খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৬
  কিশোরগঞ্জে বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
  জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো : প্রধানমন্ত্রী
মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে, দাবি বাদী পরিবারের

কয়রার ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যে আর কারা? (ভিডিও)

তরিকুল ইসলাম

কয়রার ট্রিপল মার্ডার ঘটনার রহস্য সম্প্রতি উদঘাটন করেছে পুলিশ। আদালতে ২ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তবে মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বলে দাবি বাদী পরিবারের। তারা বলছেন, পলাতক থাকাবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুর রশিদ ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত ব্যক্তিদের তথ্য গোপন করে বিভ্রান্তিকর মিথ্যা তথ্য দিয়ে মূল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে আব্দুর রশিদকে রিমান্ডে নিয়ে পুনরায় জবানবন্দী রেকর্ড ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ডের দাবি বাদী পরিবারের।

রশিদ আসল খুনির নাম বলেনি। খুনিরা মোটা দাগের টাকা দিয়ে তাকে ছাড়াবে। রশিদের রিমান্ডে নিয়ে ভালোভাবে চাপ দিলে সত্য বেরিয়ে আসবে। রশিদ যদি আসল খুনির নাম কয়, পিন ব্যবসার তথ্য বের হয়ে আসবে।

নিহত হাবিবুরের শ্বাশুড়ি ও বিউটি বেগমের মা কুলসুম খানম বলেন, “রশিদ আসল খুনির নাম বলেনি। খুনিরা মোটা দাগের টাকা দিয়ে তাকে ছাড়াবে। ডিবি পারবো না, এ কেস ডিবি পারবো না, ডিবি রশিদের কোন চাপ দিতাছে না। রশিদ আসল খুনির নাম কয়তাছে না। রশিদের রিমান্ডে নিয়ে ভালোভাবে চাপ দিলে সত্য বেরিয়ে আসবে। রশিদ যদি আসল খুনির নাম কয়, পিন ব্যবসার তথ্য বের হয়ে আসবে।” তিনি জানান, তার জামাই-মেয়ে অপরাধী হলেও শিশু নাতনী কোন অপরাধ করেনি। হত্যাকারীদের ফাঁসি চান তিনি।

শাকিল ও বাবু নামের দু’জনের সাথে ফোনে পিন নিয়ে কথা বলতে শুনেছি। পিন বেচা-কেনায় কোন ঝামেলা থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

নিহত বিউটি বেগমের বোন সীমা বলেন, আমি ২ মাস বোনের বাড়িতে ছিলাম। দুলাভাইকে অবৈধ ব্যবসা নিয়ে কথা বলতে দেখেছি। ঘটনার কিছুদিন আগে থেকে ভালো পথে ফিরে আসার চেষ্টা করছিল। নামাজ পড়া ধরেছিল, মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে প্রতিশ্রুতি করেছিল। দুলাভাইকে শাকিল ও বাবু নামের দু’জনের সাথে ফোনে পিন নিয়ে কথা বলতে শুনেছি। পিন বেচা-কেনায় কোন ঝামেলা থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনিও রশিদকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ ও হত্যাকান্ডের সুবিচারের দাবি জানান।

হাবিবুরের মেঝ ভাই জিএম মফিজুল ইসলাম বলেন, “খুনিদের মৃত্যুদন্ড চাই। রশিদের স্বীকারোক্তি আমাদের মনোপুত হয়নি। রশিদ ও আমার ভাই যাদের সাথে চলাচল করতো তাদের কাউকে আটক করতে দেখছিনা। এজন্য সন্দেহ হচ্ছে, মূল আসামী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।’’ রশিদকে রিমান্ডে এনে আরও গভীরভাবে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের ধরার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

