খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি গাড়িকে চাপা দেওয়ার ঘটনায় নিহত ১৪
  নরসিংদীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবক নিহত, আহত ৭
  নওগাঁয় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রী নিহত, শিশুসহ আহত ২
  গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে সিএনজিচালক নিহত

উপকূলে টিকছে না নির্মিত বাঁধ, নদী শাসন জরুরী

তরিকুল ইসলাম

খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা। সামান্য ঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ষাটের দশকে তৈরি জরাজীর্ণ নদীর পানি রক্ষা বাঁধ ভেঙে বার বার নোনা পানিতে প্লাবিত হওয়া এ এলাকার সাধারণ ঘটনা। প্রায় প্রতি বছর কোথাও না কোথাও ভেঙে নোনা পানিতে ভেসে যাচ্ছে বসতবাড়ি ও সম্পদ। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, জমির ফসল। সরকারের বরাদ্দে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ মেরামতের কাজও হচ্ছে।

সম্প্রতি উপকূলে দেখা দিয়েছে ভিন্ন আতঙ্ক। ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াই নির্মিত বাঁধ ভাটির টানে নদীগর্ভে পতিত হচ্ছে। বেশ কয়েকটিস্থানে সবল বাঁধ এমনকি বড় বাজেটের টেকসই বাঁধও ভাটির টানে ধসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে এসব বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। নদী শাসন ছাড়া শুধু বাঁধ মেরামত করে ভাঙনের প্রতিকার মিলবে না বলছেন নাগরিক নেতারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন এটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া আরও কঠিন।

বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা গ্রামে শাকবাড়িয়া নদীতে ভাটির টানে ওয়াপদার বেড়িবাঁধে আকর্ষিক ভাঙনে প্রায় ২০০ মিটার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। ভোর রাতে ভাটির সময় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখে তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা নিজেদের ঘরবাড়ি সোনালী ফসল রক্ষা করতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিং বাঁধের কাজ শুরু করে। সহস্রাধিক মানুষ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দিনভর কাজ করে রিংবাঁধ সম্পন্ন করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড আনুষঙ্গিক জিনিস দিয়ে সহযোগীতা করে। তবে মূল বাঁধ নির্মাণ না করা পর্যন্ত কোন মূহুর্তে জোয়ারের পানিতে সেখানকার বসতবাড়ি-সম্পদ ভেসে যাওয়ার চরম শঙ্কা বিরাজ করছে।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান বলেন, বাঁধটি ব্লক দিয়ে নির্মাণ করা ছিল। গত বছর বাঁধটিতে ফাটল দেখা দেয়। তিন মাস আগে জিও ব্যাগ ফেলে ফের সংস্কার করে পাউবো। তবে নদী শাসনের মাধ্যমে টেকসই না হওয়ায় ধসে গেছে।

৭ নভেম্বর সোমবার ভোর ৫ টার দিকে দাকোপের খরোস্রোতা ঝপঝপিয়া ও পশুর নদীর ভাটার সময় পাউবো’র ৩১নং পোল্ডারের পানখালী ফেরীঘাটের পূর্ব পাশে দিকে প্রায় এক শত মিটার বাঁধ মুহুর্তের মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়।
এরআগে গত ২৪ অক্টোবর ভোরে কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা এলাকায় কপোতাক্ষ নদের প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ধসে যায়। ধসে যাওয়া বাঁধ এক বছর পূর্বে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে নির্মাণ করা হয়। বছর না ঘুরতেই ধসে যাওয়ায় কাজের মান নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

সেখানকার ইউপি সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, গেল বছর বাঁধ নির্মাণকালে সেনাবাহিনী কাজ করেছিল। তখন কপোতাক্ষ নদ থেকে বালি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। নদীর ঢেউ লেগে বাঁধের তলার মাটি সরে যাওয়ায় বালির বাঁধ ধসে গেছে। তিনি আরও বলেন, বাঁধটি পরিকল্পিতভাবে না করায় টেকসই হয়নি। নদী শাসনের মাধ্যমে ড্যাম্পিং ও ব্লক ব্যবহার করলে বাঁধ নষ্ট হত না।

পাউবো সূত্র জানায়, হরিণখোলা এলাকায় জাইকার অর্থায়নে ঠিকাদারের মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর ৬০ মিটার ক্লোজার ও ১ হাজার ৬৪০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে। পাউবো’র অর্থায়নে ওমরর্স ট্রেডিং এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন। নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পর ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হস্তান্তর করে তারা।

খুলনার দাকোপ উপকূলের দুটি বাঁধ (৩২ ও ৩৩নং পোল্ডার) পুন:নির্মাণ হয়। অথচ কাজ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই আগস্ট মাসে দাকোপ উপজেলার ৩২ নম্বর পোল্ডারের একাধিক জায়গায় বাঁধ ধসে যায়। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৫টি এলাকা। সর্বশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাজুয়া ইউনিয়নের চুনকুড়ি খেয়াঘাটের পাশে ১০০ মিটার বাঁধ (৩৩নং পোল্ডার) নদীতে ধসে যায়। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এই কাজ শেষ হয় গত ৩০ জুন। খুলনার অংশে প্রকল্প ব্যয় হয় ৩৫০ কোটি টাকা।

গত ১৭ জুলাই ভোরে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর চরামুখা কপোতাক্ষ নদের বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটারের মতো ধসে যায়। বাপাউবো সূত্রে জানা যায়, ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে ওই এলাকার বাঁধ মেরামতে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। কাজটিতে অর্থায়ন করে জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (জাইকা)। দরপত্রের মাধ্যমে ‘অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা’ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই কাজটির দায়িত্ব পায়।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, নদীশাসন ছাড়া শুধু বাঁধ নির্মাণ করায় টেকসই হচ্ছে না। কয়েক বছরের মধ্যে সেটি আবারও নদীতে চলে যাচ্ছে। বাঁধের পেছনে শত কোটি টাকা খরচের আগে নদী শাসন জরুরী।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তলদেশ থেকে বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন উঠে আসছে। চরের মাটি ভেঙে নদী গর্ভে চলে গেছে। যেকোন মূহুর্তেই সেসব এলাকার বাঁধ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, নিচের দিকে পানির চাপ বেশি পড়ায় মাটি সরে যাচ্ছে। নদী শাসন ছাড়া এগুলো ঠেকানো যাবে না।

খুলনার কয়রা, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর আওতায়। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, বাঁধের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় ধস নামছে। এটা যেকোন স্থানে হতে পারে। বাঁধের পাশ্ববর্তী নদী বেশি গভীর হলে এবং পানি কম থাকলে বাঁধ ধসে যেতে পারে। এজন্য সমস্যা চিহ্নিত করে নদী শাসন করতে হবে। নদীর কোথায় গভীরতা বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা নিয়মিত সার্ভে করার মাধ্যমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন।

বাঁধ মেরামতে বালি ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, হরিণখোলায় জাইকার অর্থায়নে বাঁধ নির্মাণের ডিজাইনে মাটি ছিল। মাটি দিয়েই সেখানে বাঁধ নির্মাণ করা হয়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!