খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি গাড়িকে চাপা দেওয়ার ঘটনায় নিহত ১৪
  নরসিংদীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবক নিহত, আহত ৭
  নওগাঁয় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রী নিহত, শিশুসহ আহত ২
  গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে সিএনজিচালক নিহত

ডুমুরিয়ার ৫২ গ্রাম পানির নীচে, কাজে আসছে না সেচ পাম্প প্রকল্প

গাজী আব্দুল কুদ্দু , ডুমুরিয়া

১৯৬১-৬২ সালে খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা এবং যশোর জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হরি নদীর উপর দেওয়া হয় ২১ভেন্টের একটি স্লুইচ গেট। এর কিছু দুরে ৯ ভেন্টের আরেকটি স্লুইচ গেট স্থাপন করা হয়। সে সময়ে উদ্দেশ্য ছিল ভবদহ এলাকার অর্ধশত বিলের ফসলকে বন্যার পানি ও সাগরের নোনা পানিতে যাতে ফসলের ক্ষতি না হয়। কিন্তু মাত্র ২০ বছর পরে সেই স্লুইচ গেটই এখানকার মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ভরাট হতে থাকা হরি নদীর মাঝে আড়াআড়ি দেয়া স্লুইচ গেটটি। আস্তে আস্তে সেটি অকার্যকর হয়েও পড়ে। যা বর্তমানে ভবদহের দুঃখ বলে পরিচিতি পেয়েছে। আর একারণে বর্তমানে ৫২টি বিল জলাবদ্ধ হয়ে আছে। এই বিশাল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বিএডিসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যার সফলতা নিয়ে মানুষ সন্দিহান।

যশোর-খুলনার দুঃখ হিসেবে খ্যাত ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিএডিসি ও পাউবো যৌথ উদ্যোগে সেচ কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু মাসে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবদহ স্লুইচ গেট দিয়ে সেচ পাম্পে পানি নিস্কাশন কার্যক্রম সুফল বয়ে আনতে পারেনি। ভবদহ তৎসংলগ্ন বিলে ফসল ফলাতে ও পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ও বিএডিসি (বাংলাদেশ কষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) যৌথ উদ্যোগে চলতি বছরের শুরুতেই এ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীরা এ পদ্ধতিকে সাগরে ঢিল ফেলার সাথে তুলনা করেছেন। ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১২ সালে সরকার ৬৮কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু সেই প্রকল্প কোন কাজে আসেনি।

এছাড়া বছর দুয়েক আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে একটি প্রকল্প জমা দেয় যা বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৪৩কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

ভবদহ অঞ্চলের বিল কেদারিয়া পাড়ের বাসিন্দা সত্য বিশ্বাস বলেন, সেই ৮০সালের দিকে ভবদহে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আজ ৪০বছর ধরে চলছে। কিন্তু দিনের পর দিন এর বিস্তৃতি বাড়ছে। উপকার হচ্ছে প্রভাবশালীদের। তারা সরকারের বরাদ্দ আনছে আর লুট করছে।

হাটাগাছা গ্রামের গৃহবধূ অনামিকা বিশ্বাস বলেন, ঘরের চারপাশে জল। কিন্তু একটুও খাওয়ার উপযোগী নেই। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী ঘরেই থাকে। ঘরের নীচ দিয়ে মাছ চলে বেড়ায়। কিন্তু তা ধরে খাওয়ার কোন উপায় নেই। প্রভাবশালীরা সেখানে নেট পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছে।

বিএডিসির যশোরাঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সেচ বিভাগ) আব্দুল্লাহ আল রশিদ জানান, এ অঞ্চলের বিলে ফসল ফলাতে ও মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পাউবোকে বিএডিসি ৩০এইচপি (হর্স পাওয়ার) পাওয়ারের ২০টি পাম্প সরবরাহ করে। যা রক্ষণাবেক্ষণে বিএডিসির ৮ জন শ্রমিকসহ একজন উপ-প্রকৌশলী সেখানে সার্বক্ষণিক দেখভাল করে থাকেন।

পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, বিএডিসির কাছ থেকে ২০টি পাম্প পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় কম। তাই আরও বড় পাম্প নিতে ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ের ডিপিপি জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২বছর আগে প্রায় ৮শ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পড়ে আছে। সেটিরও অনুমোদন মেলেনি।

স্থানীয় সংসদ সদস্য (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির সেচ প্রকল্প কতটা সফল এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে হরি নদী খননসহ এর শাখা প্রশাখা খননের কোন বিকল্প নেই। ভবদহের জল হরি নদী দিয়ে ভদ্রা, ঘ্যাংরাইল হয়ে শিপসা নদীতে পড়ে সাগরে মিশে আছে। তাই ভবদহের মধ্যে খালের মুখের বাঁধ অপসারণ করতে হবে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!