খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
  রাঙামাটির সাজেকে শ্রমিকবাহী মিনি ট্রাক পাহাড়ের খাদে পড়ে ৯ জন নিহত

দিঘলিয়ায় মাছ চাষীদের ৮৪ লক্ষ টাকার সরকারি প্রণোদনা প্রদান

দিঘলিয়া প্রতিনিধি

প্রথম ধাপে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দিঘলিয়া উপজেলায় ৬ শত ৬৭ জন মাছ চাষীদের মধ্যে ৮৪ লক্ষ টাকার সরকারি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর প্রথম ধাপে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষীদের মাছ চাষে উৎসাহ ধরে রাখার লক্ষে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় দিঘলিয়া উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে মোট ৬ শত ৬৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষী শনাক্ত করা হয়। এ সকল ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষীদের মাঝে মোবাইল একাউন্ট এর মাধ্যমে ৮৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়।

সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড মেরিন ফিসারিজ প্রজেক্ট এর খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রীর কাছ থেকে জানা যায়, মাছ চাষীদের দুই ভাগে বিভক্ত করে যেমন মৎস চাষী এবং চিংড়ী চাষী এই দু’ বিভক্তির আবার বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের প্রণোদনা দেওয়া হয়। মৎস্য চাষীদের ক্ষেত্রে ২ একর জমির নীচে চাষীদের মাছের খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা এবং ২ থেকে ৩ একর জমির চাষীদের খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১২ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

চিংড়ী চাষীদের ক্ষেত্রে ২ একরের নীচে জমির খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৩ হাজার টাকা। ২ একরের নীচে চিংড়ী চাষীদের (পিএল) অর্থাৎ গলদা চিংড়ীর পোষ্ট লার্ভি সংক্ষেপে পিএল (চিংড়ী পোনা) ক্রয়ের জন্য ১৮ হাজার টাকা। ২ থেকে ৩ একর জমির চিংড়ী চাষীদের খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৮ হাজার টাকা এবং ২ থেকে ৩ একর জমির চিংড়ী চাষীদের পিএল গলদা চিংড়ীর পোষ্ট লার্ভি সংক্ষেপে পিএল (মাছের পোণা) ক্রয়ের জন্য ১৮ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে মৎস অধিদপ্তর থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষীদের মোবাইল একাউন্ট এর মাধ্যমে সরকারি প্রণোদনা পৌঁছে গেছে।

সরকারি প্রণোদনা পেয়ে অত্র উপজেলার ৬ ইউনিয়নের এ সব মাছ চাষীরা দারুণ উচ্ছসিত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন মনির মোল্যা। বাড়ি দিঘলিয়া ইউনিয়নের দিঘলিয়া গ্রামে। উচ্চ শিক্ষিত। চাকুরী না পেয়ে পড়াশুনা শেষ করে টিউশনি করতেন। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে পৈত্রিক ২ একর জমির উপর চিংড়ী মাছের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে মৎস চাষ তার পেশায় পরিণত হয়েছে। তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, গত বছর ১ম ধাপে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের কারণে বিদেশে মাছ রপ্তানি বন্ধ থাকার কারণে চরমভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ পর্যন্ত আমার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা। তিনি বলেন, অত্র উপজেলায় আমার মতো অধিকাংশ চিংড়ী চাষী করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের কারণে আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছে। সরকারি প্রণোদনার ১৮ হাজার টাকা পেয়ে তিনি দারুন উজ্জীবিত হয়েছেন।

অন্যদিকে সরকারি এই প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষী চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মোঃ খালিদ শেখ প্রবাস ফেরত যুবক। বাড়ি দিঘলিয়া ইউনিয়নের ব্রক্ষগাতী গ্রামে। ২০১৬ সাল থেকে এলাকায় তিনি একজন পেশাদার মৎস চাষী হিসাবে পরিচিত। ব্রক্ষগাতী বিলে তিনি ৬ একর জমির উপর মৎস চাষ করেন। এ পর্যন্ত তার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা। ১ম ধাপে করোনাকালীন সময়ে তিনি সঠিক দামে মাছ বিক্রি করতে না পেরে আড়াই লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছেন বলে তিনি জানান।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনেকে সরকারি প্রণোদনার অর্থ পেলেও আমার মতো প্রকৃত মৎস চাষীদের অনেকেই এই প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমার মতো একই বিলের মৎস চাষী ওলিয়ার। তিনি প্রায় ৬ একর জমিতে মাছ চাষ করেন। মোঃ ইনামুল শেখ তিনিও প্রায় ৫ থেকে একর জমিতে মৎস্য চাষ করেন। এরাও আমার মতো পেশাদার মৎস চাষী। ১ম ধাপে করোনাকালীন সময়ে আমার মতো এরাও আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছেন। আমাদের মতো আরো অনেক পেশাদার মৎস এবং চিংড়ী চাষী রয়েছেন। যাদের নাম ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষীদের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি এবং সরকারি প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!