খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় আগুন
  দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫
  গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২

অভয়নগরে ধানকাটা ও মাড়াই মেশিন কিনে পথে বসেছেন কৃষক শরিফুল ইসলাম

অভয়নগর প্রতিনিধি

সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ধার-দেনা করে, চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে উপজেলার গুয়াখোলা গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম এসিআই কোম্পানির যশোরের চাঁচড়া শাখা থেকে সরকারি ভর্তুকির আওতায় একটি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার (ধানকাটা ও মাড়াই মেশিন) কেনেন।

২০২১সালে ৩১লাখ টাকা মূল্যের মেশিনটি ১৪লাখ টাকা সরকারি ভর্তুকি ছাড়ে ১৭লাখ টাকার চুক্তিতে ডাউন পেমেন্ট হিসেবে নগদ সাড়ে ৬ লাখ টাকা প্রদান করেন।

কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, সোস্যাল মিডিয়াসহ কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখে জাপানে তৈরীর পরিবর্তে চায়নায় তৈরী করা এই মেশিনটি কিনে ধানের বিলে নামনো হয় মেশিনটি। ২-৩ মাস চলার পর বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে থাকে মেশিনটির। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের এই মেশিন নষ্ট হলে খুচরা যন্ত্রাংশ কোম্পানিতে ছাড়া পাওয়া যায় না। তাছাড়া মিস্ত্রী মেলানোও দুষ্কর। মেশিন নষ্ট হলে কোম্পানির কিছু করার নেই বলে জানানো হয়। মেশিন কেনার কিস্তি আদায় বন্ধ থাকে না।

এক পর্যায়ে কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম শরীফ কৃষক শরিফুল ইসলামকে জানান, একটা মেশিনে আয় হবে না, নতুন আরেকটা মেশিন কেনেন। নতুন একটা কিনলে ২ লাখ টাকা ছাড় পাবেন। তারই কথা শুনে ২ লাখ টাকা ডাউনপেমেন্ট দিয়ে কোম্পানির ট্রেনিং সেন্টারে পড়ে থাকা প্রায় অকেজো আরেকটা মেশিনও কিনে আনেন গরীব কৃষক শরিফুল ইসলাম।

সংসারে স্বচ্ছলতা আনার জন্য দুটি মেশিন মাঠে নামানো হয়। কিন্তু আগেরটার চেয়ে নতুনটা আরও নষ্ট হতে থাকে। দুটি মেশিন অকেজো হয়ে পড়ায় কৃষক শরিফুলের সংসারে নেমে আসে অভাবের হাতছানি। ধারদেনা করে মেশিন কিনে বিপদে পড়ে যান কৃষক শরিফুল ইসলাম।

বিষয়গুলো লিখিতভাবে কোম্পানিকে জানালে তাদের কিছুই করার নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়। তাছাড় দুটি মেশিনের কিস্তি নিতে বাড়িতে হাজির হন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এক পর্যায়ে কান্না বিজড়িত কন্ঠে কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, তার সংসারে সুখ ছিল, এসিআই কোম্পানি থেকে ধানকাটা এই মেশিন কিনে পথে বসেছেন তিনি। তিনি কোম্পানিকে অভিযোগ করে বলেন, কেনার সময় কোম্পানি জাপান থেকে মেশিনটি সরাসরি বাংলাদেশে আসছে বলে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয় অথচ মেশিনটি চায়নায় তৈরী করা।

তিনি আরও জানান, সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দুটি মেশিন বাবদ মোট ১১লাখ ৭০হাজার টাকা কোম্পানিতে জমা দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে মেশিন দুটো অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মেরামত করার সামর্থ কৃষক শরিফুল ইসলামের নেই। এখন তিনি কি করবেন? কীভাবে দেনা শোধ করবে, কীভাবেই সংসার চালাবেন সেটা বুঝতে পারছেন না। তিনি ডালভাত খেয়ে সমাজে বেঁচে থাকতে কোম্পানিসহ সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে এসিআই কোম্পানির কর্মকর্তা (আরএসএম) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, কৃষি অফিসের নিয়মকানুন মেনেই চায়নায় তৈরী করা কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিন তাকে দেয়া হয়েছে। তার বিষয়টি আইন মাফিক দেখা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ছামদামী বলেন, কৃষক শরিফুল ইসলাম এসিআই কোম্পানির যশোরের চাঁচড়া শাখা থেকে একটি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার (ধানকাটা ও মাড়াই মেশিন) নিয়েছিলেন। তিনি আমাদের কাছে আসছিলেন। তার অভিযোগ নিয়ে। এ বিষয়ে এসিআই কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে আমরাও কথা বলেছি।

খুলনা গেজেট/ বিএমএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!