খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  নোয়াখালীর হাতিয়ায় ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজ ডুবি
  অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা চুয়েট; শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ
  প্রতিবাদে বাসে আগুন ও প্রশাসনিক ভবনে তালা
  আগামী রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি, ৪ মে শনিবারও শ্রেণী কার্যক্রম চালু থাকবে : শিক্ষা মন্ত্রণালয়
  সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

আসামি ফয়সালের জবানিতে কলেজছাত্র আমিনুর হত্যার বর্ণনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিহত আমিনুর ও আটক যুবক ফয়সাল

রাত সাড়ে আটটার আগে আমিনুরকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেয় ফয়সাল। বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাইকগাছা উপজেলার আগড়ঘাটা বাজারের পাশে কপোতাক্ষ নদীর তীরে মিলিত হয় তারা দু’জন। প্রথমে ঘুমের বড়ি মিশ্রিত জুস খাওয়ানো হয়। এরপর তারা উভয়ে একসাথে সিগারেট সেবন করে। আমিনুরের জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা হলে দা দিয়ে গলায় ও ঘাড়ে কুপিয়ে জখম করে নদীতে ফেলে দেয় ফয়সাল। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) কপিলমুনির কলেজ ছাত্র আমিনুর সরদার হত্যাকান্ডে গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি ফয়সাল খুনের বর্ণনা করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদলতে। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ওই আদালতের বিচারক মো: মনিরুজ্জামান।

পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: জিয়াউর রহমান জানান, ফয়সাল রংপুর সেনানিবাসের গলফ খেলোয়াড়দের বল টুকিয়ে দিত। সেখানে থাকা অবস্থায় একটা মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক হয়। মেয়েটি সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য তাকে আর ওয়ান ফাইভ নামে একটি মোটরসাইকেল ক্রয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। এরমধ্যে ওই সেনানিবাসের কর্মকর্তারা তাকে একটি অপকর্মের জন্য সেখান থেকে বের করে দেয়। রংপুর থেকে পাইকগাছায় চলে আসে। মাথায় রয়েছে প্রেমিকাকে দেওয়া ওয়াদা। কী করবে ভেবে পারছিল না ফয়সাল। টাকা সংগ্রহের জন্য বিত্তবানদের ছেলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করতে থাকে সে।

পরিকল্পনা মোতাবেক ধনীর দুলালের খোঁজও পেয়ে যায় ফয়সাল। আমিনুরের পরিচিত একজনকে রক্ত দেওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। আট দিনের পরিচয়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গভীর থেকে গভীরতর হয়। হত্যাকান্ডের আগের দিন রাতে আমিনুরকে ঘটনাস্থলে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে আসামি ফয়সাল। কিন্তু ভেবেছিলেন খুনের চেয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিবে। পরেরদিন (৭ নভেম্বর) একই স্থানে নিয়ে ভিকটিমকে জুসের সাথে ১৪ টি ঘুমের ঔষধ পান করায় ফয়সাল। তারা উভয় একসাথে সিগারেট সেবন করে। অবচেতনের ভাব আসলে আসামি দা দিয়ে প্রথমে আমিনুলের গলায় কোঁপ দেয়। ভিকটিম চিৎকার করলে ঘাড়ে আরও একটি কোঁপ দেয় আসামি। পরে তাকে টেনে নদীতে ফেলে দেয় ফয়সাল।

হত্যাকান্ডের পর ফয়সাল ভিকটিমের মোবাইল দিয়ে তার বাবার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। প্রথমে বিষয়টি তেমন একটি গুরুত্ব দেয়নি আমিনুরের পিতা সুরমান সরদার। রাতে ছেলে বাড়িতে ফিরে না আসায় পিতা চিন্তিত হয়ে পড়েন। পরেরদিন সকালে বাড়ির সকলে খোঁজ নিতে থাকে। এরমধ্যে আমিনুরের মোবাইল দিয়ে আবারও ফোন দেয় আসামি ফয়সাল। তখন ডিমান্ড কমিয়ে দিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করে সে। পরে বিষয়টি পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জকে জানান নিহতের পিতা। ওসির পরামর্শে টাকা দিতে রাজি হয় নিহতের পিতা। অপহরণকারীর পরিকল্পনা মোতাবেক তিনি টাকাটা ভিলেজ পাইকগাছা ব্রীজের পাশে বটগাছের নীচে রেখে আসেন। এর আগে পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে ফেলে। ফয়সাল টাকার ব্যাগ ধরা মাত্র পুলিশের নিকট গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আমিনুরকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে পুলিশের নিকট। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাইলে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে আদালতে হাজির কর হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো: তাকবীর হুসাইন জানান, হত্যাকান্ডের সময় নদীতে স্রোত ছিল। দু’দিন পার হলেও লাশের অবস্থান এখনও পর্যন্ত জানতে পারেননি তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!