খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  শ্রম আইন লঙ্ঘন : স্থায়ী নয় ২৩ মে পর্যন্ত জামিনে থাকবেন ড. ইউনূস
  ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস-পিকআপ ভ্যান মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৩
  ময়মনসিংহের তারাকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
  ২৩ নাবিকসহ ২২ এপ্রিল দুবাইয়ে নোঙর করবে এমভি আবদুল্লাহ
আওয়ামী লীগের শাসনামলের গত পাঁচ বছরে হাজারো কোটি টাকা বরাদ্দ

উন্নয়নে বদলে গেছে অবহেলিত যশোরের চিত্র

জাহিদ আহমেদ লিটন, যশোর

আওয়ামী লীগের শাসনামলের গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের মহাসড়কে পা রেখেছে যশোর। এ কারণে বদলে গেছে গোটা যশোরা লের চিত্র। হয়েছে হাজারো কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। এরমধ্যে রয়েছে জেলাবাসীর বহু প্রত্যাশিত ভৈরব নদ খনন, শহর ও সড়ক উন্নয়ন। এ উন্নয়ন চিত্রে পাঁচ বছর আগের ও পরের যশোরে ব্যাপক ব্যবধান দেখছে শহরবাসী। যেটা মানুষের বহুল প্রত্যাশিত ছিল।

দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর যশোরবাসীর চাওয়া ছিল জেলার উন্নয়ন। বৃটিশ আমলের জেলা যশোর হলেও রয়েছে চরমভাবে অবহেলিত। এ জেলায় পরিকল্পিত উন্নয়নের পেছনের সারিতে রয়েছে। মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা, মেডিকেল কলেজ, ভৈরব নদ খনন করে শহরের শোভাবর্ধন ও সড়ক উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর্যায়ক্রমে এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড হবার পর স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছে যশোরবাসী। প্রায় সাতশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে বেজমেন্টের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে যশোর-খুলনা ও যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক।

অনুরূপভাবে ৯০ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে যশোর-চুকনগর সড়ক। শহরের মণিহার থেকে মুড়লী পর্যন্ত এক কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন কিলেমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। প্রতি কিলোমিটার ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয়েছে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের ৪২ কিলোমিটার উন্নয়ন কাজ। একইসাথে পৌরসভার উদ্যোগে দেড়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের ড্রেনেজ, ফুটপাত ও সড়কের উন্নয়ন করা হয়েছে। যা বর্তমানে সবই শহরবাসীর কাছে দৃশ্যমান। এর বাইরে মানুষের বহু প্রত্যাশিত চাওয়া ছিল শহরের বুক চিরে বয়ে চলা ভৈরব নদ খনন ও পাড় বাধিয়ে শোভাবর্ধন। যে কাজটিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। শোভাবর্ধন কাজের মধ্যে বর্তমানে চলছে নদের পাড়ে পার্ক নির্মাণ কাজ।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ২৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদী ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের’ কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৯৬ কিলোমিটার নদ খনন করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরুর পর নদের উজান ও ভাটির ৮০ কিলোমিটারের বেশি কাজ শেষ করার পর জটিলতা দেখা দেয় শহরের কাঠেরপুল থেকে দড়াটানা অংশের খনন নিয়ে। সে জটিলতা ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এক বছর যাবৎ চলমান থাকে। পরবর্তীতে স্কেভেটর নদের পানিতে নামিয়ে ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করে চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া, শহরাংশে খনন কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভয়াবহ জটিলতায় পড়ে নদের পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা নিয়ে। যা তারা পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় চিহিৃত করে অপসারণের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠে।

