খুলনার সাংবাদিকদের গুরু বলে খ্যাত খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন আহমেদ বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার (৩ জুলাই) রাত তিনটায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিকের বড় জামে মসজিদে জোহরবাদ জানাজা শেষে বনানীতে তাঁকে দাফন করা হবে।
শাহাবুদ্দিন আহমদ ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার মানিকগঞ্জে তার পৈত্রিক ভিটে। বাবার চাকরির সুবাধে খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে লেখাপড়া করেন। সর্বশেষ শিক্ষা জীবন দৌলতপুর সরকারী বিএল কলেজ। তিনি ১৯৬২ সালে শরীফ কমিশন রিপোর্ট বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। শিক্ষা জীবন শেষে তৎকালীন রূপসা থানার বেলফুলিয়া ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফাতিমা উচ্চ বিদ্যালয় এবং চালনা পোর্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাকতা করেন। ১৯৬৫ সালে খুলনার স্থানীয় ওয়েভ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত হন। ৪৪ বছরের পেশাগত জীবনে সাপ্তাহিক হলিডে, বাংলাদেশ টাইমস, দি ডেইলী টেলিগ্রাফ, ডেইলী ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস ও দি ডেইলী ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। ইনডিপেনডেন্ট-এ পত্রিকায় ১৩ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বার্ধক্যজনিত কারণে ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকতা থেকে অবসর নেন। ১৯৭০-৭১ সালে করাচীর প্রভাবশালী দৈনিক ডন পত্রিকার খুলনাস্থ প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ১৯৮০, ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালে অবিভক্ত খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি. ১৯৮৫-৮৬, ১৯৯২-৯৩, ১৯৯৫-৯৬, ১৯৯৯-২০০০ সালে খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাকশালে যোগাদান প্রশ্নে স্থানীয় সাংবাদিকদের সিদ্ধান্তের সাথে একমত হতে পারেনি। তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। একমাত্র তিনিই বাকশালে যোগদান করেননি। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের আপাদকালীন সাহায্যের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের ভিত্তিতে নিখুঁত সংবাদ পরিবেশনে তিনি খুলনার সাংবাদিক অঙ্গনে আজও উদাহরণ। বানান ও বাক্য গঠনে তিনি যত্নবান ছিলেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান এবং বিতর্কের উর্ধ্বে থাকায় ২০০৮ সালে সাদা মনের মানুষ হিসেবে জেলা প্রশাসন থেকে স্বীকৃতি প্রাপ্ত হন। চিরকুমার এই সাংবাদিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঢাকার বসুন্ধরায় এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় অবসর জীবন যাপন করেন।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম জাহিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লাসহ কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ।
এই গুণী সাংবাদিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন খুলনা গেজেট সম্পাদক মোঃ মাহমুদ আহসান ও নির্বাহী সম্পাদক কাজী মোতাহার রহমান। অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক গাজী আলাউদ্দিন আহমদ।
এদিকে খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন আহমেদ এর ইন্তেকালে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপি। শোক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সাহবুদ্দিন আহমেদ এর মৃত্যুতে খুলনাবাসি একজন প্রথিতযশা সাংবাদিককে হারিয়েছে।
বিবৃতিদাতারা হলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনি, সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, মীর কায়সেদ আলী, শেখ মোশাররফ হোসেন, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, জলিল খান কালাম, সিরাজুল ইসলাম, এড. ফজলে হালিম লিটন, এড. বজলুর রহমান, এড. এস আর ফারুক, স ম আব্দুর রহমান, শেখ ইকবাল হোসেন, শেখ জাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, মো. মাহবুব কায়সার, নজরুল ইসলাম বাবু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, এস এম আরিফুর রহমান মিঠু ও ইকবাল হোসেন খোকন প্রমুখ।
অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ্যাড. এসএম শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ গাজী আবদুল হক, গাজী তাফছির আহম্মেদ, মনিরুজ্জামান মন্টু, শেখ আব্দুর রশিদ, মোল্লা খায়রুল ইসলাম, এ্যাড. শরিফুল ইসলাম জোয়াদ্দার খোকন, এ্যাড. মাসুম আল রশিদ, শেখ আবু হোসেন বাবু, জিএম কামরুজামান টুকু, কেএম আশরাফুল আলম নান্নু, এ্যাড. এ কে এম শহিদুল আলম, এ্যাড. তছলিমা খাতুন ছন্দা ও শেখ শামছুল আলম পিন্টু প্রমুখ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন প্রবীণ সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বিবৃতিতে তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রামেও তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
অনুরূপভাবে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস ও জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান।
খুলনা গেজেট/ টি আই