খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় এসবির রিপোর্টার নিহত
  চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে

 একজন মানবিক ইউএনও’র বিদায়

একরামুল হোসেন লিপু

মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন একজন মানুষ। ছিলেন অত্যন্ত সৎ, দক্ষ, চৌকস এবং কর্মঠ অফিসার। ৩২ মাসের কর্ম জীবনে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলাবাসীর মনি কোঠায় স্থান করে নিয়েছিলেন। দিঘলিয়ার সামাজিক সংগঠনগুলেকে মাতৃস্নেহের মতো লালন করতেন। তাই তো উপজেলার সবার প্রিয় সেই নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলমের বিদায় অনুষ্ঠানে সংগঠনগুলো অনেক সদস্য কেঁদেছেন।

দাপ্তরিক কাজের বাইরে সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়নে সকাল থেকে রাত অবধি ছুটে চলতেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। ছিলেন দিঘলিয়া উপজেলার নিপীড়িত, নির্যাতিত, অসহায় মানুষগুলো শেষ আশ্রয়স্থল। প্রতিদিন এ জাতীয় মানুষ ছুটে আসছেন তার অফিসে। তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যেতেন সমাধান।

সেই অসহায় মানুষগুলোর একজন ৭০ বছর বয়সী মোঃ মাসুদ মিয়া। বাড়ি ফরমাইশখানা গ্রামের ৭ নং ওয়ার্ডে। ইউএনও সম্পর্কে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন এভাবে, ইউএনও সাহেবের কাছে আমি যে কোন কাজে আসছি, উনি কখনো ফেরায় দেয়নি। অফিসে যত লোকের ভেতর আইছি, উনি আগে আমার কথা শুনছেন। আমি যতবার উনাকে ফোন করছি ততবার রিসিভ করছে, বলছে হ্যাঁ আপনি বলেন কি সমস্যা? উনি আমার সমস্যাগুলো সমাধান করে দিয়েছেন। খুবই ভালো লোক ছিলো। উনি এখান থেকে চলে যাবে শুনে শেষ দেখা করতে এসেছি। আমি টিনের জন্য দরখাস্ত করেছিলাম উনি মঞ্জুর করেছেন। আমার একটা চোখ অপারেশন হয়েছে। আর একটা বাকী আছে, সে কথা শুনে উনি নগদ ১৫’শ টাকা দিয়েছেন। উনার দীর্ঘ হায়াত কামনা করি।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্যা আকরাম হোসেন বিদায়ী ইউএনও সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, উনি যখন আমাদের দিঘলিয়ায় যোগদান করেন, তখন করোনার খুব প্রকোপ ছিলো। আক্রান্ত মানুষ গুলোর পাশে উনি দাঁড়িয়েছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজে আক্রান্ত হয়েছেন, পরিবারও আক্রান্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ তা’লার অশেষ রহমত যে, এরকম সময় আমরা এ রকম একজন নিবেদিত মানুষ পেয়েছি, যিনি ঠিক এই সময় দিঘলিয়ায় এসে আমাদের সেবা দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র ভূমিহীনদের জন্য ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। সরকারি বরাদ্দের বাইরে অর্থ ম্যানেজ করে ভূমিহীনদের জন্য ঘরগুলো মজবুত ও টেকসই করে তৈরী করে দিয়েছেন।আমরা দিঘলিয়াবাসী অবশ্যই অবশ্যই তাকে আজীবন মনে রাখবো। আমি তার দীর্ঘায়ু এবং আগামী কর্মস্থল সুন্দর হোক, ভবিষ্যতে আরো অনেক বড় মাপের কর্মকর্তা হোক, মানুষের খেদমত করুক এই কামনা করি।

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) ছিলো বিদায়ী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলমের শেষ কর্ম দিবস। ২০২০ সালের ১০ জুলাই তিনি দিঘলিয়া উপজেলায় যোগদান করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুূদক) ‘র উপ- পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। খুব দ্রুতই যোগদান করবেন সেখানে। ৩০ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের যোগদানের মধ্য দিয়ে তিনি চাকুরী জীবন শুরু করেন। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দিঘলিয়ায় শেষ কর্ম দিবসে বিদায়ের প্রাক্কালে খুলনা গেজেটকে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দিঘলিয়া আমার প্রথম এবং শেষ স্টেশন। এখানে ২ বছর ৮ মাস সময় অতিবাহিত করেছি। একটি স্টেশনে ইউএনও হিসেবে কোন কর্মকান্ড শেষ করতে পারাটাও অন্যরকম বিষয়। যেটি সাধারণত হয় না। আমার ধারণা ছিলো ইউএনও হিসেবে হয়তো ৫-৬ টা স্টেশনে কাজ করতে হবে। ইউএনও হিসেবে একটা স্টেশন এজ এ ইউএনও’র জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউএনও শীপের পুরোটাই আমার দিঘলিয়ায় কেটেছে। সুতরাং দিঘলিয়া আমার সেকেন্ড হোমে পরিণত হয়েছে।
দিঘলিয়াবাসীর ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ, অভিভূত। দিঘলিয়া, এই জায়গাটা এত সুন্দর, প্রকৃতির এ রকম একটি নির্মল পরিবেশ। চারদিকে নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপের মধ্যে, এটি সব সময় আমাকে টানে।

ইউএনও হিসেবে দিঘলিয়ায় কাজ করে আমার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র ভূমিহীন গৃহ হীনদের জন্য যে উদ্যোগ, সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দিঘলিয়া উপজেলায় ৩৮০ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এই মহতী কাজের সাথে আমি সম্পৃক্ত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। যাদের কিছুই ছিলো না, সেই ভূমিহীন মানুষগুলো ‘র সারা জীবনের জন্য একটা আশ্রয়ের স্থান পেলো। এই মানুষগুলো যতদিন বেঁচে থাকবে, তাদের প্রজন্ম বেঁচে থাকবে, তারা বলুক বা না বলুক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু অটোমেটিক্যালি দোয়া পাবেন। প্রশান্তির জায়গা আমি নিজেও এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম।

আমি যদি কোন ভালো কাজ করে থাকি তার কৃতিত্ব দিঘলিয়াবাসীর। আর খারাপ কিছু করে থাকলে তার দায়ভার আমার। সত্যিই দিঘলিয়াবাসীর জন্য কিছু করতে পেরেছি বলে আমি বিশ্বাস করি। কিছুটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। সাধ্যমতো কাজ করার চেষ্টা করেছি। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাকে কঠোর হতে হয়েছে। কারোর সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয় । নিজ প্রয়োজনে কিছু করি নাই। যা করেছি, সবটুকু দাপ্তরিক প্রয়োজনে।
দিঘলিয়াবাসীর প্রতি আমি আসলে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমি যখনই সুযোগ পায়, আমি আসবো, আপনাদের সাথে দেখা হবে। দিঘলিয়ার মানুষগুলোকে আমি খুবই মিস করবো।

আমার বিদায় বেলায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, দয়া করে এটা মনে রাখবেন না।
গুড বাই দিঘলিয়া।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!