খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  দাবদহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ল ৫ দিন, খুলবে ২৮ এপ্রিল
উদ্বোধন করলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ

যশোরে প্রবীণ নবীনের স্বপ্নের ঠিকানা ‘আমাদের বাড়ি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো প্রবীণ ও শিশুদের স্বপ্ন নিবাস ‘আমাদের বাড়ি’। একসাথে প্রবীণ ও নবীনের মেলবন্ধনে প্রফেসর ডাক্তার এম এ রশীদের মানবিক উদ্যোগ ‘আমাদের বাড়ি’ নতুন করে প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠলো।
যশোর সদর উপজেলার নাটুয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেক দীর্ঘদিন বিএসডিসি অফিসে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। ঝিনাইদহের চাকলাপাড়ার ওয়াহিদা বেগমের সাথে সংসারে আবদ্ধ হন ১৯৭১ সালে। সংসার জীবনে দুই ছেলে জন্ম নেয়ার পর নির্মম নিয়তির রোষানলে দু’জনেই মারা যায়। পরবর্তীতে আর কোন সন্তান না হওয়ায় দু’জনার সংসার চলছিলো বেদনার মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে পড়েন দু’জনেই। কর্মহীন আর অনিশ্চয়তার জীবনে তাদের চোখে আলোকবর্তিকা হয়ে আসে আমাদের বাড়ি। তারা দু’জনেই এখন আমাদের বাড়ির বাসিন্দা। বিনামূল্যে থাকা খাওয়া আর আন্তরিক পরিচর্যার কথা বলতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন আব্দুল খালেক।

আমাদের বাড়িতে তার মুখোমুখি কক্ষের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ গোলাম মোস্তফা দুলু। মাগুরার নিজনান্দলি গ্রাম তার জন্মভিটা হলেও কর্মসূত্রে তিনি যশোর বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকায় বসবাস করেছেন প্রায় পঞ্চাশ বছর। এক ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রী মোশারা বেগম পিয়ারীকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। এক সময় চাকরি করেছেন কৃষি ব্যাংক যশোরে শাখার ড্রাইভার পদে। পরবর্তীতে ড্রাইভারি পেশায় কাটিয়েছেন জীবনের বাকিটা সময়। বছর দুয়েক আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তার স্ত্রী মারা যান। তারপর তিনিও স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। সে যাত্রায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও শয্যাশায়ী হয়েছেন। সন্তান সন্ততিরা কর্মব্যস্ত জীবন আর নিজ সংসার সামলানোর ব্যস্ততায় সময় দিতে পারেন না বাবা গোলাম মোস্তফাকে। একাকিত্ব আর অসহায়ত্বে নিভতে বসেছিল তার জীবন প্রদীপ। সেই গোলাম মোস্তফা দুলু এখন দুঃসময়কে পিছে ফেলে হয়েছেন আমাদের বাড়ির বাসিন্দা। তাদের মাঝখানের বাসিন্দা ছোট্ট নিরব হোসেন, রবিউল ইসলাম, রমজান হোসেন। তারাও পরিবার ছেড়ে এসে আমাদের বাড়িতে বসবাস করতে গিয়ে পেয়েছে আরেক পরিবার। তাদের মতো আরো অনেকের এখন স্বপ্ন নিবাস আমাদের বাড়ি।

যশোর সদর উপজেলার নাটুয়াপাড়ায় সমন্বিত প্রবীণ ও শিশু নিবাস নামে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। আজ তা পূর্ণতা পেল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের যৌথ অংশিদায়িত্বে ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট আমাদের বাড়ির স্বপ্নের বীজ বপন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়েল তৎকালীন সচিব জিল্লার রহমান। শনিবার সেই বীজ থেকে গড়ে ওঠা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করলেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
এদিন দুপুর একটায় আমাদের বাড়ির প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ফলক উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে আমাদের বাড়ির উদ্বোধন করা হয়। পরে কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলামে খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও যশোর-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। আমিন্ত্রিত অতিথি ছিলেন সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডক্টর আবু সালেহ মোস্তাফা কামাল, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরী ও যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। স্বাগত বক্তৃতা করেন আমাদের বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ও জিএমএসএসের সভাপতি প্রফেসর ডাক্তার এম এ রশীদ। বক্তৃতা করেন খুলনা বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুর রহমান, আমাদের বাড়ি প্রকল্প পরিচালক ও সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক অসীত কুমার সাহা, গণপূর্ত অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমন্ত্রিত অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন জেএমএসএসের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডাক্তার আফজালুর করিম।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলো দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। দেশের অদম্য অগ্রযাত্রায় সবাইকে শামিল হতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে আগামী নির্বাচনে আবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করা যায়।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বদলে যাচ্ছে দেশ। জনগণের কল্যাণ সাধনই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। তিনি বলেন, ডাক্তার এম এ রশীদ এখন একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস হয়ে গেলেন। তিনি আমাদের বাড়ি নামে প্রবীণ ও নবীনদের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা আজ থেকে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলো।

আমাদের বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডাক্তার এম এ রশীদ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ প্রবীণ ও শিশুদের জন্য সুখের ঠিকানা আমাদের বাড়ি। যেখানে একটি কক্ষে থাকতে পারবেন একজন প্রবীণ ও একজন শিশু। সম্পর্কটা হবে নানা-নাতি অথবা দাদা-পোতার। নিজের বাড়িতে বাস করে যেমন সকলেই জীবন কাটিয়ে দেয়, ঠিক তেমনভাবে যারা অসচ্ছল বা সচ্ছল হয়েও দেখা শোনার কেউ নেই, তারা আমাদের বাড়িতে থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, আত্মকর্মসংস্থান ও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। সচ্ছলরাও তাদের আর্থিক সঙ্গতি অনুসারে কমমূল্যে এই সেবা পাবেন। এ প্রকল্পের আওতায় নিজেদেরকে কর্মক্ষম, শারীরিকভাবে সুস্থ ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে দিন কাটাবার জন্য আছে ব্যায়ামাগার। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য রয়েছে হাঁস, মুরগি, গবাদী পশু পালন, মাছ চাষ, ক্ষেত খামার ও সহজসাধ্য হাতের কাজ করে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করার বিভিন্ন ব্যবস্থা। একই ক্যাম্পাসে থাকা-খাওয়া, স্বাস্থ্যসেবা, আনুষ্ঠানিক, উপ-অনুষ্ঠানিক, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা।

যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের নাটুয়াপাড়া গ্রামে এক একর ১৫ শতক জমির ওপর নির্মিত আমাদের বাড়ি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্মসূচির আওতায় ৮০ ভাগ ব্যয় বহন করছে সরকার। প্রাক্কলিত ব্যয় ২২ কোটি টাকা ধরা হলেও তা শেষ করা হয়েছে এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা সাশ্রয়ে। এ টাকা জমা দেয়া হয়েছে সরকারি কোষাগারে।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!