খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চাঁদপুরের হবিগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে মা ও শিশুর মৃত্যু
  নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সম্পাদককে দল থেকে অব্যাহতি

খুলনা বিভাগে এক মাসে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে চারগুণ

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে যে হিসাব দেয়, তাতে দেখা যাচ্ছে খুলনা অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরেই টানা রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চলেছে। সেই সাথে বাড়তি রোগীর চাপ সেবা দিতে হাসপাতালগুলো রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে।

এ অবস্থায় খুলনা বিভাগের সবগুলো জেলায় লকডাউন বা বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। যদিও বাংলাদেশে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী একটি লকডাউন চলছে।

প্রতিটি জেলাতেই হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেছেন, রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু তার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও লোকবল বাড়ছে না। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে তাদের।

তিনি বলেন, “যেহেতু রোগী বেড়েছে, জায়গা সংকুলান করতে আমাদের ফ্লোরে বেড দিতে হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের ডাক্তার নাই পর্যাপ্ত, কিন্তু নার্স আছে।”

“আবার ওয়ার্ডবয় ও ক্লিনার নাই যত দরকার। আবার ডিউটি শেষ করে যখন ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে যায়, তখন কিন্তু ডাবল ম্যান-পাওয়ার দরকার হচ্ছে আমাদের।” তিনি জানিয়েছেন, এই মূহুর্তে জটিল অবস্থায় থাকা রোগীদের সিলিন্ডারের অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের লাইন বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী খুলনা বিভাগের কোন জেলাতেই এখন সংক্রমণের হার ৩৫ শতাংশের নিচে নয়, কোথাও সেটি শতভাগ, যেমন চুয়াডাঙ্গা। বৃহস্পতিবারের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪১ জন মানুষের নমুনা পরীক্ষা করে ৪১ জনেরই কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে। একদনি আগেও ২৪ ঘণ্টায় ওই জেলায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণের হার ছিল ৯০ শতাংশের বেশি।

এদিকে, কেবল জুন মাসের ২৪ দিনে খুলনা বিভাগে সংক্রমণের সংখ্যা মে মাসের তুলনায় চারগুণের বেশি বেড়েছে। মে মাসে খুলনা বিভাগে তিন হাজারের বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন, মারা গিয়েছিলেন ৭৩ জন। কিন্তু জুন মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ওই বিভাগে সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হন, এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ২৭১ জন।

সাতক্ষীরায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে তিন সপ্তাহের লকডাউন শেষ হবে আজ মধ্যরাতে। কিন্তু সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে জেলায় সংক্রমণ কমার এখনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে পারছেন না অনেকে।

সাতক্ষীরা শহরের তানভীর হোসাইন সুজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবার পর এক পর্যায়ে চিকিৎসকের পরামর্শে তার হাসপাতালে ভর্তি হবার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু দুইদিন ধরে কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরে শেষ পর্যন্ত এক হাসপাতালে চিকিৎসকের চেম্বারে ভর্তি করা হয় তাকে।

তিনি বলছিলেন, “আমার জ্বর কমছিল না, তখন চিকিৎসক পরামর্শ দেন হাসপাতালে ভর্তি হতে। কিন্তু একের পর এক হাসপাতালে যাই, কোথাও সিট নাই। সরকারি বেসরকারি কোন হাসপাতালে সিট পাইনি। এরপর সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে স্যালাইন এবং ইনজেকশন দেয়।” “পরে সেখানকার একজন ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে ভর্তি করে আমাকে।” সেখানেও রোগীর এমন চাপ যে জরুরী অবস্থা কিছুটা সামলে ওঠার পরই মি. হোসাইনকে রিলিজ করে যখন বাড়ি পাঠানো হয়, তিনি তখনো করোনাভাইরাস মুক্ত হননি।

এই বিভাগের অন্যান্য জেলা যেমন বাগেরহাট, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা বা কুষ্টিয়ার ক্ষেত্রে রোগীর সংখ্যা বাড়লে বা রোগীর অবস্থা জটিল হলে তাদের খুলনা বা যশোরে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। এ কারণেও সেখানকার হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

সংক্রমণের এমন অবস্থায় খুলনা বিভাগের যেসব জেলায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল না, সেখানেও বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউন বা চলাচলে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। যদিও আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী একটি লকডাউন জারি রয়েছে।

খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেছেন, “পরিস্থিতি অনুযায়ী একেক জেলায় একেক রকমভাবে বিধিনিষেধ বা লকডাউন দেয়া ছিল। কোথাও পুরো জেলা, কোথাও উপজেলা বা পৌরসভায় ভিন্ন ভিন্নভাবে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এটি আরোপ করা ছিল।”

এক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটার পরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে অনীহা রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, লকডাউনের নিয়ম ভেঙ্গে চুয়াডাঙ্গা শহরের রাস্তায় বের হবার জন্য বুধবার একদিনে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫২টি মামলা দায়ের এবং প্রায় সাড়ে ৭৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

বিভাগীয় কমিশনার মি. হোসেন বলেছেন, এবারে যাতে লোকজন বিধিনিষেধ মেনে চলে সেজন্য প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের মাঠে নামানো হচ্ছে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, খুলনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি মনিটরিং করছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলছেন, পরিস্থিতি বুঝে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখন লকডাউনের বাইরে আর কোন বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে না সরকার। সূত্র : বিবিসি বাংলা।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!