খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫
  গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২

‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে হেলমেটধারীরা হামলা চালায় : প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহানগর যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে হেলমেট পরিহিত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়ে ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মীসভা পণ্ড করেছে। খুলনায় বিএনপির একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনস্রোত দেখে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আতংকিত হয়ে ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নগর বিএনপি নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিং থেকে এ অভিযোগ করেন তারা। আগের দিন রাতে বায়তুন নুর মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মীসভায় শাসক দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডারদের বর্বরোচিত হামলা, সভা পণ্ড ও চেয়ার টেবিল ভাংচুর-তান্ডব, শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করা, হামলা থেকে নারী নেত্রীদের রেহাই না দেয়া এবং অন্তত অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে নগর বিএনপি এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।

বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে সোনাডাঙ্গা থানার ওসির দেওয়া বক্তব্য কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতারা বলেন, তিনি রাজনৈতিক নেতার মতো বক্তব্য দিয়েছেন। সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মতো কথা বলেননি। ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তিনি (ওসি) যখন সেফ এন সেভের সামনে একসাথে অবস্থান করছিলেন, সে সময় তাদের সামনে দিয়ে শাসক দলীয় ক্যাডাররা মিছিল নিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মীসভায় হামলা চালায়। সভাস্থলে যে সব পুলিশ সদস্য দায়িত্বরত ছিলেন, তারা শুরুতে হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্ত তাদের সহিংস, মারমুখি আচরণ এবং হিংস্রতার সামনে এক সময় পুলিশ অসহায় হয়ে পড়ে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তৃতা করেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন।

বিএনপি নেতারা বলেন, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে অনেক কর্মসূচি লাখো জনতার উপস্থিতিতে সফল ভাবে পালিত হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটি গঠনের লক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মীসভা হাতে নেয়া হয়েছে। ৩১টি ওয়ার্ড ও থানায় কর্মসূচির দিন তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তালিকা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি সংগঠনকে শক্তিশালী কাঠামো ওপর দাঁড় করাতে এসব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছে। দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। কিন্ত সেখানে কোন দ্বন্দ সংঘাতের অবকাশ নেই।

নেতারা অভিযোগ করেন, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে দেখে আওয়ামী লীগ আতংকগ্রস্ত। কোথাও পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে, আবার কখনো পুলিশ-আওয়ামী লীগ সংঘবদ্ধ হয়ে বিএনপির ওপর হামলা চালাচ্ছে। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের উপস্থিতিতে গত ২৬ মে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পুলিশ ও শাসক দলীয় সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলায় পণ্ড হয়ে যায়। এর আগে গত ৫ জানুয়ারি বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচির সূচনাকালে পুলিশ এসে বেধড়ক লাঠিচার্জ করলে নগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম গুরুতর জখম হন। তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। অপরটিও নষ্ট হওয়ার পথে। তারও আগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আর একটি মানববন্ধন কর্মসূচিতে পেটোয়া পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৩১নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা বাবুল কাজী।

বিএনপি নেতারা বলেন, দল যাতে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী হতে না পারে সে চেষ্টার অংশ হিসেবে নগর বিএনপির অন্যতম যুগ্ম আহবায়ক শেখ সাদীকে বিনা অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতারের পর ২০১৪ সালের একটি পেন্ডিং মামলায় আদালতে সোপর্দ করে। অনেককে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। কিন্ত বিএনপি কর্মীদের নিবৃত করতে না পেরে এবার সরাসরি হামলা চালানো হলো। নগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সুজনের নেতৃত্বে হেলমেটবাহিনী শুধু কর্মীসভাস্থলেই হামলা চালায়নি। হামলায় আহতরা যখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গেছেন, সেখানেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা তল্লাশি চালিয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে বেডে বেডে খোঁজ নেওয়া হয়েছে, বিএনপির কোন কর্মী সেখানে ভর্তি আছেন কিনা।

প্রেস ব্রিফিং থেকে গুরুতর আহত কর্মীদের একটি তালিকা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন মোল্লা ফরিদ আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, কামরুজ্জামান সবুজ, টুটুল, মো: আবু সাঈদ হাওলাদার, মনিরুজ্জামান কাজল, সাবেক কাউন্সিলর হাসনা হেনা, কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান মনি, বদরুল আনাম খান, মিজানুর রহমান মিজান, জি এম বাবুল, সৈয়দ তানভির, শফিকুল ইসলাম শফি, ইলিয়াস মোল্লা, সোনিয়া খান, রুবিনা খাতুন, আল আমিন, নজরুল ইসলাম বাবু, বাদশা। এদের মধ্যে শ্রমিক দল নেতা ইলিয়াসের পায়ের রগ কেটে গেছে। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কালামের গ্যারেজ ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

এ ঘটনায় বিএনপি আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আদালতে মামলা করবে বলে জানানো হয়।
এদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, আজ (১৮ আগষ্ট) বিকেল ৪টায় রায়েরমহলে ১৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মীসভা হওয়ার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ একই সময় একই স্থানে সমাবেশ আহবান করায় পুলিশ সেখানে সব ধরনের সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে ওই কর্মী সভা বিকেলে কে ডি ঘোষ রোডে বিএনপি অফিসে অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে শুক্রবার (১৯ আগষ্ট) বিকেলে যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীসভায়ও পুলিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিএনপি নেতারা এসব নিষেধাজ্ঞা জারির তিব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

প্রেস ব্রিফিং-এ উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আমির এজাজ খান, সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবুসহ প্রমুখ।

খুলনা গেজেট/এমএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!