খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৮ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
  সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন মারা গেছেন
  নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত
  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

‘বিনা পয়সায় এত সুন্দর ঘর আর জমির মালিক হতি পারে আমরা খুব খুশী’

একরামুল হোসেন লিপু, দিঘলিয়া

‘নামাজ মানিলাম, মসজিদে দুই বস্তা সিমেন্ট মানিলাম, একটা ঘর পাবার জন্যি। প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রীর ছবি মুছি। আগে কোন সরকার আমাদের ঘর দিল না। হাসিনা আমাদের ঘর দিল। নামাজ পড়ে তার জন্য দোয়া করি। তার বাপের জন্য দোয়া করি। ঈদে হাসিনা আমাদের জন্য উপহার পাঠাইছে। ঈদের দিন ইউএনও সাহেব আমাদের দিয়ে গেছে। তা পাইয়ে আমরা খুব খুশি হইছি। ইউএনও সাহেব ফেরেশতাতুল্য মানুষ। যাচাই-বাছাই করে গরীব মানষেরে সে ঘর দিছে। বিনা পয়সায় এত সুন্দর ঘর আর জমির মালিক হতি পারে আমরা খুব খুশী হইছি’

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে গেলেন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ঈদগাহ সংলগ্ন ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত ভৈরব নগর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৩নং ঘরের সুবিধাভোগী কুলসুম বেগম (৪৭)। কুলসুম বেগমের স্বামী জিয়া শেখ। পেশায় একজন ভ্যান চালক। দুই ছেলে ইমন শেখ, নয়ন শেখ, মেয়ে শিল্পী, ছেলের বউসহ ৬ জনের পরিবার। স্বামী জিয়া শেখ ভ্যান চালিয়ে এবং ছেলে দুইটা দিন মজুরের কাজ করে কোন মতে সংসার চালান। সহায় সম্বলহীন পরিবার। জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। দেয়াড়া মোল্যা বাড়ি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর এবং জমি দিচ্ছেন এ সংবাদ শুনে কুলসুম বেগম এবং তার স্বামী দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহাবুবুল আলমের অফিসে গেলেন। ইউএনও তাদের নাম ঠিকানা, ভোটার আইডি কার্ডের নং ঘরের জন্য আবেদন করতে বললেন। যাচাই বাছাই করে তাদের নিজস্ব কোন ঘর এবং জমি না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিনামূল্যে ঘর এবং জমির জন্য ১ম পর্যায়ে তাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়। গত ২৩ জানুয়ারি ইউএনও তাদের হাতে ঘরের চাবি এবং জমির দলিল তুলে দেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার বিনামূল্যে ঘর এবং জমি পেয়ে কুলসুম বেগম এবং তার পরিবার ভীষণ খুশী।

ঈদের দিন বিকালে ভৈরব নগর আশ্রয়ণ প্রকল্পে এ প্রতিবেদকের কথা হয় কুলসুম বেগমের সঙ্গে। নিজের ঘরে ঈদ করতে পেরে তিনি এবং তার পরিবার খুবই উৎফুল্ল। তবে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে ২টা ঘরে থাকতে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে এ জন্য তিনি ইউএনও সাহেবের কাছে আরেকটা ঘরের দাবি জানিয়েছে। ঘরতো পেয়েছেন। মসজিদে ২ বস্তা সিমেন্ট কি দিয়েছেন? কুলসুম বেগমের কাছে জানতে চাইলে উত্তরে তিনি জানালেন, ‘রাস্তায় ৪০ দিনের কর্মসূচীর কাজ করি। এবার বেতন পালি মসজিদে ২ বস্তা সিমেন্ট দিবানি’

 

এদিকে ভৈরব নগর প্রকল্পের ১৭নং ঘরে একমাত্র ছেলে আশিক খান এবং ছেলের বউ নিয়ে বসবাস করছেন প্রতিবন্ধী রশিদা বেগম (৫২)। তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘বহুত সাধনার পরে ইউএনও সাহেবের কাছে সরাসরি যায়ে এই ঘর পাইছি। আমার স্বামী তৈয়ব খান মারা যায় ২২ বছর আগে। সেই থেকে ছেলেডারে নিয়ে পরের বাড়ি কাজ করিছি। বাসা ভাড়া করে থাকিছি। মরার সময় আমার স্বামী আমার জন্যি কিছু রাহে যায়নি। ঘরটা পায়ে আমি কি খুশী হইছি তা তুমারে কতি পারবো না।’ রশিদা বেগম তিন মাস পর পর ২ হাজার ৩০০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পান, নিজেও কিছু কাজ করেন এবং ছেলে ভ্যান চালিয়ে যা কিছু আয় রোজগার করেন, মাঝেমধ্যে ইএনও সাহেব সরকারি কিছু ত্রাণ দেন এসব দিয়েই কোনমতে তার সংসার চলে।

একই প্রকল্পের সুবিধাভোগী নূরজাহান বেগম। বয়স ৫৫। স্বামী রুহুল শেখ দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে আয়ার কাজ করেছেন ১০ বছর।অফিস, বাসায় কাজ করে দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে পরের বাসায় ভাড়া থেকে কোনমতে দিন যাপন করতেন। নিজস্ব জায়গা ঘর কিছুই ছিলো না। ‘ইউএনও স্যারের কাছে য্যায়ে সব খুলে বলি। পরে স্যার আমাকে এই ঘরের ব্যবস্থা করে দিছেন। আল্লাহ একজন ফেরেশতা আমাদের জন্যি পাঠিয়েছেন। তার জন্যি আমরা বিনা পয়সায় ঘর আরো জমি পালাম। তার জন্যি তার ছেলে মায়ির জন্য দোয়া করি। দোয়া করি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার জন্যিও’।

নূরজাহান বেগমের বৃদ্ধা মা আনোয়ারা বেগম (৮০) এবং ১০ বছর বয়সী নাতী হাবিবাকে নিয়ে তার এখন স্থায়ী ঠিকানা ভৈরব নগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৮নং ঘরে। ‘মাঝেমধ্যে সরকারি কিছু ত্রাণ পায় এবং ছেলের সাহায্য দিয়ে কোনমতে টিকে আছি। এখন ঘরভাড়া লাগছে না। নিজের ঘরে আছি। নিজের ঘরে থেকে ঈদ করলাম। এখন খুশী লাগে’। এ প্রতিবেদকের কাছে এভাবে তার অনুভূতি ব্যক্ত করলেন।

 

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!