খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  আপিল বিভাগে ৩ বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি; গেজেট শিগগিরই

খুলনায় বাড়ছে করোনার আরও ১১৫ শয্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা অঞ্চলে সংক্রমণ ঊর্দ্ধমুখী হওয়ায় করোনা হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। করোনা হাসপাতালে ধারণক্ষমতার বাইরে রোগী ভর্তি হচ্ছে। ফলে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। রোগীর চাপ সামলাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। তবুও রোগীর সংখ্যা বেশিই থাকছে। ফলে খুলনা খুলনার আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫ শয্যার করোনার নতুন ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালিত ১৩০ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। এখানেও বাড়ছে ৭০ শয্যা। সবমিলিয়ে খুলনার দু’টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বাড়ছে আরও ১১৫ শয্যা। সবঠিক থাকলে আগামীকাল শনিবার থেকে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে তৃতীয় এ করোনা ইউনিটটি চালু হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যবিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত ২৯ জুনের এক পত্রের আলোকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালুর নির্দেশ দেয়া হয়। ওই নির্দেশের আলোকে বুধবার সকালে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে সকল বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: এস,এম, মোর্শেদ সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাসপাতালের উত্তর পাশের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন প্লাষ্টিক এন্ড বার্ণ ইউনিটের ২০টি এবং ফিজিক্যাল মেডিসিনি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগে ১৫টি বেড স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। ওই ৩৫টি বেড ছাড়াও চতুর্থ তলার আইসিইউ বিভাগের ১০টি বেডও করোনার রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়। তবে সেখানে বৃহস্পতিবার দু’জন রোগী থাকায় একজনের অবস্থা ভালো থাকায় তাকে নিউরোলজী বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। অপর রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন থাকায় তাকে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে যদি তিনি অন্য কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে না যেতে পারেন সে ক্ষেত্রে তার আত্মীয়-স্বজন চাইলে করোনা রোগীদের পাশাপাশি তাকেও সেখানে রাখা যেতে পারে বলেও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানিয়েছেন।

ওই রোগী সম্পর্কে অপর একটি সূত্র জানায়, আবু নাসের হাসপাতালে নেয়ার আগে তাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন চিকিৎসকের চাচা এবং সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মালিক পক্ষীয় একজনের বন্ধু। কিন্তু খরচ বাঁচাতে তাকে সিটি মেডিকেল থেকে সম্প্রতি আবু নাসেরের আইসিইউতে নেয়া হয়। অথচ সেখানেও এখন করোনা রোগী ভর্তি করার ফলে অন্য রোগীদের রাখা যাচ্ছে না।

আবু নাসের হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রস্তুতি সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: এস, এম, মোর্শেদ জানান, শনিবার থেকেই করোনা পজেটিভ রোগীদেরই শুধু এখানে ভর্তি করা হবে। যেহেতু আগে থেকেই প্রতিটি বেডের সাথে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন টানা ছিল সেহেতু এখন সেখানে শুধুমাত্র বেডগুলো বসিয়েই রোগী রাখার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আইসিইউ’র ১০টিসহ মোট ৪৫টি বেডে রোগী ভর্তি করা হবে।

আপাতত যে জনবল আছে তা দিয়েই যাত্রা শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে আরও কিছু জনবল চেয়ে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র দেয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় ২০জন ডাক্তার, ৫০জন নার্স এবং ৫০জন আউটসোর্সিং কর্মচারী চাওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এ জনবল না দেয়া হলে করোনা ইউনিট চালিয়ে রাখা অসম্ভব হতে পারে বলেও তিনি আশংকা করেন।

হাসপাতালের অপর একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে সেখানে কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজিসহ অন্যান্য বিভাগে ১৩০ জনের মতো রোগী ভর্তি আছেন। তবে এর মধ্যে কারও আইসিইউর প্রয়োজন হলে তাকে ওই হাসপাতালে স্থান দেয়া সম্ভব হবে না।

এ ক্ষেত্রে খুলনায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে আর কোন রোগীকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে না উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মূমূর্ষ রোগীদের জন্য একমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোষ্ট অপারেটিভের মধ্যে থাকা চারটি আইসিইউ বেড ছাড়া খুলনায় আর কোন সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা থাকলো না। অর্থাৎ এখন থেকে আবারো বেসরকারি হাসপাতালের গলাকাটা মূল্যে মূমূর্ষ রোগীদের রাখতে বাধ্য হতে হবে। কিন্তু যাদের সে সঙ্গতি নেই তাদের জন্য সেবার দুয়ার অনেকটা বন্ধের পথে।

শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) এবং করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, শনিবার থেকে যাতে করোনা রোগী ভর্তি করা যায় সেজন্য চেষ্টা চলছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আজ শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে সংশ্লিষ্টদের হাসপাতালে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেটুকু কাজ বাকী রয়েছে তা আজকের মধ্যে শেষ হবে বলেও তিনি আশা করছেন।
করোনা ইউনিটে শুধুমাত্র পজেটিভ হয়েছে এমন রোগীদের ভর্তি করা হবে। এজন্য ইউনিটটি সম্পূর্ণ আলাদা থাকবে। নিচ তলা থেকে রোগীদের চতুর্থ তলার আইসিইউতে নেয়ার জন্যও ব্যবহার করা হবে পৃথক লিফট।

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন(বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ(স্বাচিপ) খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, গতকাল তিনি শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন। করোনা ইউনিটের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর নেন। সর্বশেষ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও অন্যান্যদের সাথে বৈঠক করেন।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় আগামী শনিবার থেকে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ শয্যাসহ মোট ৪৫ শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। করোনা হাসপাতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও ৭০টি শয্যা। এতে করে রোগীদের আরও ভালোভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!