খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
  রাঙামাটির সাজেকে শ্রমিকবাহী মিনি ট্রাক পাহাড়ের খাদে পড়ে ৯ জন নিহত
অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায়

দিঘলিয়ার সাব-রেজিস্ট্রারকে নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ

একরামুল হোসেন লিপু, দিঘলিয়া

শুভ্রা রানী বাড়ৈ। ৩৮ তম বিসিএস থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন ২৩ আগস্ট ২০২১ থেকে। বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হওয়ার পর এটাই তার প্রথম কর্মস্থল। খুবই ভদ্র, বিনয়ী এবং শান্ত প্রকৃতির এই কর্মকর্তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলায়। মায়ের চাকুরীর সুবাদে লেখাপড়া করেছেন ঝিনাইদহে।

দিঘলিয়া উপজেলার জাল দলিল সিন্ডিকেটের বিভিন্ন অনৈতিক দাবি এবং চাপের কাছে নতি স্বীকার না করায় ওই চক্রটি সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ‘কমিশন রেজিস্ট্রির নামে চুক্তির পাঁচ লাখ টাকা জমি রেজিস্ট্রি করেননি’ এমন অভিযোগ এনে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ সম্বলিত সংবাদ পরিবেশন করছে বলে জানিয়েছেন শুভ্রা রানী বাড়ৈ। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, “অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ার কারণে তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে”।

সাব-রেজিস্ট্রার শুভ্রা রানী অভিযোগ করেন, “১৮ সেপ্টেম্বর দলিল লেখক মোঃ ফেরদাউস লিটু কমিশন রেজিস্ট্রির জন্য আমার কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, দাতা মারাত্মক অসুস্থ, শয্যাশায়ী। দাতার ঠিকানা উল্লেখ করা হয় ঢাকার গুলশান-১। আমি জেলা রেজিস্ট্রার স্যারের অনুমতি নিয়ে আসা-যাওয়ার খরচ তারা বহন করবে এই মর্মে সরকারি বিধান মতে কমিশন রেজিস্ট্রি করতে যেতে সম্মত হই। ১৮ সেপ্টেম্বর আমি ও আমার একজন অফিস স্টাফকে নিয়ে ঢাকা পৌঁছাই এবং এয়ারপোর্ট থেকে মুরাদ হোসেন গুলশান ২ এ নিয়ে যান। ভিন্ন ঠিকানায় কমিশন করার কোন আইনগত যৌক্তিকতা না থাকায় এবং এক্ষেত্রে দাতা জাল হবার সম্ভাবনা থাকে বিধায় আমি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেই। উল্লেখ্য যে দলিল লেখক মোঃ ফেরদাউস লিটু ঢাকায় অনুপস্থিত ছিলেন। এ সময় দাতা নূরে এ কাদের দোতলা বাসা থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় নিচে নেমে আসেন এবং আমাকে অনুরোধ করেন। আমি তাকে রেজিষ্ট্রেশন না করার কারণগুলো বলি। তিনি বুঝতে পারেন। গুলশান ১ এর কথা বলে গুলশান ২ এর ঠিকানায় নিয়ে আসা এবং দাতার সুস্থতা দেখে আমি জমি রেজিস্ট্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করে আমার কর্মস্থল দিঘলিয়ায় চলে আসি। অফিসের আদেশ বইতে পরবর্তীতে এরূপ প্রতারণা ও আচরণগত পরিবর্তন প্রসঙ্গে মুছলেকায় দলিল লেখক মোঃ ফেরদাউস লিটুকে স্বাক্ষর করাই।”

তিনি আরও বলেন, “পরবর্তীতে ১১ নভেম্বর আমি এজলাসে জমি রেজিষ্টেশনের কাজে ব্যস্ত। এমতাবস্তায় উক্ত দলিল লেখক মোঃ ফেরদাউস লিটু তার কয়েকজন সহযোগীসহ এজলাসে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি ১৩ টি দলিলের ভ্রম সংশোধনের জন্য আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। এ সময় আমি তাদেরকে বলি, আমি নতুন আপনারা দলিলগুলোর ফটোকপি করে অফিসে জমা দিয়ে যান। তারপর যাচাই-বাছাই করে দেখব দলিলগুলোর ভুল সংশোধন করা যায় কিনা? এসময় তিনি এবং তার এক সহযোগী আমাকে বলেন, স্যার দাতারা সবাই চলে এসেছে এখনই এগুলোর সমাধান করে দিতে হবে।”

তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, “তেরোটি দলিলের ১৩ রকম সমস্যা। সবগুলো দলিলের জমির শ্রেণী পরিবর্তন করতে হবে এবং একটি বাটা দাগ যুক্ত করে দলিলগুলো সংশোধন করতে হবে, যা সাব-রেজিস্ট্রারের এখতিয়ার বহির্ভূত। আমি তাদের আদালতে যাবার পরামর্শ দেই। এসময় দলিল লেখক মোঃ ফেরদাউস লিটু আমাকে বলেন, আপনি পারবেন না কেন? আমরা এমন দলিল করেছি আগে। আমি জেলা রেজিস্ট্রার স্যারকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। তিনি আমাকে কাগজপত্রের কিছু বিষয় চেক করার জন্য বলেন। আমি সেই বিষয়গুলি চেক করে তাকে বিষয়গুলো অবগত করি এবং পরামর্শ নেই এবং তিনিও আদালতে যাবার পরামর্শ দেন। এ সময় উক্ত দলিল লেখক এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজন এজলাসের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা আমার সংগে অশোভন আচরণ শুরু করে ও একটা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এ সময় তারা বলতে থাকেন, আমরা এখান থেকে (এজলাস থেকে) যাবো না দেখি আপনি আমাদের কি করতে পারেন! অবস্থা বেগতিক দেখে আমি খাস কামরায় চলে যাই এবং দিঘলিয়া থানা অফিসার ইন চার্জকে ফোন করে পুলিশ তলব করি। পুলিশ আসার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পুলিশ প্রহরায় এজলাসে উঠি এবং সেবা গ্রহীতাদের দলিল রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম পরিচালনা করি এবং বিকাল সাড়ে ৫ টায় অফিস ত্যাগ করি। “

তিনি জানান, “আমি লিখিতভাবে জেলা রেজিস্ট্রার, খুলনা মহোদয়কে সমস্ত বিষয় অবগত করি। দলিল লেখক মোঃ ফেরদাউস লিটু এবং তার সাথে আগত মুরাদ হোসেনের অশোভন আচরণের বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রার খুলনা মহোদয়কে লিখিতভাবে জানাই। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন ও তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। নগরীর দলিল লেখক মোঃ ফেরদাউস লিটুকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছেন ও তার সাথে আগত মুরাদ হোসেনকে রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯০৮ সালের ধারা ৮০ (ক) এর উপধারা (১) অনুযায়ী ‘টাউট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে ওই চক্রটি আমার বিরুদ্ধে নানান ধরনের বানোয়াট ভিত্তিহীন অপপ্রচার করতে শুরু করে। তারা সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২/ ১ টি পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ ছাপায়।”

অভিযুক্ত দলিল লেখক ফেরদাউস হোসেন লিটু খুলনা গেজেটকে বলেন, “ঠিকানা ভুল হওয়ার কারণে সাব- রেজিস্ট্রার স্যার কমিশন রেজিস্ট্রি থেকে বিরত থাকেন। টাকা লেনদেনের বিষয় সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। ১৩ টি ভ্রম সংশোধনের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন হওয়ার কারণে বিষয়টি তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। উনি আমার স্যার, আমি কেন উনার সংগে অশোভন আচরণ করবো? জমি বিক্রেতার দিঘলিয়া দেয়ারা গ্রামের ইনামুল শেখ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমি দলিল লেখক হিসেবে বিষয়গুলো শুধু প্রসেসিং করে দিয়েছি।”

দিঘলিয়া উপজেলায় জমি কেনা বেচায় জড়িত এমন বেশ কয়েকজনের সংগে কথা বলে সাব- রেজিস্ট্রার শুভ্রা রানী বাড়ৈর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

এদিকে দিঘলিয়া উপজেলায় দলিল লেখক, মুহুরী এবং তাদের সহযোগীরা জমি বিক্রি এবং ক্রয় করতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নানা অজুহাতে অতিরিক্ত অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দলিল লেখকরা জমি রেজিস্ট্রেশন বাবদ দাতার কাছ থেকে শতকরা ৯%, ১০% অর্থ আদায় করে থাকে। অথচ কবলা দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে সরকারি রেট হলো ৬ দশমিক ৫ %। বাকী শতকরা সাড়ে ৩ পার্সেন্ট থেকে সাড়ে ৪ পার্সেন্ট টাকা দলিল লেখক মুহুরী এবং তাদের সহযোগীরা ভাগাভাগি করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর নবাগত উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার শুভ্রা রানী দলিল লেখকদের সতর্ক করেছেন।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!