খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  ঢাকা শিশু হাসপাতালে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট
  রাজধানীর খিলগাঁওয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  জাতীয় পতাকার নকশাকার, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনতে অবদান রাখছে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’

তরিকুল ইসলাম

খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষিজমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে ও পরিবারে নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা পূরণে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’। কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের সহযোগীতায় ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় জেলার ৯ উপজেলায় দুটি ধাপে তৈরি করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক বাগান। ইতিমধ্যে কালিকাপুর মডেলের এসব বাগান থেকে শাঁকসবজি আহরণ শুরু করেছেন চাষীরা। উৎপাদিত সবজি দিয়ে তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে আয়ও করছেন।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি উপজেলায় বাছাইকৃত তালিকাভূক্ত পরিবার থেকে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে প্রথমে দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় দেড় শতক জমিতে নান্দনিক বেড়া দিয়ে কালিকাপুর মডেলে পুষ্টি বাগানের প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়। বাগানের মডেল এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন একজন কৃষক সারা বছরই এখান থেকে কিছু না কিছু পান। কখনো সবজি থাকবে, আবার কখনো থাকবে ফল। বীজ, সার, চারাসহ যাবতীয় ব্যয় সরকারের তরফ থেকে বহন করা হচ্ছে । কৃষাণ-কৃষাণী শুধু পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করছেন। কৃষি বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একশ’ পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হবে। দুটি ধাপে পাঁচশতাধিক বাগান তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিটি বাগানে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ৫টি ও দুই মাথায় দুটি বেড রয়েছে। এছাড়া দুই পাশে মাচা রয়েছে। বেডে লাগানো হচ্ছে শাক-সবজি-মসলা ও মাচায় লাউ-সিম-শসা-বরবটি-ঝিঙা। তাছাড়া দুই মাথায় ৩টি করে ৬টি বিভিন্ন ফল ও মসলা(চুইঝাল) চারা রোপন করা হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রতিটি বাগানে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ৫টি ও দুই মাথায় দুটি বেড রয়েছে। এছাড়া দুই পাশে মাচা রয়েছে। বেডে লাগানো হচ্ছে শাক-সবজি ও মাচায় লাউ-কুমডা-সিম-বরবটি-ঝিঙা। তাছাড়া দুই মাথায় ৩টি করে ৬টি ফল ও মসল্লার চারা রোপন করা হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও ফলের চারা বাগানের বাইরে অন্যত্র লাগাতে দেখা গেছে। শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে লাল শাক, গীমা কলমি, পুঁইশাক, ডাটা শাক, ধনিয়া, কাঁচা মরিচ, মূলা প্রভূতি। ফলদ ও মসলা উৎপাদনে মালতা, থাই পেয়ারা, কদবেল, ছফেদা, চুইঝাল, বাতাবী লেবু প্রভূতির চারা লাগানো হয়েছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সরেজমিন খোঁজ–খবর নিচ্ছেন। প্রতিটি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রোগ ও পোকা থেকে রক্ষা করতে পরামর্শ দিয়ে ও সরেজমিন খোঁজ নিয়ে সার্বিক সহায়তা করছেন।

কয়রা উপজেলার বাঁশখালী গ্রামে বাগান পরিচর্যা করছেন এক কৃষক

রূপসা উপজেলার জাবুসার সুবিধাভোগী কৃষক মনোজ শিকদার জানান, বর্ষাকালীন সবজি তোলা হয়েছে। সন্তোষজনক উৎপাদন হয়েছে। প্রতিমাসে তিনি তার ৫ সদস্যের পরিবারের ১৫/২০ দিনের সবজির চাহিদা এখান থেকে মেটাতে পারছেন। এছাড়া মাঝেমধ্যে কিছু বিক্রি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস কিনছেন । তবে পেয়ারা গাছ মারা গেছে।

রূপসার অন্য এক সুবিধাভোগী মোঃ অহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ির আঙিনায় কৃষি অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সবজি চাষ করেছি। বেশ কিছুদিন ধরে বাজার থেকে আমাকে শাক-সবজি কিনতে হয় না।

কয়রা উপজেলার বাঁশখালী গ্রামের কৃষক রাজ কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় কিছুদিন আগে বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করেছি। আশা করছি নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কিছু বিক্রি করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, এর আগেও আমরা তরিতরকারী লাগাতাম তবে সেটা এতো উন্নতভাবে নয়।

কয়রার বাগালী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাফজুর রহমান বলেন, দেড় শতক জমিতে সাতটা বেড ও মাচা তৈরি করে বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে একটু দেরিতে বাগান তৈরি করায় এখনও অধিকাংশ ফসল তোলার উপযুক্ত হয়নি।

কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, উন্নতমানের বীজ, ফল ও মশলার চারা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সার এবং বেড়া বাবদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এ উপজেলায় ২৭টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে।

রূপসা উপজেলার একটি বাগান তদারকি করছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা

রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’ সে অনুযায়ী আমরা পারিবারিক সবজি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বসতবাড়ির আঙিনায় অনাবাদি ও পতিত জমিতে প্রকল্পের সহযোগিতায় উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সবজি, মশলা ও ফল উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এ উপজেলায় জুন মাসে প্রকল্প শুরু হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ২৮টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নে একশ’ বাগান স্থাপন করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল একটি প্রকল্প। পতিত জমির স্বদব্যবহারের মাধ্যমে চার সদস্যের একটি পরিবারের সবজির অর্ধেক চাহিদা নিশ্চিত করতে পারে এমন ব্যবস্থা এখানে রাখা হয়েছে। পরিবারের মহিলা কাজের ফাঁকে যাতে পরিচর্যা করতে পারে সেজন্য তাদেরকেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৪৩৮ কোটি টাকার ‘অনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’প্রকল্পটি চলতি বছরের মার্চে একনেকে অনুমোদিত হয়। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাংলাদেশের সব উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!