হাবিবুরের মেঝ ভাইয়ের স্ত্রী সোনিয়া খানম বলেন, “রাজিয়া ও জিয়ার সাথে শত্রুতা থাকলেও গ্রামের অন্য কারো সাথে তেমন শত্রুতা ছিল না। রশিদ আটকের পরে যে বয়ান দিয়েছে সেটা মেনে নিতে পারছি না। তিনজনে মিলে শিশু মেয়েকে ধর্ষণ করলে নিশ্চয় কোন না কোন চিহ্ন থাকবে। তাছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও ধর্ষণের কথা উল্লেখ নেই। মূল আসামীদের আড়াল করতে সাজানো বয়ান দিয়েছে রশিদ। মূল আসামী ধরা না পড়লে আমাদের যে মারবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই।”

মামলার বাদী ও হাবিবুরের মা কোহিনুর বেগম জানান, আমার ছেলে, ছেলে বউ ও নাতনী হত্যার সঠিক বিচার চাই। রশিদের ফাঁসি চাই। তাছাড়া রশিদকে রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত খুনিদের খুঁেজ বের করে ন্যায় বিচারের অনুরোধ জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ অক্টোবর সকালে পুলিশ বামিয়া গ্রামের হাবিবুল্লাহর বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওইদিন হাবিবুল্লাহর মা কোহিনুর বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তদের আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে কয়রা থানা পুলিশ ও বর্তমানে ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। নৃশংসভাবে হত্যার নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।

গত ১০ জানুয়ারি খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুুপার মোহাম্মাদ মাহবুব হাসান বলেন, বিকৃত যৌন লালসা, প্রতারণামূলক আর্থিক লেনদেন ও পরকীয়া সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে দলবদ্ধভাবে হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হতে পারে বলে আমার তথ্য পেয়েছি। হত্যাকান্ডে কমপক্ষে ছয়জন সরাসরি অংশ নেয়।

পুলিশ সুপার বলেন, ট্রিপল মার্ডারের অন্যতম আসামি আব্দুর রশিদ গাজী। সে খুব চতুর। হত্যাকান্ডের পর থেকে সে পলাতক ছিলো। টিম ওয়ার্ক ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে গত ৮ জানুয়ারি যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলা থেকে আটক করা হয়। হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আদালতে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার বলেন, তক্ষক সাপ ও সীমানা পিলার বিক্রি সংক্রান্ত টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল কিনা সে বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে সবকিছু বিস্তারিত জানানো হবে। শিগগিরই এ মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

এর আগে রশিদ গাজীর জবানবন্দি অনুযায়ী আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মো. সাইফুল ইসলাম বাবলু, আল আমিন হোসেন, আসলাম সরদার, আবদুল ওহাব ওরফে হক, তাসলিমা, শামীমুল ইসলাম অঞ্জন ও মোস্তফা কামাল। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছয়জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

ঘটনার পর থেকে রশিদ গাজী পলাতক ছিলেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রশিদ গাজী স্বীকার করেছেন যে, একই গ্রামের মো. জিয়াউর রহমান ও রাজিয়া সুলতানার পরকীয়া প্রেমে হাবিবুল্লাহ বাধা দেন। সে কারণে জিয়াউর ক্ষিপ্ত হন। জিয়াউর ও সামছুরের নেতৃত্বে গত ২৫ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা ওই বাড়িতে গিয়ে হাবিবুল্লাহ, তার স্ত্রী ও মেয়ের হাত-পা বাঁধে। এরপর মা-মেয়েকে ধর্ষণের পর তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

এছাড়া গত ১৫ জানুয়ারী সাইফুল্লাহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনা জেলা ডিবি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল কুমার দত্ত খুলনা গেজেটকে জানান।

তাছাড়া গত বছরের ২৮ অক্টোবর চার জনকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তবে রিমান্ডে তেমন কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। তারা হলেন, বামিয়া গ্রামের মৃত কওছার গাজীর ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া (৪১), কুদ্দুস গাজীর স্ত্রী সুলতানা (৩৮) ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ভাগবা গ্রামের মৃত্যু মোকছেদ আলী সরদারের ছেলে আঃ খালেক (৬৫)।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!