খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর সদরঘাটের শ্যামবাজারঘাটে লঞ্চে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
  বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব
  নাটোরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে এক ট্রাক ড্রাইভার নিহত

কয়রায় ঘর ভাঙচুর ক‌রে জ‌মি দখ‌লের চেষ্টা, রক্তক্ষয়ী সংঘ‌র্ষের শঙ্কা

তরিকুল ইসলাম

খুলনার কয়রায় মহারাজপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামে পেশীশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিরোধকৃত জমি প্রতিপক্ষ দখলের চেষ্টায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে দুই পক্ষের মধ্যে বড় ধরণের সংঘর্ষের শঙ্কা রয়েছে বলে এলাকাবাসি জানায়। একপক্ষ দোকান চালুর চেষ্টা করলে অপর পক্ষ জানালা-দরজা ভেঙে দেয়। ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পরেও কোন পক্ষের লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় রয়েছে নিরব।

সরেজমিন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে ও মামলা সূত্রে জানা যায়, শিমলার আইট গ্রামের লোকমান মালী গং মহারাজপুর ইউনিয়নস্থ জয়পুর মৌজার (খতিয়ান নম্বর-১৩২, দাগ নং- ৩৬৪, ৩৭৯, ৩৮৪) এর প্রায় তিন বিঘা সম্পত্তি দীর্ঘ ৪০/৫০ বছর সময় ধরে ভোগদখল করে আসছে। ৯ থেকে ১০ বছর পূর্বে লোকমান মালীর ছেলে জিয়াউর রহমান জমির একটি অংশে বসবাস করার উদ্দেশ্যে বালি ভরাট করে, ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন ও সামনে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি সেমিপাঁকা ঘর তৈরি করেন। ঘরে জিয়া চা-পান বিক্রিসহ অন্যান্য ব্যবসা করে আসছিলেন এবং বাকী জমিতে ঘের (চিংড়ি চাষ) করেন।

এরই মধ্যে জমির দাবি তোলা অপরপক্ষ জয়পুরের সিদ্দিক মালী গং জমি নিয়ে কয়রা সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন ও অন্য একটি চলমান মামলায় পক্ষযুক্ত হন। মামলা নং ১৭/১৬, ৩৯/১৯ ও ৪০/১৯। বছর খানেক পূর্বে আকস্মিক জিয়ার ব্যবসা চলমান থাকা অবস্থায় ওই জায়গা দখলে নেওয়ার জন্য ছোট একটি ঘর তৈরির উদ্দেশ্যে আংশিক কাজ সম্পন্ন করেন সিদ্দিক মালী গং। তবে সম্পূর্ণ ঘর তৈরির আগেই সেটা গুড়িয়ে দেয়া হয়।

এদিকে, পেশিশক্তি দিয়ে জমি দখল করতে পারে এই শঙ্কায় কয়রা থানায় জিডি করেন জিয়াউর রহমান। পরে ১৬ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে সিদ্দিক মালী গংদের বেশ কয়েকজন আকস্মিকভাবে দোকানের তালা ভেঙে দখলে নেয় এবং দোকানের সরঞ্জমাদিসহ পণ্য নষ্ট করে। সংবাদ পেয়ে কয়রা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং দোকান থেকে সিদ্দিক মালী গংদের বের করে তালা দিয়ে রাখেন। এসময় চাবি স্থানীয় ইউপি মেম্বার শাহাদাত হোসেনের কাছে জমা রাখেন।

এ ঘটনায় দোকান লুটের অভিযোগে শাহ আলম মালী, সিদ্দিক মালী, শহিদুল ইসলাম মালী, ইউসুফ মালীসহ ১১ জনের নামে আদালতে মামলা করেন জিয়া। মামলা নং- ০৪/২০২১, তারিখ-২৪/০২/২০২১ ইং। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয় এবং পিবিআই ৩১ মার্চ আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধের স্বপক্ষে স্বাক্ষ্য প্রমাণ যুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে। মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে চলমান রয়েছে।

এরই মধ্যে প্রতিপক্ষের কয়েকজন মিলে জিয়ার মাছের ঘেরের রাস্তা কেটে দেয়। এমতাবস্থায় ২৭ সেপ্টেম্বর জিয়াসহ কয়েকজন দলবদ্ধ হয়ে পুনরায় তালা খুলে দোকান চালু ও ঘেরের রাস্তা মেরামত করেন। পরের দিন সকালে শাহ আলমরা সংঘবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। এ সময় সরঞ্জমাদিসহ দোকানের দরজা, জানালা, বিদ্যুতের লাইন ও চাল নষ্ট হয়। এ ঘটনার পরে ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে কয়রা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে এলাকাবাসি জানায়।

এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ায় মৌখিকভাবে পিবিআই থেকে আমাকে দোকান চালু করার কথা বলেছিল। শাহাদাত মেম্বারকেও বলে দিয়েছিল। তবে মেম্বার চাবি না দেওয়ায় তালা খুলে পুনরায় দোকান চালু করি।

প্রতিপক্ষের ইউসুফ মালী বলেন,‘ জায়গাটা আমাদের। প্রতিপক্ষ ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী থাকায় দীর্ঘদিন দখলে রেখেছে। তাছাড়া আমরা দাবি তুললে তারা বলতো তোমাদের বাপ-দাদা আমাদের কাছে বিক্রি করে গেছে। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি ১৯৮৯ সালের মাঠ জরিপে আমাদের পক্ষে রেকর্ড রয়েছে এবং আমাদের কেউ ওই জমি তাদের কাছে বিক্রি করেননি। এ নিয়ে আদালতে মামলা চালাচ্ছি।’

ঘর ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য থানা থেকে দোকানটি তালা দিয়ে রাখে। কিন্তু জিয়া সেই তালা ভেঙে ঘরে নতুন তালা মারে। এজন্য আমরা পরের দিন সেই তালা ভেঙে দিয়েছি। আমরা কোন মালামাল নষ্ট করেনি। আর ঘেরের রাস্তা কাটার বিষয়ে বলেন, আমাদের নিজেদের ঘেরের মাঝ থেকে তারা জোর করে রাস্তা দেয়। এজন্য ওই রাস্তা কেটে আমাদের ঘেরের সাথে মিশিয়ে দেই।’

ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন আগে অচেনা নম্বর থেকে আমাকে ফোন দিয়ে জিয়ার কাছে চাবি দেওয়ার কথা বলে। তখন আমি পুলিশের কাছে জমা দিই। পুলিশ নিয়ে পুনরায় আবার চাবি ফেরত দেয়। চাবি আমার কাছে রয়েছে।

এ ব্যাপারে কয়রা থানা পুলিশের এস আই শাহজাহান বলেন, ‘জায়গা জমির বিরোধের জের ধরে একটি চায়ের দোকান ভাঙচুরের সত্যতা পেয়েছি।’

কয়রা থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ রবিউল হোসেন বলেন, ‘৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠানো হয়। জমি সংক্রান্ত বিরোধে দোকান ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!