কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সম্পূর্ন উৎস্যবমুখর পরিবেশে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে। তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রোববার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এখন চলছে ভোট গণনার কাজ।
এর আগে শনিবার বিকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী অন্যান্য সরঞ্জাম পৌছালেও ব্যালট পেপার পৌছায় রোববার সকালে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার দিকে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ব্যালট পেপার পৌছে দেয়া হয়। পরে সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রর রির্টানিং অফিসাররা নিজ দায়িত্বে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে নিয়ে যান।
এদিকে ভোট গ্রহণের শুরুতেই কেন্দ্র গুলোতে ভাটাররা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ভোট প্রদানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। এসময় প্রতিটি কেন্দ্রে যেন উৎসবের অমেজ বিরাজ করছিল। ভোটাররা কোনা প্রকার বাধা বিঘœ ছাড়াই নির্বিঘেœ তাদের ভোটাদিকার প্রয়োগ করেন। ভোট গ্রহণকালে কেন্দ্র গুলোতে দায়িত্বরত পুলিশসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। নির্বাচনে যেকোন দলের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের ছাড় দেয়নি প্রশাসন। ভোট কেন্দ্রের সামনে কোন প্রার্থীর সমর্থক ভিড় করার চেষ্টা করলে কঠোর ভূমিকায় দেখা গেছে প্রশাসনকে। তারা কঠোর হস্তে যে কনো প্ররিস্থিতি মোকাবেলা করে ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোট প্রদানের পরিবেশ বজায় রেখেছেন।
দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা মহিদুল ইসলাম জানান, গত ১৫ বছর আমরা ভোট দিতে পারিনি। কোন না কোন ভাবে আমাদেরকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এবার খুব সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। অনেক দিন পর নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে খুব ভাল লাগছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এক আ’লীগ নেতা। এমন অভিযোগ পাওয়া মাত্র ভোটকেন্দ্রের সামনে থেকে দলীয় সমর্থকদের উপরে ক্ষিপ্ত হতে দেখা যায় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। এসময় মাইকযোগে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভোট কেন্দ্রের সামনে থেকে যারা ভোট দেয়নি তাদের ব্যতিত বাকিদের চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। এসময় বিশৃঙ্খলার চেষ্টাকারী দলীয় নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ করে তাড়িয়ে দেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। দুপুরে দেবহাটার সখিপুর ইউনিয়নের খানবাহাদুর আহসান উল্যাহ কলেজ কেন্দ্রের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুল ইসলামের সমার্থকদের হামলায় নৌকা প্রার্থীর ৩কর্মী আহত হয়। তবে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন আনে। এধরনে দুই একটি ছোট খাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই সাতক্ষীরার দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে উৎস্যবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্নভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার দু’টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৮২ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৯৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৬২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬৪ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৪১ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৬৪৮ জন এবং দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ১৮ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৫৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই দু’টি উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৯১ জন। এরমধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৮৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৮০ ও নারী ভোটার ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৮৪ জন। এছাড়া দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লক্ষ ৫ হাজার ৩৭ জন । এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫২ হাজার ৯০১ জন এবং নারী ভোটার ৫২ হাজার ১৩৬ জন।
দুই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৬১ টি ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৮৫৩। এর কালিগঞ্জ উপজেলার ১১০টি কেন্দ্রের ৫৮৬ কক্ষে ও দেবহাটা উপজেলার ৫১টি কেন্দ্রের ২৬৭টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অবাদ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।
খুলনা গেজেট/এএ
