খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাঙ্গামাটির সাজেকের উদয়পুর সড়কে ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
  চাঁদপুরের হবিগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে মা ও শিশুর মৃত্যু
  নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সম্পাদককে দল থেকে অব্যাহতি

অশনি’র শঙ্কায় উপকূলবাসির নির্ঘুম রাত, ভয় দুর্বল বেড়িবাঁধ

নিতিশ সানা, কয়রা

কপোতাক্ষ, শাকবেড়িয়া ও কয়রা নদী ঘিরে আছে উপকূলীয় খুলনার কয়রা উপজেলা। আর এখানকার মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম বেড়িবাঁধ। ঘূর্ণিঝড় আইলা, ফণী, বুলবুল এবং সর্বশেষ গেল বছর একই সময়ে সুপার সাইক্লোন আমফান ও ইয়াস তছনছ করে দিয়ে যায় উপকূলীয় জনপদ।

উপকূলীয় এই উপজেলাটির চারটি ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের চৌদ্দটি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভেঙে গোটা এলাকা নোনা পানিতে নিমজ্জিত হয়। বিধ্বস্ত হয় হাজার হাজার ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট গাছপালা গবাদি পশু মৎস্য ঘের জমির ফসল। সর্বশান্ত হয় জনপদের মানুষ। আমফান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ গুলোর কাজ এখনো চলমান রয়েছে।

উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ গুলোর মধ্যে সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সামনে হতে হামকুড়ার গোড়া। মহারাজপুর ইউনিয়নের সুতির অফিস ও দশালিয়া। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াপদা বাঁধ গাববুনিয়া, মাটিয়াভাঙ্গা (কোবাদক ফরেষ্ট অফিস থেকে ঘড়িলাল বাজার) আংটিহারা ( সুইচ গেট থেকে পুলিশ ফাঁড়ি), পাতাখালি (খাশিটানা বাঁধ থেকে জোড়শিং বাজার) উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী-তীরবর্তী যেসব এলাকায় এখনও টেকসই বেড়িবাঁধ হয়নি, সেসব গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মাঝে ‘আসানি’ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

তাদের অধিকাংশেরই নেই দুর্যোগ সহনীয় বাড়িঘর। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২০ হাজার পরিবারের অনেকেই এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। এর মধ্যে আরেকটি দুর্যোগের সতর্ক সংকেত তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে ঘূর্ণিঝড় আশনি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

‘দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রামের বাসিন্দা কামাল মোল্লা জানায়, সুপার সাইক্লোন আইলায় তার ঘর ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে যায়, এর পর নতুন করে আবার একটা ঘর বাধেন তবে সেটিও নদী ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে যাওয়ায়। পরে তিনি চলে যান রাঙামাটি। ৫ বছর পর ফিরে এসে আবারও মাথা গোজার ঠাই করেছেন। কিন্তু তার বাড়ির সামনে দিয়ে আবারও ভাঙ্গন লেগেছে। যেকোন সময় জলোচ্ছ্বাসে সেখান থেকে ভেঙে যেতে পারে। তাই আশনির আশংকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিনি। এবার ভাঙ্গলে আবারও ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে।’

একই গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মিলন হোসেন বলেন, নদীতে একটু জোয়ার বেশি হলে রাস্তা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ২ নম্বর সংকেত চলছে। জোড়শিং ট্যাকের মাথা এই পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাজ না করলে আশনি আঘাত হানলে এখান থেকে ভেঙে হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হবে।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, উপকূলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবী টেকসই বেড়িবাঁধ। তবে আম্পান ও ইয়াসে ষাট দশকের জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যাপক কাজ করেছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় আতঙ্ক বেড়ে গেছে ঐসব এলাকার মানুষের। বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা। কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট ও মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সমনে হতে হামকুড়ার গড়া। মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া ও সুতির কোণা।

উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আশানি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বরদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১১৮ টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হবে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে কাজ করবে সরকারি কর্মকর্তা, সিপিপি, বেসরকারি এনজিও’র স্বেচ্ছাসেবকরা।

সেকশন-২ সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসনাইন মাহামুদু বলেন, আম্পান ও ইয়াসের পর থেকে কয়রা উপজেলায় ঝুঁকি পূর্ণ বেড়িবাঁধে কাজ চলছে। তবে ঘুর্ণিঝড় অশনিতে কয়রা উপজেলার দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিরা সে সব এলাকায় কাজ করছে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!