খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল

নদীর নাম ফলকে আছে, বাস্তবে ঘের-পুকুর-মার্কেট-ধান ক্ষেত

বিশেষ প্রতিনিধি

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া ফলক আছে, নদীর উপর ব্রীজ আছে, কিন্তু ব্রীজের নীচে সেই নদী আর নেই! সেখানে কেউ করেছে ধান চাষ, কেউবা মাছের ঘের। এচিত্র খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের বানিয়াখালিতে। শুধু বানিয়াখালিতে নয়, ডুমুরিয়া উপজেলা নদী-খালের চিত্র আজ বিলীন হতে চলেছে। আর এসব বিলীন হয়ে যাওয়া নদী–খাল দখল করে প্রভাবশালীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেট তৈরী করেছে।

খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের বানিয়াখালি ছিল হামকুড়া নদী, যার দৈর্ঘ ছিল ১২ কিলোমিটার। নদীর উৎস মুখ ছিল বিল ডাকাতিয়া এবং পতিত মুখ ছিল ভদ্রা নদী। ৯০ দশকের পরও নদীর অস্তিত্ব ছিল, যা এখন শুধু ইতিহাসের পাতায়। নব্বই দশকে ডুমুরিয়ার জলাবদ্ধ মানুষ বিক্ষুদ্ধ হয়ে বিল ডাকাতিয়ার সন্ধ্যা খালের বাঁধ কেটে দিলে এই নদী কিছু দিনের জন্য তার যৌবন ফিরে পেয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আবারও বাঁধ নির্মাণ হলে ধীরে ধরে নদীটি বিলীন হয়ে যায়।

হামকূড়া নদীর এই দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার আর প্রস্থ ১০০মিটার জমি আজ সবই প্রভাবশালীদের দখলে। কেউ করেছে পুকুর, কেউ বা ধান চাষ আবার কেউ ঘের বানিয়ে মাছ চাষ করছেন। হামকুড়া নদী না থাকলেও নদীর উপর ব্রীজ এবং ইতিহাস হিসাবে নদীর নাম ফলক রয়েছে।

ডুমুরিয়া সদরের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত সালতা নদী। একদা এই নদীতে নিয়মিত বড় ধরনের নৌযান চলাচল করলেও এখন সবই ইতিহাস। নদী নর্দমায় পরিণত হওয়ায় দুই তীরই দখল করে নিয়ে প্রভাবশালী মহল। তীরে প্রায় ১০ একর জমি দখল করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হুমায়ন কবীর বুলু বিশাল মার্কেট তৈরী করেছিলেন।

গত কয়েক বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই মাকের্টটি উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, কিন্তু নানা বাধা বিঘ্নতে তা কার্যকর হয়নি। সম্প্রতি ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ হতে তাকে বহিস্কার করা হয়। তারপর পাউবো নড়ে চড়ে বসে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করে। বাধা বিঘ্নের কারণে প্রথম দফা কাজ শেষ করতে পারেনি। ৪র্থ দফা গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে পাউবো উচ্ছদ করতে আসলে পাউবো কর্মকর্তাকে আটক রেখে শ্রমিকদের মারধর করা হয়। থানায় চেয়ারম্যান সহ ৩৪ জনের নামে মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পরে সবাই আদালত হতে জামিন নেয়।

ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এজাজ আহমেদ স্বীকার করে বলেন, হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে এবং নদী দখল করা মার্কেট উচ্ছেদ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, হামকুড়া নদী আবার খনন করা হবে বলে তারা ষ্টাডি করেছেন।

তিনি বলেন, পলি পড়ে নদীটা ভরাট হয়ে গেছে। পলির কারণে ২ বছর আগে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সালতা নদী খনন করলেও আবার ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদী খননের কোন সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। এজন্য এবার নতুন ভাবে স্টাডি করে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে হামকুড়া, ভদ্রা ও সালতা নদীর পলি বন্ধ করার প্রকল্প রেখেই নদী খননের কাজ শুরু করা হবে।

পাউবোর নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ডুমুরিয়া বাজারের সালতা নদীর তীরবর্তী অধিগ্রহণ করা জমি স্থানীয় চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর বুলু দখল করে বহুতলা মার্কেট নির্মাণ করেছিলেন। আইনের সকল প্রক্রিয়া মেনে সেটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই উচ্ছেদ করতে গিয়ে পাউবোর কর্মকর্তাদের মারধর ও আহত হবার ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে পাউবো বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর বুলুর নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নদী খাল ভরাট হয়ে যাওয়া জায়গা উদ্ধার কার্যক্রম চলছে । ইতিমধ্যে ৪০ একর জমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের জন্য অশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ডুমুরিয়ার নদী দখল ঘটনায় ডুমুরিয়ার ভূমি বিভাগ সরেজমিনে তদন্ত করে জেলা প্রশাসক বরাবরে রিপোর্ট দাখিল করেছে ।

এলাকাবাসীর অভিমত, বেশীর ভাগ নদী-খাল সব প্রভাবশালীদের দখলে। এখন দল থেকে বহিস্কার না হলে তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না ? এই কারণে কিছু উচ্ছেদ হচ্ছে আবার অনেকে রয়েছে বহাল তবিয়তে। ফলে সরকারের নেয়া নদী খনন বা উচ্ছেদ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ডুমুরিয়ায় নদী দখল করে প্রভাবশালী মহলের একাধিক ইট ভাটাও রয়েছে ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!