নাম ‘রূপবান‘। তবে রূপকথার সেই অপরুপা নয়, এটি একটি আগাম জাতের শিম। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে চলতি মৌসুমে কৃষকরা ঝুঁকছেন দুটি আগাম জাতের শিম চাষে। একটির নাম ‘রূপবান‘ আর অন্যটি ‘হাবিল‘। স্থানীয় সবজি চাষীরা বারি-২ ইপসা আাগাম জাতের শিমকে ‘রূপবান’ আর বারি-৩ শিমের নাম দিয়েছেন ‘হাবিল‘। বেগুনি ফুলে ফুলে আর সবুজ লতা-পাতায় ভরে উঠেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। এর মাঝে মাঝে উকি দিচ্ছে বেগুনি রঙের শিমও। এ যেন চোঁখজোড়ানো দৃশ্য। ফুল আর শিমের মনোহর সৌন্দর্যের জন্যই এসব বাহারি নামকরণ।
দ্রুতর্বধন আর উচ্চফলনশীল হওয়ায় বাজারে ইতোমধ্যেই ‘রূপবান‘ আর হাবিল নামের এই দুটি শিম উঠতে শুরু করেছে। কৃষকরা দামও পাচ্ছেন ভালো। বাজারে বর্তমানে খুচরা ১০০-১২০ টাকা ও পাইকারি বাজারে ৭০-৮০ টাকা দরে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে। দ্রুতবর্ধন আর উচ্চফলনশীল হওয়ায় চলতি মৌসুমে এই দুই জাতের শিমের ফলনও এবার ভালো হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। ফলে করোনা দুঃসময়েও তাঁদের হাসি ফুটেছে। এখন ‘রূপবান‘ আর ‘হাবিল‘ শিমকে ঘিরেই স্বপ্ন বুঁনছেন সবজিচাষীরা মুখে ফুটেছে হাসি।
সরেজমিনে উপজেলার ভায়না, বাকচুয়া, তৈলটুপি, লক্ষিপুর, তাহেরহুদা, দৌলতপুর, গোপালনগরসহ বেশকিছু এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা চাষ করছেন ওই আগাম জাতের শিমের। মাঠজুড়ে সারিসারি বিস্তৃত লাল আর সবুজের সমারোহ। শিমের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক।
গোপালনগর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, তিনি একবিঘা জমিতে চাষ করেছেন ‘হাবিল‘ শিম। সার কিটনাশকসহ শিমের ক্ষেত তৈরিতে তাঁর ব্যয় হয়েছে ১৫-২০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ২০ হাজার টাকার সিম বিক্রি করেছেন। ক্ষেতে এখনও প্রচুর শিম রয়েছে। তাতে আরও ৬০-৮০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা শহরের দৈনিক বাজারের সবজি ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম জানান, শীত আসতে এখনও অনেক দেরি। তখন বাজারে প্রচুর শিম ওঠে। চাহিদার তুলনায় কৃষকরা দামও পান নগণ্য। মৌসুমে প্রতি কেজি শিম ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। আগাম এই দুটি জাতের শিম খুচরা বাজারে ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের পছন্দের হওয়ায় বিক্রিও হচ্ছে ভালো।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ভায়না, তাহেরহুদা, দৌলতপুর ও কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ইপসা বারি-২ ও বারি-৩ আগাম জাতের দুটি শিমের চাষ করছেন কৃষকরা। দ্রুতবর্ধমান আর অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা আগাম জাতের এই দুটি শিম চাষে ঝুঁকছেন।
বাকচুয়া গ্রামের কৃষক আব্দার মুন্সি জানান, তিনি উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রাজু আহম্মেদের পরামর্শে দেড় বিঘা জমিতে ‘রূপবান‘ নামের বেগুনি রঙের শিম চাষ করছেন। সেচ, কীটনাশক,বাঁশ, লোহারতার ও পরিচর্যা বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে তিনি দু‘দফাই বিক্রি করেছেন ১০ টাকার টাকার শিম। তিনি আরও জানান, আগাম জাতের এ শিম গাছ থেকে ৫-৬ মাস পর্যন্ত শিম পাওয়া যায়। এ সময়ের মধ্যে তিনি লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। বাজার ভালো হলে লাভ আরও বেশি হবে বলে তাঁর ধারণা।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রাজু আহম্মেদ জানান, তাঁর ব্লকে শতাধিক কৃষক এই ইপসা বারি-২ ‘রূপবান‘ শিমের আবাদ করছেন। এসব কৃষকদের সার, বীজসহ কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে আগাম এই সবজি চাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান জানান, আগাম ওই দুটি জাতের শিম চাষে কৃষকদের আগ্রহের কারনে তাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে তাদের কম খরচে অধিক লাভবান করতে কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর থেকে বিনামূল্যে সার, বীজ দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত কৃষিবিষয়ক নানা পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে এসব কৃষকদের। তাছাড়া ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে ওই দুটি শিমের প্রদর্শনি ব্লকও করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম