খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাঙামাটির সাজেকে শ্রমিকবাহী মিনি ট্রাক পাহাড়ের খাদে পড়ে ৯ জন নিহত

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চুকনগর মার্কেটের সামনে লম্বা প্রাচীর নির্মাণ

জাহাঙ্গীর আলম, ডুমুরিয়া

আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনা উপেক্ষিত। রাতের আধাঁরে নির্মাণ লম্বা প্রাচীর। প্রতিকার চেয়েও ৫ দিনে হয়নি প্রাচীর অপসারণ। ফলে বন্ধ রয়েছে ২৫ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার মালামাল। ঘটনাটি খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের চুকনগর বাজার বাসস্ট্যান্ডে। সরেজমিন যেয়ে এবং ভুক্তভোগীদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর করা আবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

তাদের দেয়া তথ্য মতে, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগর বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন উত্তর পাশে মাত্র এক শতাংশ জমি নিয়ে স্থানীয় মোঃ আব্দুল সামাদ শেখ এর সঙ্গে মোঃ সেলিম মোড়লদের দীর্ঘদিনের বিরোধ। ওই জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে একাধিকবার স্থানীয় বাজার কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদ ও থানায় শালিশী বৈঠকেও বিষয়টি মিমাংশা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এমন সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে সৃষ্ট প্রতিকার চেয়ে মোঃ আব্দুল সামাদ শেখ আদালতের আশ্রয় নেন। খুলনা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে করা মামলার নম্বর ১৫১/২০১৬। ওই মামলার প্রেক্ষিতে আদালত বাদীর (সামাদ) পক্ষে ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর ওই জমির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। তাছাড়া যেহেতু বিরোধপূর্ণ জমির সীমানা ঘেষে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক। তাই আদালত সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ওই জমির সীমানা নির্ধারণের নির্দেশ দেন।

ওই জায়গায় ২৫ টি দোকান নির্মাণ করা হয় কয়েক যুগ আগে। সকল দোকানে ভাড়াটিয়া রয়েছে। ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ গত ১ অক্টোবর গভীর রাতে ওই দোকানসহ মার্কেটটির সামনে দিয়ে লম্বা প্রাচীর তুলে দেয় সেলিম মোড়লরা। শতাধিক লোক নিয়ে এ অপকর্মটি করতে স্থানীয় বাজার কমিটি ও শাসক দলের কতিপয় নেতার মদদ এবং প্রশাসনের কিছু দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সহযোগীতা রয়েছে বলে ভূক্তভোগিদের অভিযোগ। পাকা প্রচীর নির্মাণ করে ২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অবরুদ্ধ করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটে ১ অক্টোবর রাতে, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের চুকনগর বাস ষ্ট্যান্ড সংলগ্ন। এমন ঘটনায় রোববার দুপুরে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

ব্যবসায়ী মনীন্দ্র নন্দী, পলাশ পাল ও চয়ন সরদারসহ ২৫ ব্যবসায়ী রোবরার দুপুরে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

কান্না জড়িত কন্ঠে ওই ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থাকা ফাষ্ট ফুট, মিষ্টি বিনষ্ট হয়েছে। বন্ধ হয়েছে চিকিৎসকের চেম্বর। ক্ষতি হয়েছে লাখ লাখ টাকা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহানাজ বেগম ৩ ঘন্টার মধ্যে ব্যবসায়ীদের দোকানের সামনের প্রাচীর অপসারণ করে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টির নির্দেশ দেন বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দকে। কয়েকটি ইট অপসারণ করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন বাজার কমিটি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশ না মানায় ব্যবসায়ীরা পূনরায় সোমবার আবারও তারঁ দপ্তরে ধর্না দেন। তিনি পূনরায় প্রাচীর অপসারণ করার নির্দেশ দিলেও অদৃশ্য কারণে তা মানা হচ্ছে না। নির্দেশ না মানা সম্পর্কে বাজার কমিটির নেতারা সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না।

মোঃ আব্দুর সামাদ বলেন, প্রতিপক্ষরা আদালতে নির্দেশনা এবং ইউএনওর নির্দেশ অমান্য করেছেন। তবে অবৈধ প্রচীন এখনো অপসারণ করা হয়নি। মুক্ত হয়নি ২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

মোঃ সেলিম মোড়ল বলেন, দলিলপত্রে আমি জমি দাবীদার। তাই চুগনগর বাজার কমিটি এবং স্থানীয় নেতাদের সহযোগীতার আমি শ্রমিক দিয়ে আমার জমি আমি প্রাচীর নির্মাণ করেছি। তাতে সমস্যা কোথায়?

বাজার কমিটির নেতা অহিদুল ইমলাম সরদার, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা এবিএম শফিকুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা সরদার শরিফুল ইমলাম জানান, তারা উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ নিঃপত্তি করার চেষ্টা করছেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাহনাজ বেগম জানান, আদালতের নির্দেশনা সেলিম মোড়লরা অমান্য করে পাকা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। ফলে অনেক গুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ভূক্তভোগী ব্যবসায়ীরা রোববার লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেলিম মোড়লরা অবৈধভাবে প্রচীর নির্মাণ করেছেন। তাদের প্রচীর অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার আমার প্রতিনিধিসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তৃপক্ষ সীমানা নির্ধারণে সরেজমিন আসছেন। যদি অন্যের জমির মধ্যে প্রাচীর ওঠে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!