খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর সদরঘাটের শ্যামবাজারঘাটে লঞ্চে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
  বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব
  নাটোরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে এক ট্রাক ড্রাইভার নিহত

দরপতনে হতাশ উপকূলের তরমুজ চাষি

নিতিশ সানা, কয়রা

খুলনার কয়রা উপজেলা সদর হতে কয়রা-পাইকগাছা প্রধান সড়ক ধরে ২৫ কিলোমিটার গেলেই উপজেলার আমাদি ইউনিয়নের সংগ্রাম মোড়। মোড়েই তরমুজের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমিরুল ইসলাম। তার পাশে গাড়িটা রাখতেই একটা তরমুজ কেটে খাওয়ানোর জন্য এগিয়ে আসেন তিনি। খেতে না চাওয়াতে বিষন্ন মুখে তিনি বলেন, ভাই কোন অখাদ্য দিচ্ছি না, খেতে পারেন। তার দেওয়া তরমুজ খেতে খেতে কথা হয় তার সঙ্গে। পার্শ্ববর্তী পাইগাছা উপজেলা থেকে এসে তিনি ১১ বিঘা জামিতে তরমুজের চাষ করেছেন । সব মিলিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা ছিলো এবার তরমুজ চাষে ভালো টাকা পাবেন। তার ১১ বিঘার থেকে ৬ বিঘা ক্ষেত সাতক্ষীরা আড়তে বিক্রি করে ৯০ হাজার টাকা পেয়েছে। আর ৫ বিঘার তরমুজ রাস্তার ধারে নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন বিক্রির জন্য। গত বছর ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় তার ক্ষেত বিক্রি হয়। অল্প দিনে ভালো লাভ হওয়ায়। এবছর তিনি আড়ত থেকে ৫০ হাজার টাকা দাদন নিয়ে ১১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন।

সেখান থেকে একই ইউনিয়নের পাটনি খালি গ্রামে রাস্তার ধারে তরমুজ নিয়ে বসে ছিলেন অজিত সরদার। তিনি একটি গরু ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ও ধান বিক্রি করে ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। নিজের সাড়ে তিন বিঘা জমি ও দেড় বিঘা জমি লিজ নেন তিনি। লিজ নিতে গুনতে হয় বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকা। এবছর তার ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু কোন ব্যাপারি তরমুজের দাম বলেনা। এক ব্যাপারি তার ২ বিঘা জমির তরমুজ ১০ হাজার টাকা দাম বলেন। খরচের টাকা তুলতে চিন্তায় রয়েছেন তিনি । এজন্য তিনি সাতক্ষীরার একটি আড়তে তার তরমুজ নিয়ে যাবেন। গত বছর তার নিজের ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ভালো লাভ হওয়ায় এবছর ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন।

একই গ্রামের কৃষক বিমল সরকার তরমুজ ক্ষেতের দু’চালা বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন। সেখানে শাহাজান, বাবু, নরেশ বসে গল্প করছিল। তাদের সাথে বিমল সরকার বলেন, ভাই এখন আর ঘুম হয় না, প্রতিদিন ঘুমের বড়ি খেয়ে তরমুজ ক্ষেতে ঘুমাই। ৮ হাজার টাকা করে লিচ নিয়ে ৩৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা তার খরচ হয়েছে। এলাকায় কোন তরমুজের বেপারি তরমুজ কিনছেন না। তাই ৩ বিঘা জমির তরমুজ সাতক্ষীরা একটি আড়তে নিয়ে ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। বাকি ৩৩ বিঘার তরমুজ ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে।

হতাশা ও বিরক্ত হয়ে তিনি জানান, গত বছর আর এক জনকে ভাগি নিয়ে ২৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ১২ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। তার ভাগে ৬ লাখ টাকা পায়। তাই এবার নিজেই ৩৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছে। নিজের জমানো টাকা আর এলাকার মানুষের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা সুদে নিয়ে তরমুজ চাষ করেন তিনি।

নরেশ ঢালী বলেন, আমি দু’টা সমিতি থেকে ৮৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শ্বশুড় বাড়ি পাটনিখালি গ্রামে সাড়ে চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করি। ফলন ভালো হয়েছে। তবে বেপারীরা বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা বলছে। জমির হারি ও ক্ষেতের খরচ সব মিলিয়ে ৮৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বেপারীরা খরচের টাকাও দাম বলছে না। গত বছর ৩ তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম।

বিমল, নরেশ, আমিরুলের, শাহাজান ও বাবুর মতো শত শত তরমুজচাষির কাঁধে এখন কষ্টের ভার। হঠাৎ দরপতনে তরমুজ বিক্রি না হওয়ায় তরমুজ নিয়ে স্বপ্ন দেখা চাষিদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। উপকূলীয় কয়রার চাষিরা খরচের টাকা তুলতে পারা না পারাটা এখন ছেড়ে দিয়েছেন ভাগ্যের ওপর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, এবছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ঈদের পরে হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায়, অধিকাংশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা কৃষকদের অফ সিজনে তরমুজ চাষের পরামর্শ দিচ্ছি, আশা করছি কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!