ৪০ টাকা, ভাইটাল (বটিয়াঘাটা) ৭০ টাকা, বিআর ২৮ ৫০ টাকা, চিনিগুড়া চাল ১০০ টাকা, নাজিরশাহ ৬০ টাকা।

বেসরকারি ঔষধ কোম্পানিতে চাকুরী করেন আরাফাত হোসাইন তিনি বলেন, জীবন নির্বাহের খরচ বেড়েছে, কিন্তু সে তুলনায় আয় বাড়েনি। ফলে পরিবার নিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে।চালসহ প্রতিটা জিনিসের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এখনই দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের দূর্ভোগের সীমা থাকবেনা।চাল পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে তিনি ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ ইব্রাহীম হোসেন মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে জানান, প্রতিদিনই আমরা নগরীর বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করছি। বেশি দামে পণ্যবৃদ্ধির দায়ে অনেককে জরিমানা ও শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।এই মুহুত্বে রুপসা এলাকায় ভোক্তা অধিকারের অভিযান চলছে বলে তিনি জানান।

এদিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে বিকল্প দেশ থেকে সরবরাহ বাড়ানো হলেও খুচরা বাজারে কেজিতে আবারও ১০ টাকা বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ ৯০ -১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই বললেই চলে।

খুলনা গেজেট / কেএম/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!