খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় এসবির রিপোর্টার নিহত
  চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে

দুবলার চরে সামুদ্রিক সাপের কামড়ে জেলের মৃত্যুতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে নিহত মনিরুল ইসলামের (২৭) মরদেহ সোমবার (১৪ নভেম্বর) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের মান্দারবাড়িয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহত মনিরুল ইসলাম আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের মান্দারবাড়িয়া গ্রামের মনোহর আলী গাজীর ছেলে।

এদিকে সামুদ্রিক সাপের কামড়ে প্রতাপনগরের মান্দারবাড়িয়া গ্রামের মনিরুল ইসলামের মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্যের। জেলেদের দাবি অনুযায়ী এর আগেও দুবলার চরে একই প্রজাতির সাপ অন্যদের কামড়ালেও তেমন কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। তাহলে মনিরুল কেন মারা গেল? আসলে কীভাবে কী ঘটেছিল সেদিন ?

মনিরুলের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা তার সঙ্গী জেলেরা জানান, প্রতাপনগরের মান্দারবাড়িয়ার মনিরুল ইসলাম তার দুলাভাই বহরদার মুজাহিদুল ইসলামের কর্মচারী হিসেবে দুবলার চরে যায় মাছ ধরার কাজ করতে। বহরদার মুজাহিদ প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের আবদুল মজিদ বিশ্বাসের ছেলে। শনিবার (১২ নভেম্বর) সাগরে থেকে ধরে চরে নেয়া বিপুল পরিমান মাছের সাথে একটি সামুদ্রিক সাপ( স্থানীয়রা বলে উলবতি বা ক্রেন সাপ) দেখতে পেয়ে সেটিকে মেরে মাছ শুকানোর চালন বা মাচার নিয়ে ফেলে দেয়া হয়।

পরের দিন রোববার (১৩ নভেম্বর) বেলা ১টার দিকে একই চালনে মাছ শুকানোর কাজ করতে যায় মনিরুল। এসময় বেখায়ালে একটি সাপের লেজের উপর পা পড়ে তার। সাথে সাথে সাপটি পায়ে কামড়ে দেয়। কিন্তু এ ধরনের সামুদ্রিক সাপের কামড়ে তেমন ক্ষতি না হওয়ায় বিষয়টিকে প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি মনিরুল। ঘন্টাখানেক পর যখন সে নানা শারীরিক সমস্যা অনুভব করতে থাকে তখন সহকর্মীদের বিষয়টি জানায়। তারা খুঁজে দেখে সেই চালন বা মাচার নীচেই হালকা নড়াচড়া করছে সাপটি।

এসময় আশপাশের জেলেরা জানান, আসলে আগেরদিন যে সাপটিকে মেরে ফেলে দেয়া হয়েছিল। মনিরুলকে কামড় দেয়া সাপটিই সেটি। সাপটি মরে গেছে ভেবে ফেলা হলেও আসলে সেটি মরেনি। আহত অবস্থায় বেঁচেছিল। তার ওপর আবার যখনই সাপটির গাঁয়ে পায়ের আঘাত পড়ে সাথে সাথে ছোবল দিয়ে বিষ ঢেলে দেয়। পরে সেটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে জেলেরা।

এদিকে সময় যতো গড়াতে থাকে মনিরুলের শরীরের বিষক্রিয়া ততই বাড়তে থাকে। একপর্যায় নিস্তেজ হয়ে যায় মনিরুলের শরীর। এরই মধ্যে চরের একজন ওঝাকেও ডেকে ঝাড়ফুকের চেষ্টা করা হয় (এই চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই) এছাড়া চরের পাশে সাগরে নোঙর করা কোস্টগার্ডের জাহাজেও নেয়া হয় তাকে। তবে তাদের কাছে সাপে কামড়ালে যে এন্টিভেনাম ইনজেকশন দেয়া হয় তা ছিল না।

জেলেরা জানান, এসব কার্যক্রমের একপর্যায়ে রোববার সন্ধ্যার দিকে মারা যায় মনিরুল। রাতেই একটি ট্রলারে মরদেহ নিয়ে প্রতাপনগরের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা হয় জেলেদের একটি দল।

মৃতের প্রতিবেশি ও প্রতাপনগরের গণমাধ্যম কর্মী মাসুম বিল্লাহ জানান, ময়না তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই সোমবার মরদেহ দাফন করা হয়। তবে ময়না তদন্ত না হওয়ায় সাপের বিষ মনিরুলের শরীরে ঠিক কত দ্রুত, বা কতটা ছড়িয়েছিল তা জানা যায়নি।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মনিরুজ্জামান জানান, সাগরে থাকা এ ধরনের অনেক সাপ সাধারণত কামড়ায় না। তবে অনেক সময় ড্রাই বাইট বা বিষমুক্ত কামড় দিয়ে থাকে, যার ফলে অনেক কামড়ে হয়তো কারো তেমন ক্ষতি নাও হতে পারে। তবে যখন প্রচন্ড রাগান্বিত হয়ে ছোবল দেয় তখন পুরো বিষ ঢেলে দেয়। ফলে সমুদ্রের জেলেদের এসব সাপ দেখলে হেলাফেলা করা উচিৎ নয়।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে সামুদ্রিক সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা তেমন নেই বললেই চলে। দুবলার চরেও এর আগে কবে এমন মৃত্যু হয়েছে তা জানা নেই কারো।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!