বাঙ্গালি কবি সিকান্দার আবু জাফর। ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ সাতক্ষীরা জেলার (তৎকালীন খুলনা জেলা) তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম সৈয়দ আল্ হাশেমী আবু জাফর মুহম্মদ বখ্ত সিকান্দার। বাঙালি কবি, সঙ্গীত রচয়িতা, নাট্যকার ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফর ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার-এ ভূষিত হন এবং ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনাসম্পন্ন বহু গান রচনা করেছেন। তাঁর রচিত ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই’ গানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্ব সাধারণকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আবু জাফর গদ্য ও পদ্য রচনায় সম্যক দক্ষ হলেও কবি হিসেবেই তাঁর সর্বাধিক খ্যাতি। ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।
কবি সিকান্দার আবু জাফরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিগত বছর গুলোর ন্যায় করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে কবির পৈত্রিক ভিটা তেঁতুলিয়া হাশেমী বাড়ি সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মাসব্যাপী কবি সিকান্দার আবু জাফর মেলা ২০২৩। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য প্রখ্যাত এ কবির নামে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করলেও রোববার মেলার মাঠ ঘুরে চোখে পড়েনি কোন বইয়ের স্টল। হচ্ছেনা কবির জীবনি নিয়ে আলোচনা কিংবা অন্য যে কোন অনুষ্ঠান।
তবে প্রখ্যাত এ বাঙ্গালি কবির নামে মেলা চালালেও কবি সংশ্লিষ্ট মেলায় কোন আয়োজন না থাকলেও হর হামেশাই চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রপালার নামে অশ্লীল নৃত্য। আর ভাগ্য পরীক্ষার নামে অবৈধ লটারি সংশ্লিষ্টরা নিত্যু লুটে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষদের কষ্টার্জিত অর্থ।
সরেজমিনে রবিবার (১২ মার্চ) মেলার মাঠ ঘুরে দর্শনার্থীদের মাধ্যমে জানাযায়, অধিক মুনাফার আশায় মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে প্যান্ডেল সাজিয়ে মালিকরা মেলা সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগ সাজশে গানের নামে পরিচালনা করে চলেছেন অশ্লীল নৃত্য।
যাত্রা পালার অবস্থা নাকি আরও বেগতিক। সামাজিক যাত্রাপালার নামে রাত ১২টার পর থেকেই শুরু হচ্ছে বিভিন্ন বয়সী নারীদের নিয়ে অশ্লীল নৃত্য। নানা অঙ্গভঙ্গিতেই তারা মাতিয়ে রাখছে যাত্রাপালা নামের অশ্লীর নৃত্যের স্টেজ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেলায় লোক সমাগম ঘটাতে মাঠ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনায় নৃত্য শিল্পীদের দিয়ে এমন নষ্টামি করানো হচ্ছে। আর মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় বহিরাগত মাদকসেবীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি মেলায় লটারির আয়োজন করে বিভিন্ন এলাকায় দিনব্যাপী মাইকিং করে টিকিট বিক্রির নামে সর্ব সাধারণের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের এক প্যান্ডেল মালিক বলেন, নৃত্যানুষ্ঠানে স্কুল কলেজ পড়ুয়া উঠতি বয়সী যুবকদের ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। তারা সরাসরি নৃত্য পরিবেশনকালে শিল্পীদের শরীর স্পর্শ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এমন ঘটনায় নিত্য ঝামেলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস বলেন, মেলায় এধরণের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি