খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল

করোনাকালে কেমন আছে গ্রামীণ শিশুরা?

নিপা মোনালিসা

দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সামিয়া রহমান। বয়স সাত বছর। স্কুল বন্ধ থাকায় নেই পড়াশোনার চাপ। তাই কখনও গৃহস্থালির কাজে মাকে সাহায্য করে, কখনও টিভি দেখে আবার কখনও ছোট্ট বোনের সাথে খেলে, তার দেখাশোনা করেই সময় কাটছে তার।

সামিয়া বলেন, করোনার জন্য স্কুল এখন বন্ধ। স্কুলে অনেক বন্ধু ছিল আমার। তাদের সাথে খেলতাম, একসাথে পড়তাম। অনেক ভাল লাগতো। বাড়িতে এভাবে পড়তে ভাল লাগে না। সময় কাটে না। স্কুলে যেতে মন চাই। বাড়িতে থেকে আম্মুকে সাহায্য করি, টিভি দেখি, বোনকে কোলে নিই, ওর সাথে খেলি, বিকেলে আরবি পড়তে যাই আর সন্ধ্যায় বাড়িতে বই পড়ি। স্কুল থেকে এ্যাসাইনমেন্ট দেয় সেগুলো লিখে জমা দিতে হয়।

এদিকে দিনের অধিকাংশ সময় টিভি দেখে, মোবাইলে কার্টুন আর গেম খেলেই সময় কাটে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী তনিমা স্নিগ্ধার ও তার বোন নবম শ্রেণীর ছাত্রী তাকিয়া তাবাচ্ছুমের। তবে সময় পেলে তারা ছবিও আঁকে। ঘরের কাজে মাকে সাহায্যও করে তাকিয়া। বাড়িতে শিক্ষক এসে যেটুকু পড়ায় তার বেশি আর পড়া হয় না তাদের।

তনিমা ও তাকিয়া বলেন, সারাদিন ঘরে থাকতে ভাল লাগে না। তাই টিভি দেখি, মোবাইলে কার্টুন দেখি, গেম খেলি, ছবি আঁকি, বই পড়ি আর আম্মুকে সাহায্য করি।

শুধু সামিয়া, তনিমা আর তাকিয়া নয় গ্রামের অধিকাংশ শিশুদেরই সময় কাটছে খেলাধুলা করে, টিভি দেখে, মোবাইলে কার্টুন বা গেম খেলে, গৃহস্থালির কাজে মা-বাবাকে সাহায্য করে। এদিকে গৃহস্থালির কাজ সামলাতে যেয়ে অধিকাংশ অভিভাবকই তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারে খোঁজ রাখতে পারছেন না বলেও জানান তারা।

সামিয়ার মা খাদিজা বেগম বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় সারাদিন বাড়িতেই থাকতে হয় বলে ওর মন খারাপ থাকে। এজন্য টিভি দেখে আর বোনের সাথে খেলে সময় কাটায়। মাঝে মধ্যে আমাকে ঘরের কাজেও সাহায্য করে। হাতে সময় আছে বলে এখন ওকে কোরআন পড়া শেখাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, স্কুল থেকে ওর স্যাররা ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নেয়। পড়া বলে দেয়। মাঝে মধ্যে এ্যাসাইনমেন্ট দেয় সেটা মেয়েকে দিয়ে লিখিয়ে আবার স্কুলে জমা দিয়ে আসি। শুনেছি স্কুল থেকে অনলাইনে ক্লাস নেয়। কিন্তু বার বার এমবি কিনে মেয়েকে অনলাইনে ক্লাস করাতে পারিনা। অনেকে এ সময়ে বাড়িতে টিচার এনে পড়াচ্ছে। আমাদের পক্ষে সেটাও সম্ভব না। তাই বাড়িতে যেটুকু পারি নিজেই পড়াই। তবে সময়ের অভাবে সবটা ভালভাবে হয় না। এতে করে আগের পুরোনো পড়ায় অনেক ভুলে গেছে।

তনিমা ও তাকিয়ার মা তাহমিনা বেগম বলেন, ওরা বাড়িতে পড়াশোনা তেমন করে না। স্যার আইসে যেটুক পড়ায় তার বেশি আর পড়ে না। নিজের সংসারের কাজ সামলাবো কখন আর ওদের সময় দেব কখন? এজন্য পড়াশোনাটা ওরা ভাল করে করছে না। আগে স্কুলের পড়ার চাপ থাকতো নিজেরাই পড়তে বসতো এখন তো আর তা হচ্ছে না। আর করোনায় বাইরে বের হইতে পারে না, বন্ধুদের সাথে খেলতেও পারে না। এতে ওদের মন খারাপ থাকে, বিরক্ত হয় তাই বাধ্য হয়েই টিভি দেখে আর মোবাইল নিয়ে সময় কাটায়।

এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা বীণা রানি মহালদার বলেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও বাচ্চারা যাতে তাদের পড়াশোনা ঠিকঠাকভাবে চালিয়ে যেতে পারে এ ব্যাপারে আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। মোবাইলে নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি, পড়া দিচ্ছি, এ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়, গুগল মিটে ক্লাসও নিচ্ছি। গুগল মিটে যারা ক্লাস করতে পারছে না তাদেরকে ফোনে সবটা বুঝিয়ে দিচ্ছি। আর বাড়িতেও বাচ্চারা যাতে পড়াশোনা করে এ ব্যাপারে তাদের অভিভাবকদের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।

উল্লেখ্য, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!