খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট

শরণখোলায় মার্কেট নির্মাণে পুকুর ইজারা দিল জেলা পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

শরণখোলায় সুপেয় পানির সংকট তীব্র। প্রতি বছর অন্তত চার থেকে পাঁচ মাস পানির জন্য সীমাহিন কষ্ট করতে হয় বাসিন্দাদের। কয়েক কিলোমিটার হেটেও পানি সংগ্রহ করতে হয় স্থানীয়দের। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের যে অল্প কিছু পুকুর মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রায়েন্দা বাজারে অবস্থিত পুকুরটি তার মধ্যে অন্যতম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মিষ্টি পানির জন্য সংরক্ষিত বাজারের একমাত্র পুকুরটিতে দোকান ঘর নির্মানের ইজারা বন্দোবস্ত দিয়েছে বাগেরহাট জেলা পরিষদ। ফলে একদিকে জনমনে ক্ষোভ অপরদিকে পানির কষ্ট বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, জেলা পরিষদ অনৈতিকভাবে শতবর্ষী এ পুকুরটির পূর্ব পাশে মার্কেট নির্মান করে সংকুচিত করে ফেলেছে। দক্ষিন পাশে আবার মার্কেট নির্মান করা হলে পুকুরটির অস্তিত্ব হারাবে। পুকুর রক্ষায় মানববন্ধনও করেছে স্থানীয়রা।

পানি সংকট নিরসনে শরণখোলায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা রাসেল আহমেদ বলেন, রায়েন্দা বাজার সংলগ্ন এলাকার ৮০ ভাগ মানুষ এই পুকুরটির উপর নির্ভরশীল। জরুরী ভিত্তিতে পুকুরটি এখন খনন করা প্রয়োজন। অথচ তা না করে মার্কেট নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়ার মত আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে পুকুরের একপাশে ৮ থেকে ১০টি দোকান ঘর নির্মাণ করায় পুকুরটি বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এবার যদি অপরপাশে আরো দোকান নির্মিত হয় তাহলে পুকুরের অস্তিত্বই থাকবে না। এই অঞ্চলে পানির কষ্ট কতটা তীব্র, উপরওয়ালারা যদি তা বুঝতো।

রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু হালদার বলেন, স্থানীয় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী এই পুকুরের পানি ব্যবহার করে। পুকুরের উপর মার্কেট বা ঘর নির্মান হলে এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি। ফলে পানির কষ্টে ভুগবে শিক্ষার্থীরা। একই রকম কথা বলেন, রায়েন্দা সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সাইদুর রহমান, শরণখোলা আইডিয়াল ইনষ্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোঃ উসমান গনিসহ সাধারণ শিক্ষকরাও।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুকুরটি সাধারন মানুষের জন্য সংস্কার করা প্রয়োজন। অথচ সংষ্কার না করে জেলা পরিষদ ঘর নির্মাণের ইজারা দিয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারি প্রকৌশলী এস এম মেহেদী হাসান বলেন, জেলা পরিষদের ওই পুকুরটি স্থানীয় জনসাধারনের জন্য গুরুত্বপুর্ণ হওয়ায় উত্তর পাশে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে গত অর্থবছরে একটি পিএসএফ নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া তাদের দপ্তর থেকে পুকুরটি খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিন্তু পূর্ব পাশে জেলা পরিষদের মার্কেট থাকায় তা সম্ভব হয়নি। যদি আরো একটি মার্কেট তৈরি হয় তাহলে পুকুরে পানিও থাকবে না, পিএসএফও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে পানি সংকট আরো বাড়বে উপকূলীয় এই এলাকায়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন শরণখোলার রায়েন্দা পুকুরের দক্ষিন পাশে আধা-পাকা ঘর নির্মানের জন্য সাত জনের নামে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত ইজারা বন্দোবস্ত দেয়া পত্রের একটি অনুলিপি নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট এসেছে। ওই পত্রে উল্লেখিত ইজারা বন্দোবস্ত নেওয়া সাত ব্যক্তি হচ্ছেন, অম্বরিশ রায়, শিরিন সুলতানা রুমি, মোঃ আসাদুজ্জামান খান, উজ্জল সাহা, মৌসুফা নুর মুমু, মোঃ ইমরান উদ্দিন শুভ, শিশির কুমার সাহা।

সূত্র বলছে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের কয়েকজন সরকারদলীয় রাজনীতিতে যুক্ত এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন। এদের মধ্যে অম্বরিশ রায় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তিনি চেয়ারম্যানের পিএ হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। কৌশলে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিয়ে বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করেছেন বলে জানায় সূত্রটি।

জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা বলেন, বিষয়টি গতকাল জেনেছি। যেহেতু পানির সাথে বৃহত্তর জনস্বার্থ জড়িত। আমি শীঘ্রই পুকুরটি পরিদর্শনে যাবো এবং জনস্বার্থে ইজারা বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!