খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৮ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
  সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন মারা গেছেন
  নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত
  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

বেগুন চাষে স্কুল শিক্ষকের বাজিমাত

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গোনালী গ্রামের বাড়ি এক স্কুল শিক্ষক উন্নত জাতের বেগুন চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে মহামারি করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়েন দেশের হাজার হাজার শিক্ষক। ওই সময় ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের টিপনা শেখ আমজাদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বি.এম মিজানুর রহমান তার বাবা-মা-দুই ছেলে ও স্ত্রী-সহ ৬ জনের একান্নবর্তী সংসারে বড় খরচের কথা বিবেচনা করে ওই সময়টাকে কাজে লাগানোর কথা ভাবেন। এসময় নিজ উদ্যোগে বাড়ি থেকে একটু দূরে নিজেদের ৩৬ শতাংশ পরিত্যাক্ত জমিতে সবজি চাষের সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ওই জমিতে থাইল্যান্ডের উচ্চ ফলনশীল জাতের বেগুন ‘এরিয়ান’ চাষ শুরু করেন।

২০২০ সালে মার্চ মাসের শেষ দিকে ওই জমি তৈরি করে সেখানে ১২শ’ এরিয়ান জাতের বেগুন চারা রোপন করেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ জন শ্রমিক তার ক্ষেতে পরিচর্যা করতে থাকেন। মাত্র দুই মাসের শ্রমের পর ওই বেগুন গাছে ফলন আসতে শুরু করে। জুন মাসে প্রথম বেগুন বিক্রি শুরু হয়।

ফলন আসার আগ পর্যন্ত ওই জমিতে আধুনিক চাষি মিজানুর প্রায় ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় করেন। ফলন আসার কয়েকদিন পর থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ১২ মণ বেগুন বাজারে নিতে শুরু করেন। তখন বেগুনের কেজি ছিলো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। প্রায় ৫ মাস ধরে বিক্রি চলাকালে শিক্ষক মিজানুরের ৭৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়। তবে তার সর্বমোট বেগুন বিক্রি হয় ৩ লক্ষাধিক টাকা। তাছাড়া ওই বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে পুরাতন বেগুন গাছগুলো তুলে ফেলে সেখানেই ‘পুই শাক’ চাষ করেন। ২০ হাজার টাকা খরচ করে বাড়ন্ত পুই শাক মার্চ মাসে তুলে বিক্রি করে আরও আয় করেন ৬৭ হাজার টাকা।

লাভের মুখ দেখে চলতি বছরের মার্চ মাসে কৃষি অফিসের পরামর্শে নতুন করে মাটি-জৈব সার ফেলে ওই জমি তৈরি করেন শিক্ষক মিজানুর। একই সঙ্গে বেগুনের চারা ও পুইশাক রোপন করেন। মে মাসের মধ্যে সব পুইশাক বিক্রি করে তিনি ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন। আর ১ জুন থেকেই নতুন বেগুন তোলা ও বিক্রি শুরু করে গত ১২ জুলাই পর্যন্ত ৪৭ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।

এ প্রসঙ্গে সময়ের বিবর্তনে স্কুল শিক্ষক থেকে আধুনিক চাষি বনে যাওয়া বি.এম মিজানুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে করোনার প্রভাবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়লে আমি সংসারের কথা ভেবে কিছু একটা করার চিন্তা করলাম। তখন উপজেলা কৃষি অফিসের সঙ্গে কথা বলে আমার জমিতে হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষ শুরু করি। কোনো কাজ সাধনার সঙ্গে করলে ফল পাওয়া যায়। আশা করছি যদি ভালো দাম পাই, সেক্ষেত্রে আরও ৪-৫ মাস বেগুন বিক্রি করে ৩ লক্ষাধিক টাকা আয় করবো।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, করোনাকালে বেকার সময়টা কাজে লাগিয়ে একজন শিক্ষক আধুনিক বেগুন চাষ করে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা এ ধরণের উদ্যোগকে সর্বাত্মক সহায়তা করছি। শিক্ষক মিজানুরের এই বাড়তি আয় দেখে অনেকেই উৎসাহিত হবেন।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!