খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর সদরঘাটের শ্যামবাজারঘাটে লঞ্চে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
  বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব
  নাটোরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে এক ট্রাক ড্রাইভার নিহত

অর্থনীতি সমিতির ২০৯৪১১২ কোটি টাকার বিকল্প জনগণতান্ত্রিক বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা, কভিড-১৯-এর মহামারি এবং ইউরোপে যুদ্ধের অনিশ্চিত-অভিঘাত হিসাবে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষে ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প জনজণতান্ত্রিক বাজেট পেশ করেছে অর্থনীতি সমিতি।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকালে ঢাকায় সমিতির সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ বাজেট উপস্থাপন করেন।

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বিকল্প জনগণতান্ত্রিক বাজেটের মোট আকার (পরিচালন ও উন্নয়ন মিলিয়ে) হবে ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) সরকার প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৩.০৯ গুণ বেশি। প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেট একটি সম্প্রসারণশীল বাজেট।

বাজেটে কালো টাকা প্রসঙ্গে ড. বারাকাত বলেন, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে সৃষ্ট মোট পুঞ্জিভূত কালোটাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে আমরা পুঞ্জিভূত মোট কালোটাকার মাত্র ২ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি, যেখান থেকে উদ্ধারকৃত আহরণ হবে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭০ কোটি টাকা।

অর্থপাচার প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে মোট পুঞ্জিভূত অর্থ পাচারের আনুমানিক পরিমাণ হবে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে আমরা পুঞ্জিভূত মোট অর্থ পাচারের ৫ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি। যেখান থেকে উদ্ধারকৃত আহরণ হবে ৫৯ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা।

অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটটি যেহেতু ক্রমবর্ধমান বৈষম্য-অসমতা নিরসন-উদ্দিষ্ট একটি জনগণতান্ত্রিক বাজেট। সেহেতু আমাদের বাজেটে শুধু ব্যয়-বরাদ্দ খাতসমূহেই নয়—এসব প্রতিফলিত হয়েছে সরকারের রাজস্ব আয় প্রাপ্তির উৎসসমূহেও। আর এ কারণেই রাজস্ব আয় সংগ্রহের যেসব উৎসে আমরা জোর দিয়েছি, তার মধ্যে অন্যতম হলো—আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর (৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা), সম্পদ কর (২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা), অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর (৭৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা), বিলাসী দ্রব্য/ পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক (১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা), মাদক শুল্ক (৩০ হাজার ২০০ কোটি টাকা), কালোটাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি (২ লাখ ৬৫ হাজার ৭০ কোটি টাকা), এবং অর্থ পাচার উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি (৫৯ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা)। উল্লিখিত ৭টি উৎস থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হবে ১২ লক্ষ ৮৭ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা, যা মোট রাজস্ব আয়ের ৭৯ শতাংশ। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ শুধু এ জন্যই নয় যে এই ৭ উৎসের আহরণ ক্রমর্ধমান বৈষম্য-অসমতা হ্রাস করবে, বিশেষ গুরুত্ববহ এ জন্যও যে উল্লিখিত উৎসসমূহ থেকে আহরিত অর্থ দিয়ে যে বিনিয়োগই করা হোক না কেন তা হবে বিনিয়োগে সুদমুক্ত বা সুদবিহীন উৎস।

অর্থনীতি সমিতি মনে করে, বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দা, কভিড-১৯ মহামারি-উদ্ভূত মহাবিপর্যয় আর এখন ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অনিবার্য মারাত্মক অভিঘাত এসব থেকে মুক্ত হয়ে আলোকিত মানুষ সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন ‘শোভন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ-উদ্দিষ্ট তাদের প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেট ২০২৩-২৪ একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দলিল। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের মৌল বিধানের ভিত্তিতে প্রণীত মৌলিক রূপান্তরমুখী এ দলিল বাস্তবায়নে প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও দৃঢ় অঙ্গীকার।

বিকল্প বাজেটে হাওর-বাঁওর-বিল-চরাঞ্চল-উপকূলের মানুষের দুর্দশা-বঞ্চনা নিরসন ও উন্নয়ন সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হাওর-বাঁওর-বিল-চর-উপকূল উন্নয়ন বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। এ আগামী ৫ বছরে মোট ২ লাখ কোটি টাকা অর্থাৎ বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব উল্লেখ করেন।

অর্থনীতিবিদ ড. বারাকাত কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার বিভাগ গঠনের উল্লেখ করেন। তিনি এ লক্ষে আগামী ৫ বছরের জন্য মোট ২ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দসহ আসন্ন অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করেন।

অর্থনীতি সমিতি জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব প্রদানের প্রস্তাব দেন। একই সাথে বৈদেশিক ঋণ নিরুৎসাহিত করার প্রস্তাব দেন।

বাজেট উপস্থাপনাকালে ভিডিও কনফারেন্স ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সদস্য ছাড়াও সংযুক্ত ছিলেন দেশের ৬৪টি জেলা, ১৩৫টি উপজেলা ও ৪৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশবিদ, উন্নয়ন ও সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষার্থী, কৃষক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণিপেশার প্রতিনিধি অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ আইনুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক হান্নানা বেগম, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সরদার, অধ্যাপক ড. মোঃ সাইদুর রহমান এবং কার্যনির্বাহক কমিটির সদস্য ড. জামালউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!