খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাঙ্গামাটির সাজেকের উদয়পুর সড়কে ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
  চাঁদপুরের হবিগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে মা ও শিশুর মৃত্যু
  নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সম্পাদককে দল থেকে অব্যাহতি

কেশবপুরে ভুয়া ওয়ারেন্টে কলেজ ছাত্রসহ দু’জনের হাজতবাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নামে জারিকৃত ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তিন দিন হাজতবাস করেছেন কেশবপুরের গোবিন্দ দাস নামে এক দিনমজুর। তিনি উপজেলার মজিদপুর গ্রামের দুলাল দাসের ছেলে। এর পাঁচ মাস আগে একইভাবে হাজতবাসের শিকার হয়েছেন তারই প্রতিবেশী কলেজের এক শিক্ষার্থী। পরে আদালতে ওই পরোয়ানা ভুয়া প্রমাণিত হলে যশোর কারাগার থেকে তারা মুক্তি পেয়েছেন। একই স্টাইলে পরপর দু’জনের হাজতবাসের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গোবিন্দ দাসের স্ত্রী বনিতা রাণী দাস জানান, তার স্বামী কেশবপুর বাজারে বিভিন্ন আড়তে কুলির কাজ করেন। শনিবার সন্ধ্যায় সরকারি খাদ্য গুদামের সামনে ওলিয়ারের আড়তে কাজ করার সময় কেশবপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক সুমারেশ কুমার সাহা হাজির হন। এ সময় তাকে জানানো হয়, তার বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ফলে তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে পরদিন যশোর আদালতে সোপর্দ করা হয়। রোববার তিনি যশোর গিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন জানালে যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদত হোসেন মানিকগঞ্জ সংশ্লিষ্ট আদালতে ইমেইলে যোগাযোগ ও সি.ডব্লিউ মূলে আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সোমবার যশোরের একই আদালতের বিচারক মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাঠানো ইমেইলের কপি পর্যালোচনায় ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন।

ইমেইলের কপি পর্যালোচনায় জানা যায়, ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় স্বাক্ষরকারী কামরুল ইসলাম নামে কোন ম্যাজিস্ট্রেট ওই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আগে কখনো কর্মরত ছিলেন না এবং বর্তমানে নেই। তাছাড়া গোবিন্দ দাসের ইস্যুকৃত প্রসেস-৮৩২, তাং-২০/০৭/২০২১, সিআর-৪৭/২১ মামলাটি মানিকগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেসির কোন আদালতে বিদ্যমান নেই। ফলে ইস্যুকৃত প্রসেসটি এবং স্মারকটি সৃজিত/ভুয়া। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার আইনজীবী পঞ্চানন কুমার দাস। পরে যশোর কারাগার থেকে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মুক্তি পান গোবিন্দ দাস।

এদিকে, গোবিন্দ দাসের প্রতিবেশী ভাই দিনমজুর মান্দার দাসের ছেলে কাজল দাসকে মানিকগঞ্জ জেলার সরুলিয়া থানার ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় গত ২২ মার্চ রাতে গ্রেপ্তার করে কেশবপুর থানা পুলিশ। কাজল দাস যশোর এমএম কলেজের দর্শন বিষয়ে মাস্টারস শেষ বর্ষের ছাত্র। ২৩ মার্চ তাকে যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করার পর আদালত ইমেইলের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রেরণ করলে মানিকগঞ্জের সংশ্লিষ্ট আদালত তা যাচাই করে ওই পরোয়ানাটি সৃজিত/ভুয়া মর্মে ইমেইলের মাধ্যমে আদেশের কপি যশোরে প্রেরণ করেন। ফলে বিজ্ঞ আদালত তাকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে যশোরের বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদত হোসেন স্বাক্ষরিত আদেশের কপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জি.আর-১৫/২১, সরুলিয়া থানার মামলা নং- ৫/২১ এর গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় থানার নাম সরুলিয়া উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মানিকগঞ্জ জেলায় সরুলিয়া নামে কোন থানা নেই। ওই আসামি জাল ও ভুয়া পরোয়ানায় আটক হয়েছে মর্মে প্রতিয়মান হয়।

এদিকে, বিনা অপরাধে ও মিথ্যা মামলায় দুই ব্যক্তির চার দিনের কারাবাসে এলাকাবাসী বিস্মিত হয়েছেন। অস্তিত্বহীন থানা ও অস্তিত্বহীন আদালতের ভুয়া ওয়ারেন্টে কে বা কারা তাদের ফাঁসাতে পারে, তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!