খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় এসবির রিপোর্টার নিহত
  চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে

কর্মসংস্থানের অভাবে রামপালে উপহারের ঘর ছেড়েছে ১৭ উপকারভোগী

মেহেদী হাসান, রামপাল

বাগেরহাটের রামপালে কর্মসংস্থানের অভাবে উদ্বাধনের পর মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জমি ও ঘর বুঝে নিয়ে উপজলার গৌরম্ভার নতুন আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর ছেড়ে চলে গেছে ১৭ উপকারভাগী পরিবার। তারা গত দেড় মাসেও ফিরে আসেনি।

জানা যায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেনা প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দশেনা বাস্তবায়নে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভায় সরকারি খাস জমির উপর তৃতীয় পর্যায়ে গত অর্থ বছরে ৬০ টি বাসগৃহ নির্মাণ করা হয়। গত ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার সেই বাসগৃহ ও জমি প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন (ভার্চুয়াল) করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের সময় ৬০ উপকারভোগীর সবাই জমি ও ঘর বুঝে পাওয়ার পর তাদের মধ্যে ১৭ উপকারভোগী আশ্রয়নের ঘর ছেড়ে চলে যায়। তারা গত দেড় মাসেও ফিরে আসেনি।

সরোজমিনে আশ্রয়নের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এখানে গৃহ ও জমি পাওয়া বেশির ভাগ লোকের কোন কর্মসংস্থান নেই। আশপাশে এমন কলকারখানাও নেই যেখানে তাদের কর্মসংস্থান হবে। বেশির ভাগ পরিবারের নেই পুজি। যা দিয়ে তারা ব্যবসা করবে। তারা আরও জানান এখানে গৃহ ও জমি প্রদানের আগে বলা হয়েছিল তাদেরকে সহজ শর্তে ঋন দেয়া হবে। গত দেড় মাসে কেউ ঋন পায়নি। আমরা ঘর পেয়ছি কিন্তু কাজ না থাকলে খাবো কি ? ঋন পেলে ছোট দোকান কিংবা ভ্যান কিনে চালিয়ে সংসার চালাতে পারতাম। আয় না থাকায় কেউ কেউ ঘর ফেলে চলে গেছে। এ অবস্থায় থাকলে আরো লোক চলে যাবে এমন মন্তব্য তাদের।

উপকারভোগীদের কথার সুত্র ধরে জানা গেল ৫৬ নং ঘরের বাসিন্দা রামপালের খলিল, ৫৮ নং ঘরের বাসিন্দা রামপালের নাজমা বেগম, ৫৯ নং ঘরের বাসিন্দা হুড়কার প্রমথ মন্ডল, ৬০ নং ঘরের বাসিন্দা উনতি মন্ডল, ৬১ নং ঘরের বাসিন্দা সবিতা মন্ডল, ৬৭ নং ঘরের বাসিন্দা হুড়কার বেলাই তালতলার আশালতা, ৬৯ নং ঘরের বাসিন্দা তাপস কুমার বিশ্বাস, ৭৭ নং ঘরের বাসিন্দা ইউনুছ আলী, ৭৮ নং ঘরের বাসিন্দা অজ্ঞাতনামা, ৭৯ নং ঘরের বাসিন্দা বারুইপাড়ার জাহানারা বেগম, ৮০ নং ঘরের বাসিন্দা ছবেদ আলী, ৮৩ নং ঘরের বাসিন্দা রহিমা বেগম, ৮৪ নং ঘরের বাসিন্দা রিপন, ৮৫ নং ঘরের বাসিন্দা তাপস সহ রামপালের হামিম শেখ, ফরিদা বেগম, উজ্জল ডাকুয়া ও আলামিন হোসেন ঘর ও জমি বুঝে নিয়ে আশ্রয়ন ছেড়ে চলে গেছে পূর্বের ঠিকানায়।

নাম প্রকাশ না করে ওই আশ্রয়ন বসবাস করেন এমন ৪/৫ জন নারী জানান যারা আশ্রয়ন ছেড়ে চলে গেছে তাদের বাড়ি-ঘর আছে। এছাড়া এমন অনেকেই আছে যারা এখানে কিছুদিন থাকার পর গ্রামের বাড়িতে বসবাস করে। তারা পুরাপুরি ভুমহীন নয়। ওই আশ্রয়নের নেতা সাবেক ইউপি সদস্য আ. হান্নান বয়াতী বলেন যারা ঘরে থাকেনা তাদের বার বার ঘরে আসতে বলা হলেও তারা আসছেনা। মনে হয় তারা আর আসবে না। তবে আশ্রয়নের বাসিন্দারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন আমাদের মতো ভুমিহীন মানুষের জন্য তিনি যদি ঘর ও জমি না দিতেন তাহলে আমাদের বেঁচে থাকা খুবই কষ্ট হতো। এখন আমাদের দরকার কাজ। এখানে কাজের অভাব। এ জন্য মানুষ চলে যাচ্ছে।

একইভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নে ভূমিহীনদের ১০ টি ঘর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন ঘর বরাদ্দ নেওয়ার পরেও গত প্রায় এক বছর ধরে ঘরে থাকেননি। এরা হলেন মো. হাসান শেখ, মান্নান শেখ ও মো. আলী হোসেন। অভিযোগ রয়েছে এরা ঘর পাওয়ার পর থেকেই বসবাস করেন না। মাঝে মাঝে শুধু কেউ কেউ খোঁজ নিয়ে চলে যান। এ প্রতিবেদকসহ সাংবাদিকরা সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পায়। তাদের সাথে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজিবুল আলম এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, যারা চলে গেছে তারা কেন গেল তা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও পিআইও খতিয়ে দেখবেন। তারা যদি আর ফিরে না আসে তাহলে নুতন করে প্রকৃত ভূমিহীনদের ওইসব ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে। ইতিমধ্যে কয়েকজন ঘর পাওয়া উপকারভোগীকে ডেকে তাদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। আর সমবায় অধিদপ্তর থেকে তাদের ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া এবং তাদের আয়বর্ধক কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!