খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  নোয়াখালীর হাতিয়ায় ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজ ডুবি
  অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা চুয়েট; শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ
  প্রতিবাদে বাসে আগুন ও প্রশাসনিক ভবনে তালা
  আগামী রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি, ৪ মে শনিবারও শ্রেণী কার্যক্রম চালু থাকবে : শিক্ষা মন্ত্রণালয়
  সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

অহংকার এক ঘাতক ব্যাধি

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী

অহংকার একটি ভয়ংকর ব্যাধি। এটি ক্যান্সারের মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এটি শুরু হয় অন্তরে। এরপর এটি প্রকাশিত হয় ব্যক্তিগত আচরণে, যার প্রভাব ক্রমান্বয়ে সংক্রমিত হয় পরিবার এবং সমাজে। সুপ্ত আগুন যেমন শুকনা কাঠকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়, ঠিক তেমনি এটা মানুষের সমস্ত নেক আমলকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।
অহংকার এমন মারাত্মক গোনাহ যা মানুষকে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।এক হাদিসে এসেছে,‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান]

প্রশ্ন হলো অহংকার কী? সরল উত্তর হচ্ছে, কোনো বিষয়ে নিজেকে বড় মনে করে অন্য মানুষকে তুচ্ছ মনে করার নামই অহংকার। শক্তিতে, সামর্থ্য, বয়সে, অভিজ্ঞতায় ত্রিশ বছরের যুবক যতটা সমৃদ্ধ, আট বছরের একটি ছেলে তো সবক্ষেত্রেই তার তুলনায় পিছিয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বাস্তবেই যে ছোট তাকে ছোট গণ্য করা অহংকার নয়। বরং অহংকার হচ্ছে, সে ছোট বলে তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করা; আর নিজের শক্তি, সামর্থ্য, বয়স, জ্ঞান, অভিজ্ঞতাকে নিজস্ব অর্জন মনে করে নিজের ভিতরে এক দাম্ভিকতার ভাব তৈরি করা। নিজেকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ট বা সুপেরিওর ভাবা। এই সুপেরিওরিটির মানুষকতা ও দাম্ভিকতা থেকেই অহংকারের সূত্রপাত হয়।

এই অহংকার হচ্ছে সকল পাপের মূল। একে আরবীতে বলা হয় উম্মুল আমরায বা সকল রোগের মা। বরং বলা যায়, এ জগতের প্রথম পাপই হচ্ছে অহংকার। এটি এমন এক ব্যাধি যা ইবলিশকে শয়তানে পরিণত করেছিল। আমরা সকলেই জানি পৃথিবীর প্রথম মানুষ হলেন, হয়রত আদম আলাইহিস-সালাম। মহান আল্লাহপাক আদম আলাইহিস-সালামকে সৃষ্টির পর উপস্থিত সবাইকে সম্মানের সিজদা করতে বললেন। উপস্থিত সকল ফিরিশতারা তাকে সেজদা করলো। শুধুমাত্র ইবলিশ সেজদা করল না। সে অহংকার করল। আল্লাহপাক তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেন সেজদা করলে না? সেএই যুক্ত দেখালো যে, আমি আগুনের তৈরি আর আদম মাটির তৈরি। অর্থাৎ তার মনের মধ্যে সুপেরিওরিটির মানুষকতা ও দাম্ভিকতার ভাব তৈরি হলো যে, আগুনের শক্তি ও মর্যাদা মাটির চেয়ে বেশী। এভাবেই সে অহংকার করে বসলো। পরিণত হলো শয়তানে।

অহংকার একটি ঘাতক ব্যাধি। ঘাতক ব্যাধি বলছি এই কারণে যে, তা মানুষের অন্তর্জগৎকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়।
আল্লাহপাক এরশাদ করেন, পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার প্রকাশ করে তাদেরকে অবশ্যই আমি আমার নিদর্শনাবলি থেকে বিমুখ করে রাখব। [সূরা আ‘রাফ: ১৪৬]

এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, তোমাদের মাবুদ এক মাবুদ। সুতরাং যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের অন্তরে অবিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহংকারে লিপ্ত। … নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না। [সূরা নূহ: ২২-২৩]

এই আয়াতগুলো থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হলো-

১. অহংকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর নিদর্শন থেকে বিমুখ করে রাখেন। এতে তার অন্তর ও চোখ সত্য অনুধাবন এবং সঠিক পথ অবলম্বন থেকে ‘অন্ধ’ হয়ে যায়।
২. অহংকার মানুষকে এমনকি কুফরি পর্যন্ত পৌছে দেয়।
৩. অহংকার তো কেবল তারাই করতে পারে যাদের আল্লাাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস নেই, পরকালে বিশ্বাস নেই।
৪. অহংকারীকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না।
কথা হলো, এই ঘাতকব্যাধি অহংকার থেকে বাঁচার উপায় কি?

অহংকার থেকে মুক্ত থাকার কয়েকটি উপায় আছে। যেমন:
১. ধন সম্পদ, শক্তি, সামর্থ্য, জ্ঞান এগুলোকে মহান আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত মনে করা। অনেক পাগল আছে যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। নিজের কাপড়ও নিজের গায়ে রাখতে পারে না। সে সব কিছু থেকেই বঞ্চিত। আল্লাহপাক চাইলে আমাকে ওই রকম পাগল বানাতে পারতেন।
২. নিজের প্রকৃত উৎস ও হাকিকতকে জানা। মুতাররিফ ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) ছিলেন একজন বিখ্যাত বুযুর্গ। এক লোক তার পাশ দিয়ে রেশমি কাপড় পরে দম্ভভরে হেঁটে যাচ্ছিল। বুযুর্গ তাকে বললেন : এভাবে দম্ভভরে হাঁটছ কেন? সে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়-আপনি জানেন, আমি কে? বুযুর্গ উত্তর দিলেন, খুব ভালো করেই জানি। তোমার স‚চনা এক বিন্দু নাপাক পানি থেকে, শেষে হবে গলিত লাশ; আর এ দুয়ের মাঝে তুমি মল বহনকারী এক দেহ। (তাফসীরে কুরতুবী, স‚রা মাআরিজের ৩৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর)
৩. সব নেয়ামতের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা ।
৪. নিজের শেষ পরিণতি নিয়ে সবসময় চিন্তা করা । আমি জানি না, আমার কী পরিণতি কি হবে। যাকে আমি ছোট মনে করছি সে হয়ত মৃত্যুর আগে ভালো আমল করে জান্নাতে যাবে, আর আমি খারাপ কাজ করে জাহান্নামে যাবো।

অহংকারী ব্যক্তিকে কেহই পছন্দ করেন না। সবার চোখেই সে ঘৃণিত। তাই আসুন আমরা সবাই মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করি যাতে তিনি আমাদেরকে অহংকার মুক্ত রাখেন এবং আমাদের ভালো আমলগুলোকে কবুল করেন।

(লেখক: মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!