সূত্র জানায়, যশোরের আলোচিত ভৈরব নদ খননে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ শহরের কাঠেরপুল থেকে বিরামপুর অংশের চার কিলোমিটার নিয়ে শুরু থেকেই বিপাকে পড়ে। বার বার টেন্ডার আহবান করলেও কেউ অংশ গ্রহণ করেনি। শেষমেষ পাঁচ দফা দরপত্র আহŸানের পর ১১ কোটি ১৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৫ টাকা ব্যয়ে এ কাজ পান মেসার্স এসএস এন্ড এমটি (জেভি)। এ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা গোপালগঞ্জ শহরের পাঁচুরিয়া এলাকার মধুমতি সুপার মার্কেট। শহরের কাঠেরপুল থেকে বিরামপুর পর্যন্ত নদের মোট চার কিলোমিটার খননের গড় গভীরতা ২.৭৫ মিটার ও গড় প্রশস্থ হবে ৪৫ মিটার টপ টপ। এ খনন কাজ শুরুর তারিখ ছিল ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট ও কাজ শেষ হবার তারিখ বেধে দেয়া ছিল ২০২০ সালের ২০ জুন। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় সে মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছিল ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরবর্তীতে নানা জটিলতায় সে মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধি করা হয়।

খনন কাজে জটিলতার কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম গত ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি ভৈরব নদের খনন এলাকা পরিদর্শন করেন ও খনন কাজ দ্রæত শেষ করার তাগিদ দেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তিনি যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজে খনন কাজের ঠিকাদার, দপ্তরের কর্মকর্তা ও নাগরিক অধিকার আন্দোলন নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন। কিন্তু কাজ হয়নি। খনন কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন। যদিও মাঝে করোনা মহামারি কাজটি খানিকটা পিছিয়ে দিয়েছিল। অবশ্য খনন কাজ নিয়ে মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমানে চলছে ভৈরব পাড়ের শোভবর্ধনে কাজ। নদের দড়াটানা অংশের দক্ষিণপাড়ে হযরত গরীব শাহ (রা:) এর মাজারের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে পার্ক। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পে নদের ওই অংশের দু’পাড় বাধাই, সোন্দর্য বর্ধন ও নানা বিনোদন সামগ্রী বসানো হচ্ছে। এ কাজ শেষ হলে মানুষ নদের পাড়ে বসে সময় কাটানো ও বিনোদনের স্থান পাবেন। আর এ কাজের মাধ্যমেই শহরবাসীর প্রত্যাশিত ভৈরব খননের দাবি পূরণ হয়েছে।

এছাড়া, যশোর পৌরসভার উদ্যোগে মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১৫ সাল থেকে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু হয়। প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ফুটপাত ও সড়কের উন্নয়ন কাজ করা হয়। যার মাধ্যমে শহরের গোটা চিত্র বদলে যায়। এডিবির সহায়তায় এ উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।

ভৈরব নদ খননের ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও বর্ষার সময় নদে পানি বৃদ্ধির কারণে খনন কাজের গতি কমে যায়। পরে ড্রেজিং মেশিনের মাধ্যমে খনন অব্যাহত রাখা হয়। এছাড়া নদের উভয় পাশে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। এভাবেই সকল নিয়মনীতি মেনে খনন কাজ শেষ করা হয়েছে। যশোরবাসীর প্রত্যাশানুযায়ী সুন্দরভাবে নদ খনন করা হয়েছে। বর্তমানে নদের পাড়ের শোভাবর্ধন ও পার্ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নের বিষয়ে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে যশোর সড়ক বিভাগের আওতাধীন সব সড়ক ভালো অবস্থায় রয়েছে। ভাঙাচুরা তেমন কোন সড়ক নেই। সড়ক উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে যশোরবাসী।

যশোর শহরের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিষয়ে পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ বলেন, ইতিমধ্যে পৌরসভার উদ্যোগে শহরের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। আগামীতেও এ উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে দাতা সংস্থা এডিবি কর্মকর্তাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর ও তাদের প্রতিনিধিদল যশোর পরিদর্শন এবং পৌরসভায় বৈঠক করেছেন। তাদের কাছ থেকেও শত কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দের আশা করছে পৌরসভা। আর এ বরাদ্দ পাওয়া গেলে আরো পাল্টে যাবে গোটা যশোর শহর।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!