খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫
  গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২

আবদুল হামিদের উত্তরসূরি মসিউর রহমান?

গেজেট ডেস্ক

এ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হলো— বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হবেন?

এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সে সময় একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি পদে থাকা উচিত।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি পদ মূলত আলংকারিক। শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার কাজটি ছাড়া বাকি সব দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারা প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেন। তবে নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি কিছুটা গুরুত্ব পান। কারণ তিনি নির্বাচন কমিশনের উপযোগিতার সঙ্গে কাজ করা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিতে পারেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী অনুযায়ী, ‘সরকারের সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কমিশনকে উহার দায়িত্ব পালনে সহায়তা প্রদান করিবে এবং এই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি, কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে, যেরূপ প্রয়োজন মনে করিবেন সেইরূপ নির্দেশাবলী জারি করিতে পারিবেন।’

আবদুল হামিদের উত্তরসূরি কে হতে যাচ্ছেন, সে ব্যাপারে এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে কোনো ইঙ্গিত নেই। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এখনো এ বিষয়টি তার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেননি।

এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সংশ্লিষ্টদের আলোচনায় বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির নাম উঠে এসেছে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে যাওয়া জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনেই এ বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে হবে।

যেহেতু আওয়ামী লীগ সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে, সেহেতু এ দলেরই একজন প্রার্থীকে আব্দুল হামিদের উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচন করবেন দলের সদস্যরা।

৩৫০ সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের হাতে আছে ৩০২টি। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির হাতে ২৬টি আসন। ওয়ার্কার্স পার্টির ৪, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ও গণ ফোরামের ২টি করে, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) হাতে ১টি করে আসন রয়েছে। বাকি ৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।

বিএনপির ৭ নেতাও সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে তারা সম্প্রতি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

আবদুল হামিদ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বর্তমান মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে। সংবিধান অনুযায়ী, তাকে পুনর্নির্বাচিত করার কোনো সুযোগ নেই।

সংবিধানের ৫০ (২) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ২ মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। এই ২ মেয়াদ পরপরও হতে পারে, আবার ২ মেয়াদের মাঝে সময়ের ব্যবধানও থাকতে পারে।

২০১৩ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান আব্দুল হামিদ।

এর ৬ দিন পর জিল্লুর রহমান মারা যান।

এরপর ২২ এপ্রিল বিনা আপত্তিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন আব্দুল হামিদ। ২ দিন পর তিনি শপথ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আবারও বিনা আপত্তিতে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি।

ইতোমধ্যে, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ৬ জনের নাম নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা আলোচনা করছেন।

সূত্র জানিয়েছে, দলের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মসিউর রহমানের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হওয়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।

একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকারী খুলনার এই কৃতি সন্তান সব সময় বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও সম্প্রতি তাঁকে জনসম্মুখে খুব একটা দেখা যায়নি। তিনি প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্যও করেননি বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র।

দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার জন্য তিনি বিশ্ব ব্যাংকের কড়া সমালোচনা করেন। পরবর্তীতে কানাডার আদালতে দুর্নীতির সেই অভিযোগ খারিজ হয়।

ড. মসিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন। তাঁর রয়েছে পরিচ্ছন্ন ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিগত ক্লিন ইমেজ। ১৯৭২ হতে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব ছিলেন মসিউর রহমান। ২০০৯ সালে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর একজন প্রভাবশালী সদস্য, দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এবং সংগঠনের উপ-কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিভাগের চেয়ারম্যান। একজন দক্ষ এবং কর্মঠ সরকারি আমলা হিসেবে তাঁর রয়েছে বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন।

১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্সসহ বিএ এবং ১৯৬৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। ১৯৬৫ তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন এবং চাকুরী হতে ছুটি নিয়ে ফ্লেচার স্কুল অফ ল’ এন্ড ডিপ্লোমেসি এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলে অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পর্ক বিষয়ে লেখাপড়া করেন এবং একই বিষয়ে পিএইচডি লাভ করেন।

১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছর তিনি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে অত্যন্ত সুনামের সাথে চাকুরী করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং সভায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর লেখা বিভিন্ন বই এবং আর্টিকেল দেশে এবং বিদেশে খ্যাতনামা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

ড. মসিউর রহমানের জন্ম ১৯৪২ সালে খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুগন্ধী গ্রামে। তাঁর শৈশব কেটেছে এ গ্রামেই। ১৯৫৭ সালে তিনি তৎকালীন বাগেরহাট বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ফাস্ট গ্রেড স্কলারশীপে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৯ সালে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে ১ম বিভাগে আই এ পাস করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ বিএ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। এছাড়া হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

এ ছাড়াও, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও আলোচনায় এসেছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত শিরীন ২০১৩ সালের এপ্রিলে জাতীয় সংসদের সবচেয়ে তরুণ স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি এখনো এ দায়িত্ব পালন করছেন।

দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হকের নামও রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।

পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে খায়রুল হকের দেওয়া রায় অনুযায়ী খন্দকার মোশতাক আহমেদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলকে অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছে। তিনি বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ৩৮ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

অপর আলোচিত নাম হলো আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি আগে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

আওয়ামী লীগের টানা ৩ বারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামও উঠে এসেছে আলোচনায়। তবে ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি জানান, রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা এখনো তার হয়নি।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বুধবার তিনি জানান, মানুষ খুব শিগগির জানতে পারবে কে হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।

তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অনেকের নামই শোনা যায় এবং অনেক ধরনের গুজব শোনা যায়। সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান রাষ্ট্রপতির ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬০ থেকে ৯০ দিন আগে (পরবর্তী রাষ্ট্রপতির জন্য) নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!