নবগঠিত মন্ত্রিসভায় পুরোনো ১৫ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়লেও একজন ছাড়া সরকারি বাসা ছাড়েননি অধিকাংশ মন্ত্রী। যিনি বাসা ছাড়ার ব্যাপারে সাড়া দিয়েছেন, সেই সবেধন নীলমণি সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বাকি ১৪ জন আগের সরকারি বাসাতেই থাকছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বাসা ছাড়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়ে এক মাসের মধ্যে বাসা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা।
জানা গেছে, এবার মন্ত্রিপরিষদে আছেন ২৫ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রী। উপদেষ্টা আছেন ছয়জন। মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আছেন ১৪ জন। উপদেষ্টা পদে নতুন মুখ আছেন একজন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টারা বাসা বরাদ্দের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন।
পাশাপাশি আগের মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রীও একটি বাড়ি তাঁর নামে বহাল রাখার আবেদন করেছেন। তবে বাস্তবতা হলো, এত সংখ্যক বাংলোবাড়ি সরকারের হাতে নেই।
সব মিলিয়ে বাংলোবাড়ি আছে মাত্র ৯টি। এর মধ্যে একটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত। আরেকটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে বরাদ্দ থাকে। বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ অতিথি এলে সেই বাংলোবাড়িতে তাদের রাখা হয়। ফলে বরাদ্দ দেওয়ার মতো বাংলোবাড়ি আছে মাত্র সাতটি। আর অ্যাপার্টমেন্ট আছে ৩০টি। এ অবস্থায় অনেকটা বিপাকে পড়েছে আবাসন পরিদপ্তর।
যারা বাসা ছাড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানাননি, তাদের মধ্যে রয়েছেন– সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর, সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন এবার দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। কয়েকজন মনোনয়ন পেলেও জয়ী হতে পারেননি।
সাবেক মন্ত্রীর দখলে দুই অ্যাপার্টমেন্ট
সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ ২০১৯ সালে মন্ত্রী হওয়ার পর বেইলি রোডের মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টের ১ নম্বর ভবনের ছয়তলার পশ্চিম পাশে ৫ হাজার বর্গফুটের একটি বাসা বরাদ্দ পান। তবে এর বাইরে মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টের ৩ নম্বর ভবনের পঞ্চম তলার পূর্ব পাশে ৫ হাজার বর্গফুটের আরেকটি বাসা বরাদ্দ নেন। এবার তিনি লালমনিরহাট-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। তিনিও দুটি বাসার কোনোটিই ছাড়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আগ্রহ দেখাননি।
এ ব্যাপারে কাজী ওয়াছিউদ্দিন বলেন, লিখিত আবেদনের বাইরে আরও সাত-আটজন ফোনে বাড়ি বরাদ্দের তাগিদ দিয়েছেন। বরাদ্দ দেওয়ার মতো বাংলোবাড়ি আছে মাত্র সাতটি। এ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বাড়িগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ছাড়া এক-দু’জন হয়তো মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলোবাড়ি পেতে পারেন। অন্যদের থাকার জন্য অন্য বাসা বা বেইলি রোডের মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে।
আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক শহিদুল ইসলাম ভূঞা বলেন, এরই মধ্যে ১৩ জনের কাছ থেকে বাসা বরাদ্দের আবেদন পাওয়া গেছে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বাসা ছাড়ার পর সেই বাসাগুলো মেরামত করে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ জন্য মাস তিনেক সময় লাগবে।
সূত্র :সমকাল