খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বেতবুনিয়া মাদ্রাসা রোডে সোলাদানা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হকের নির্বাচনী পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে ২৭ মার্চ তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল মান্নান গাজী ও তার কর্মী-সমার্থকরা অতর্কিত হামলা চালায়। পরদিন ২৮ মার্চ স্বপরিবারে আমেরিকায় অবস্থানরত প্রবাসী বিজন কুমার মন্ডলের নাম উল্লেখসহ ৬৩ জনের বিরুদ্ধে পাইকগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মান্নান গাজীর আপন ভাই রবিউল ইসলাম গাজী। এরপর থেকে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন শুরু করেছে সন্ত্রাসীরা।
শনিবার বেলা ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন পাইকগাছার দক্ষিণ কাইনমুখী গ্রামের মৃত রেবতী মন্ডলের পুত্র মন্ডল রঞ্জন কুমার । এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে ক্ষতিগ্রস্তরা।
লিখিত বক্তব্যে মন্ডল রঞ্জন কুমার বলেন, “গত ২৭ মার্চ সকালে পাইকগাছার বেতবুনিয়া মাদ্রাসা রোডে ইউপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হকের নির্বাচনী পোষ্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল মান্নান গাজী ও তার কর্মী-সমার্থকরা অতর্কিত হামলা চালায়। এঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হকসহ কয়েকজন রক্তাক্ত জখম হন। কিন্তু বিষ্ময়কর ব্যাপার হল- ঘটনার পরদিন ২৮ মার্চ প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল মান্নান গাজীর ভাই মোঃ রবিউল ইসলাম গাজী বাদী হয়ে ৬৩ জনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাত আরো ৫০-৬০জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আমেরিকায় অবস্থানরত প্রবাসী তার ভাই বিজন মন্ডলকে ৬২ নং এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। ইতোপূর্বে একাধিকবার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়রানি করতে বানোয়াট ও মিথ্যা অভিযোগের মামলা দায়ের করলেও আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সে সব মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন তার ভাই ইউনিয়ন তাঁতী লীগের সাবেক সভাপতি বিজন মন্ডল। কল্প-কাহিনীর বানোয়াট অভিযোগে হয়রানিমূলক মামলায় শায়েস্তা করতে না পেরে এখন আমাকে ও আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে আব্দুল মান্নান গাজী ও তার পোষ্য সন্ত্রাসীরা।”
তিনি আরও বলেছেন, সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৫ জুলাই স্বপরিবারে দেশে এসে ২৩ সেপ্টেম্বর তার ভাই বিজন কুমার মন্ডল আবার স্বপরিবারে আমেরিকাতে ফিরে গেছেন। সেই থেকে অদ্যবধি আমেরিকাতেই অবস্থান করছেন বিজন মন্ডল। কিন্তু গত ২৮ মার্চ পাইকগাছা থানায় দায়েরকৃত ৩১ নং মামলায় ৬২ নং এজাহারনামীয় আসামী করা হয়েছে তাকেই। হয়রানি করার জন্যেই এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বিজন কুমার মন্ডলকে আসামি করা হয়েছে। এখানেই ক্ষ্যান্ত হয়নি সন্ত্রাসীরা- এখন তাকে ও তার পরিবারকে জীবনের তরে শেষ করে দেবার হুমকি দিচ্ছে; তাই প্রাণ ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন রঞ্জন কুমার মন্ডল ও তার পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, পাইকগাছার সোলাদানা ইউনিয়নের স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শতাধিক বিঘা জমি জবর দখলে রেখে বিনা হারিতে বহুকাল যাবত ঘের করেছিল আব্দুল মান্নান গাজী গং। পরে ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হকের সহযোগিতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই ঘের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। সেই থেকে নানাভাবে হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানো ও নির্যাতন, হুমকি-ধামকি দিচ্ছে আব্দুল মান্নান গাজী ও তার লোকজন।
এখন সোলাদানা ইউনিয়নের অধিকাংশ হিন্দু পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে বলে ‘এ দেশ তোদের নয়, বাঁচতে চাইলে জমি-জমা ফেলে ভারতে চলে যা।’ গত ২৮ মার্চ নৌকা প্রতীকের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মান্নান গাজীর ভাই মোঃ রবিউল ইসলাম গাজী বাদী হয়ে পাইকগাছা থানায় মিথ্যা অভিযোগে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ধর্মমন্ত্রীসহ প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পরিবারটি।