খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৮ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
  সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন মারা গেছেন
  নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত
  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

এপিজে আব্দুল কালাম : একজন আদর্শ পুরুষ

মোহাম্মদ সাদউদ্দিন, কলকাতা

ভারতের প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম শুধু একজন রাষ্ট্রপতি, বিজ্ঞানী, বা ‘মিসাইলম্যান’ নন, তিনি ভারতের এক গর্বিত ও আদর্শ পুরুষ। তিনি এক পথপ্রদর্শক। ভারতবাসী তাকে নিয়ে গর্বিত। তার একটি কথা আমাদের কানে আজো বাজে। তিনি বলেছেন, “তোমার প্রথম বিজয়ের পর বিশ্রাম নিও না। কারণ তুমি যদি দ্বিতীয়টিতে হেরে যাও। তোমার প্রথম বিজয় যে কেবল ভাগ্য বশত, এটা আর বলার জন্য অনেক ঠোঁট অপেক্ষা করে আছে।”

প্রকৃত নাম আবু পাকির জয়নুল আবেদিন। সবার কাছে জনপ্রিয় এ পি জে আব্দুল কালাম হিসাবে। ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর তামিলনাড়ুর রামেশ্বরপুরমে তাঁর জন্ম এক তামিল মুসলিম পরিবারে। স্কুল জীবনে সাধারণ পঠন- পাঠন হলেও কালাম খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এমনকি পরিশ্রমীও ছিলেন। তিনি শিক্ষার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। ছেলেবেলায় কালামের পরিবার ছিল খুব দরিদ্র । তাই তাকে সংবাদপত্র বিক্রয় করে সংসারে অর্থ সাহায্য করতে হোত। ১৯৫৫ সালে মাদ্রাজে (চেন্নাই) গিয়ে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ভর্তি হন। স্নাতক হওয়ার পর কালাম ডিফেন্স রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসের সদস্য হয়ে ডিফেন্স রিসার্চ এবং ডেভেলপমেনট অর্গানাইজেশনের এরোনেটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্টের বিঞ্জানী হিসাবে যোগদান করেন। ক্ষেপণাস্ত্র ( বালিস্টিক মিসাইল) ও নিক্ষেপ যান প্রযুক্তির কাজের ক্ষেত্রে সাফল্য কালামকে ‘মিসাইলম্যান অব ইণ্ডিয়া’-তে পরিণত করে। তিনিই একমাত্র ভারতীয় বিজ্ঞানী যিনি ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কোনোদিন এ নিয়ে তিনি গর্ব করেননি বা অহঙ্কার দেখাননি।

ধর্ম আর আধ্যাত্মিকতা আজীবন কালামের কাছে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওনার আধ্যাত্মিক যাত্রার বিষয় ছিল ‘অতিক্রম : প্রমুখ স্বামীজীর সাথে আমার আধ্যাত্মিকতা।’ ২০০২ সালে এনডিএ ও কংগ্রেসসহ কয়েকটি দল তাঁকে ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ননের জায়গায় রাষ্ট্রপতি হিসাবে মনোনিত করে। তখন অটলবিহারী বাজপেয়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বামপন্থীরা বাদ দিলে সবদলই তাকে ভোট দেয়। তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হন। একাদশ রাষ্ট্রপতি হিসাবে তিনি শপথ নেন। রাষ্ট্রপতি হবার পরও ভারতকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নত দেশে পরিণত করতে তিনি দায়বদ্ধ ছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তাই তিনি ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি মেনে চলতেন। কালামের পিতা রামেশ্বরমের একটি মসজিদের ঈমাম ছিলেন। কিন্তু কালামের পিতা কালামকে আন্তঃধর্মীয় শ্রদ্ধার তালিম দেন। আর এইভাবেই কালাম সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠেন। সব ধর্মের লোকদের নিয়ে আন্তধর্ম সংলাপ করতেন। এলাকার দ্বীপাঞ্চলীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন। কালাম তার স্মৃতিচারণায় এ কথা বলেছেন।

কালামের পিতার সুসংহত অসাম্প্রদায়িক চেতনা কালামের জীবনেও প্রভাব বিস্তার করে। তাই কালাম একদিকে ছিলেন যথার্থই দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক ও পরধর্ম সহিষ্ণু। উনি সবসময় দেশকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেশের প্রতি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। কালাম বিশ্বাস করতেন ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’, কালাম মনে করতেন ‘ধর্ম মানুষের জন্য মিত্রতার সেতু, ক্ষুদ্র মনের মানুষের জন্য লড়াইয়ের অস্ত্র’।

ভারতের প্রবন্ধন প্রতিষ্ঠান ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট শিলঙে ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই উনার বক্তৃতার বিষয় পাঠ করতে গিয়ে উনি পড়ে যান। বেথানি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এপিজে আবদুল কালাম শুধু ভারতের নন, পৃথিবীর মানুষের কাছে এক আদর্শ। তিনি অমর, চিরস্মরণীয়।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!