খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
  সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন মারা গেছেন
  নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত
  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

অসহায় ও রোগীদের জন্য স্বল্পমূল্যে মুজিবরের ডাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছোটবেলায় বাবা মরার পর আমি অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। কতটুকু কষ্ট করতে হয় একটা অসহায় লোককে, সেটা আমি বুঝি। আমি লঞ্চে করে ডাব বিক্রি করতাম আট‌আনা করে। তখন থেকে খুব কষ্ট করছি। এ জন্য মানুষের একটু হেল্প করার চেষ্টা করি, যাতে অসহায় কোনো লোক কষ্ট করার পর সাধ্যের মধ্যে ডাব খেতে পারে।

কথাগুলো খুলনা মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকার ১ নং গেটে সামনে ডাব বিক্রেতা মো. মুজিবর জোমার্দ্দারের। তার স্ত্রী, এক ছেলে এবং তিন মেয়ে রয়েছে। তিনি দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামের শহিদের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। প্রতিদিন ভৈরব নদী পার হয়ে খুলনার নিউমার্কেট এলাকায় ডাব বিক্রি করতে আসেন। এ প্রতিবেদকের কাছে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন মুজিবর।

তিনি বলেন, একটা অসহায় মানুষকে ছাড় দিলে, ৫০ টাকার ডাব ২০ টাকায় পেলে ওই লোকটা খেতে পারবে। কিন্তু ৫০ টাকা চাইলে ওই লোকটা ডাব খেতে পারবে না। এ জন্য আল্লাহর রহমতে উনারাও আসে। তাদের কাছে ৫০/৬০ টাকার ডাব ২০ টাকায় বিক্রি করি। আর একই ডাব অন্যদের কাছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করি। এতে আমার পুষে যায়। ফলে ভালোভাবেই চলে যাচ্ছে।

আমার বাবা মরহুম মোকসের জোমার্দ্দারের ইচ্ছা ও নির্দেশ ছিল ‘তুমি সৎভাবে ইনকাম করবা, তোমার কোনো বিপদ হবে না। তোমারে আল্লাহ হেল্প করবে। তাই নিজের ছোটবেলার কষ্ট দূর করতে অসহায় ও রোগীদের সেবায় কম মূল্যে ডাব বিক্রি করছেন মোঃ মুজিবর জোমার্দ্দার।

মানবিক এই ডাব বিক্রেতা মুজিবর বলেন, সাত বছর ধরে নিউমার্কেট এলাকায় ডাব বিক্রি করছি। অসহায়, দুস্থ, রোজাদার ও রোগীদের জন্য কিছুটা ছাড় দিয়ে ডাব বিক্রি করছি। রোগীদের জন্য প্রতিটি ডাবে ৫ টাকা ও রোজাদার ব্যক্তির জন্য ৫ টাকা ছাড়ে ডাব বিক্রি করছি। আর অসহায় ও দুস্থদের জন্য ২০ টাকা মূল্যে ডাব বিক্রি করছি। এ ছাড়া পুরো রমজান মাসেই প্রতিটি ডাবে ৫ টাকা করে ছাড় দিই।

মূলত ১৯৭৩ সাল থেকে ডাবের ব্যবসা শুরু করেন মুজিবর। ছোট থাকতে বরগুনা থেকে ঢাকাগামী লঞ্চে মাত্র ৫০ পয়সায় ডাব বিক্রি করতেন তিনি। নব্বই দশকে মুজিবর বরিশাল থেকে খুলনায় চলে আসেন। সেখানে পিপলস মিলে চাকরি করতেন। পাশাপাশি ডাব ও মুদির দোকানের ব্যবসা করতেন। তবে মুদিতে লোকসান আর মিলের চাকরি হারানোর পর তিনি ডাব ব্যবসায় পুরো মনোযোগ দেন।

বর্তমানে ডাবের দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকা। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি ডাব বিক্রি করেন তিনি। তাই মুজিবরের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে ডাব খেতে পেরে খুশি কর্মজীবী ও অসহায় মানুষগুলো। তারা বলছেন, শুধু মুজিবর নন, সবাই যদি একে অন্যের পাশে এভাবে দাঁড়াত, তাহলে দেশে অসহায় মানুষগুলো একটু শান্তিতে থাকতে পারত।

সকাল থেকে ভ্যান চালিয়ে ঘেমেনেয়ে ডাব খেতে এসেছেন আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, আমি ভ্যান চালাই। রোদে ভ্যান চালাতে হয়। ডাব খাইলে শরীরটা একটু ভালো লাগে। ভ্যান চালিয়ে ৫০-৬০ টাকা দিয়ে ডাব কিনে খাওয়া তো সম্ভব হয় না। এ জন্য এই (মুজিবর) কাকার কাছে এলে ২০ টাকায় ডাব দেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোর্তজা আলী বলেন, এটা একটা মহতী উদ্যোগ। এখনকার জামানায় আমরা কারও কথা ভাবি না। উনি একজন ডাব বিক্রেতা হয়ে অসহায় মানুষের জন্য ২০ টাকায় ডাব বিক্রি করেন, এটা উনার মানবিকতা। উনি মানুষের জন্য কিছু করতে চান, এটা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে।

এমন যদি প্রতিটা মানুষ চিন্তা করে, তাহলে হয়তো সমাজের প্রেক্ষাপটটা পরিবর্তন হয়ে যাবে। মানুষ আর নিজেকে অসহায় অনুভব করবে না। তারা ভাববে যে ‘না, আমাদের জন্যও কেউ চিন্তা করে’। আমি তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। একই সাথে আমরা সবাই তার দেখাদেখি এ ধরনের মহৎ কাজে এগিয়ে আসব, সেই প্রত্যাশা করি।

খুলনা গেজেট/ এস আই/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!