খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  চট্টগ্রামে কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট
  দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫
  গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২
করোনার ভাটা কটেছে রফতানিতে

তিন কারণে সংকটে খুলনার চিংড়ি চাষিরা

এমএম আসিফ

তিন কারণে সংকটে পড়েছেন খুলনার চিংড়ি চাষিরা। উচ্চ মূল্যে চিংড়ির পোনা কিনতে হয়, করোনার কারণে মাছের খাবারের মূল্য বেড়েছে; সেই সঙ্গে চিংড়ির দাম অর্ধেকে নেমেছে। এসব কারণে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে চাষিদের লোকসান পুষিয়ে নিতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেওয়া হয়েছে প্রণোদনা। করোনার প্রথম কয়েক মাস চিংড়ি রফতানিতে ভাটা পড়লেও সেটি এখন কেটে গেছে। এ প্রতিবেদককে এমনটাই জানিয়েছেন চিংড়ি চাষি ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

ডুমুরিয়া উপজেলার চিংড়ি চাষি কৌশিক বাগচি বলেন, গলদা-বাগদা চাষ লাভজনক ব্যবসা। ১৯৯৭ সাল থেকে চিংড়ি চাষ করে আসছি। খুবই ভালো যাচ্ছিল। সম্প্রতি করোনার প্রভাবে মাছের দাম কমে যায়। ২০ গ্রেডের যে মাছ ৮৩০-৮৪০ টাকায় বিক্রি করেছি, সেই মাছ বিক্রি করতে হয় ৫২০-৫৩০ টাকায়। মাছের মূল্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা। মাছ চাষে মাসে দেড় লাখ টাকা আয় ছিল। কিন্তু করোনাকালীন সেই আয় ৫০ হাজার টাকায় নেমেছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে ভালো লাভের আশায় প্রস্তুতি নিয়েছি। সেই অনুযায়ী ঘের প্রস্তুতও করছি।

একই এলাকার মৎস্য চাষি হৃদয় সিং বলেন, করোনার আগে মাছ চাষ মোটামুটি ভালো ছিল। করোনার পর একটু সমস্যা হয়েছে। গত কয়েক মাস লোকসান গেছে। নতুন বছরে ভেবেছিলাম পরিবর্তন হবে। তা আর হয়নি।

মৎস্য কর্মকর্তা, হিমায়িত চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও চাষিরা জানিয়েছেন, হিমায়িত চিংড়ি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরায় দেশের সবচেয়ে বেশি চিংড়ি চাষ হয়। ঘের মালিকরা চাষকৃত চিংড়ি আড়তগুলোতে সরবরাহ করেন। হিমায়িত চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় মৎস্য আড়তদারদের কাছ থেকে বাগদা অথবা গলদা চিংড়ি সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে রফতানি করে। কিন্তু করোনার কারণে চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আড়তগুলো থেকে চিংড়ি সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়। ফলে পাইকারি বাজারে মাছের দরপতন হয়। সেই প্রভাব পড়ে ঘের ব্যবসায়ীদের ওপর।

ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, চাষিদের রেণু বেশি দামে কিনতে হয়। আগে এক হাজার রেণু কিনতে হতো এক হাজার টাকায়। এখন সেটি তিন হাজার টাকায় কিনতে হয়। মাছ চাষের যে খাদ্য সেটিরও দাম বেড়েছে। অন্যদিকে মাছ বিক্রি করতে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। আগে যে মাছ বিক্রি হতো ১৬০০ কিংবা ১৮০০ টাকা। সেই মাছ এখন ৫০০-৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয়। এসব কারণে চিংড়ি চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে করোনার প্রভাব তো রয়েছেই। করোনার কারণে যেসব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ডুমুরিয়ার চার হাজার ১১৪ জন চাষিকে ছয়টি ক্যাটাগরিতে বাছাই করে ছয় কোটি ২২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাইদ বলেন, করোনার কারণে চিংড়ি চাষিরা সঠিক সময়ে মৎস্য আহরণ করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে চিংড়ি উৎপাদনের যে উপকরণ সামগ্রী, করোনাকালীন যে প্রতিবন্ধকতা ছিল; তার জন্য চাষিরা খাদ্য ঠিকমতো কিনতে পারেননি। সেই সময় শ্রমিক সংকট ছিল। যে কারণে অধিক শ্রম দিয়ে শ্রমিক নিতে হয়েছে। এসব কারণে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে যতটুকু ক্ষতি হয়েছে, সরকার সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে; কীভাবে সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া যায়।

খুলনা অঞ্চলের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক তৌফিক মাহমুদ বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে খুলনা অঞ্চল থেকে মাছ রফতানি হয়েছে ২৯ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। যার মূল্য দুই হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ২১ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন মাছ। যার মূল্য এক হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। করোনার মধ্যেই চলতি অর্থবছরের সাত মাসে রফতানি খুবই ভালো।

খুলনা অঞ্চলের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনা থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৬.৮২১ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় দুই হাজার ২৯০ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৯ হাজার ২০০.৭৮৮ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় দুই হাজার ৪৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০ হাজার ২১৭.০৭ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় দুই হাজার ৫৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৬৮৬.৭৪ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় দুই হাজার ৫৪২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৬৮৬.৭৪ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় দুই হাজার ৫৪২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩২ হাজার ৮০২.৮১ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় দুই হাজার ৭০০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৫৫১.৫৩ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় দুই হাজার ২৪৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪২ হাজার ৪৮৯.১০৩ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় দুই হাজার ৫৩৩ কোটি ৪ লাখ টাকা।

খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহা. মজিনুর রহমান বলেন, করোনার কারণে প্রথম দুই তিন মাস রফতানিতে ভাটা পড়ে। তবে পরবর্তীতে ফের রফতানি স্বাভাবিক হয়ে যায়। সামগ্রিকভাবে এখন রফতানি ভালো।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!