খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর সদরঘাটের শ্যামবাজারঘাটে লঞ্চে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৪ ইউনিট
  বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব
  নাটোরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে এক ট্রাক ড্রাইভার নিহত

কাপড় ক্যানভাসে মুক্তির গান

গেজেট ডেস্ক

স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস-দুটোতেই মেলে মুক্তির আনন্দ। উভয়ই প্রোজ্জ্বল লাল-সবুজে। মাখামাখি আবেগ আর অহংকারে। বাঙালি জীবনকে এই দুটি উপলক্ষ নানাভাবে প্রাণিত করে। সৃজন আর উদ্ভাবনের প্রেরণা হয়। ফ্যাশন ডিজাইনেও ফিরে ফিরে আসে লাল ও সবুজ। আসে স্বাধীনতা ও বিজয়। যেমন এই কালেকশনটার কথাই ধরা যাক।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মাথায় রেখেই এ বছরের শুরুতে ৩০টি পোশাকের এই সংগ্রহ তৈরি করেন ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা। সম্প্রতি এই সংগ্রহের কয়েকটি ছবি দেখে বিশদে জানার কৌতূহল হয়।

সৃষ্টিশীলেরা সব সময় চাহিদা পূরণের কাজই কেবল করেন তা নয়, বরং সৃজনতৃষ্ণা চরিতার্থের অনুঘটক হয় তাঁদের সৃষ্টি। যেখানে থাকে অন্য রকম প্রতীতি ও দায়বদ্ধতা। তখন আর পোশাক কেবল ফ্যাশনের উপাদান থাকে না।

বিপ্লব সাহার কাজটি ঠিক তেমন। এখানে স্বাধীনতা আর বিজয়ের অহংকে পোশাকের মধ্য দিয়ে সঞ্চারিত করা হয়েছে। কাপড় ক্যানভাস সেজেছে অন্যতর প্রত্যয়ে। রং বলতে লাল আর সবুজ; এ দুইয়ের দোসর সাদা; চিরসুন্দর আর পবিত্র। ঠিক স্বাধীনতা আর বিজয়ের মতোই।

বর্ণের বিন্যাস এখানে অবশ্যলক্ষণীয়। কারণ, কাপড়ের জমিন অলংকরণে ব্যবহৃত হয়েছে একটিমাত্র মাধ্যম-টাই অ্যান্ড ডাই। আর কিছু কাপড় পুরোটাই রাঙিয়ে নেওয়া লাল বা সবুজে। লে-আউট বা জমিনসজ্জায় বর্ণত্রয়ী বিভোর হয়েছে টাই অ্যান্ড ডাইয়ের অনিন্দ্য নাটকীয়তায়; আর এসব নকশা কেবল সীমাবদ্ধ থাকেনি ঐতিহ্যবাহী পোশাকে। কারণ, স্বাধীনতা তো সীমাবদ্ধতার নামান্তর নয়। এমনকি বিজয়ও সেই ব্যাপ্তিতে বাঙ্‌ময়।

কিছু ধ্রুপদি পোশাকের সঙ্গে পশ্চিমা পোশাকও সে জন্য স্বচ্ছন্দে সহাবস্থান করেছে। ফলে ট্রাউজার আর ব্লেজারও রঙিন হয়েছে লাল-সবুজে; শুভ্রতার পটভূমিতে। লংকোটও মেতেছে একই উদ্ভাসে।

বাংলাদেশের তরুণেরাই তো এখন সিংহভাগ। এই নবীন নাগরিকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। জোগাতে হবে তাদের রুচি আর পছন্দের খোরাক; তা সে অশনে হোক আর বসনে। বিপ্লব সাহা বসনে সেই গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই এই সংগ্রহ আদ্যন্ত হয়ে উঠেছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে বিভোর। পোশাকগুলো ছাঁট আর কাটের বৈচিত্র্য, সৌন্দর্য সবিশেষ লক্ষণীয়।

খাদি আর সুতি ভয়েল বেসিক ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে শাড়ি, ব্লাউজ, পাঞ্জাবি, স্কার্ট, জ্যাকেট, লংকোট, ফিউশন কোট, প্যান্ট, ব্লেজার, সারারা, গাউন, লেয়ারড ড্রেস। এই সংগ্রহে রয়েছে ৩০টি পোশাক। এর সঙ্গে অনুষঙ্গ হয়েছে সুতা ও কাপড় দিয়ে তৈরি গয়না। একটিমাত্র মাধ্যম ব্যবহারে এই সংগ্রহ, বলার অপেক্ষা রাখে না, বাহুল্যবর্জিত; ঐতিহ্যবাহী হয়েও আধুনিক।

লাল-সবুজ নিয়ে পোশাক রাঙানোর চল বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে বেশি দিনের নয়। নব্বই দশকের শেষ দিক থেকে এই ট্রেন্ড শুরু হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত প্রতিবছর দুবার এই দুটি রং ব্যবহার করে পোশাক নকশা করে থাকে ফ্যাশন হাউসগুলো। ডিজাইনারদের সৃজনভাবনা সেখানে থাকে। কিন্তু ক্রমেই এই প্রক্রিয়া যেন ক্লিশে আর একঘেয়ে বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সেখানে বিপ্লব সাহার এই সংগ্রহ অবশ্য দেবে মুক্তির আনন্দ। এ প্রয়াস তরুণ ডিজাইনারদের কাছে হতে পারে দৃষ্টান্ত। কারণ, লাল-সবুজ মানেই কেবল কয়েকটি গৎবাঁধা পোশাককে রাঙানো নয়, বরং সময়, ক্রেতার বয়স, রুচি ইত্যাদি বিষয় পোশাক নকশার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, সেটা মাথায় রাখা উচিত।

এই সংগ্রহ, আগেই বলা হয়েছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উপলক্ষ করেই তৈরি করা। তবে এতে একাকার হয়েছে বিশ্বরঙের সিকি শতক পূর্তি উদযাপনের আনন্দও। এই সংগ্রহ এখনো বাংলাদেশে উন্মোচন করা হয়নি। বরং ভালো লাগার অংশ হিসেবে তৈরি কালেকশনকে নিয়ে বাংলাদেশে ফ্যাশন শো বা প্রদর্শনীর ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেছে করোনা-বাধায়।

পুনশ্চ
এ বছরের গোড়ায় কলকাতার যোধপুর পার্ক উৎসবের জন্য দুটো কালেকশন তৈরি করেছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা। একটা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর অন্যটা মহাত্মা গান্ধীকে উৎসর্গ করে।

এই উৎসব বেশ পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী। প্রতিবারই উভয় বাংলার শিল্পীদের উপস্থিতি থাকে। এ বছর ১০-১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এই উৎসবের চেয়ারম্যান ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।

এর আগে কখনো এই উৎসবে ফ্যাশন শো হয়নি। বিপ্লব সাহাকে দিয়েই উৎসব কর্তৃপক্ষ বিশেষ এই উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ ও ভারতের সমান সংখ্যায় মোট ৩০ জন মডেল বিপ্লব সাহার পোশাক পরে ক্যাটওয়াক করেন। মহাত্মা গান্ধীকে উৎসর্গ করা কালেকশন পুরোটাই ছিল মিহি খাদি দিয়ে তৈরি। অন্যদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে তৈরি কালেকশনটি ছিল সুতি ভয়েল ও খাদির মিশেলে তৈরি।

এ অনুষ্ঠানের অতিথিদের উপহার দেওয়া হয় বিপ্লব সাহার ডিজাইন করা উত্তরীয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার।

 

খুলনা গেজেট / এআর




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!